শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ইউএনও তাহমিলুর রহমানকে বাহুবল মডেল প্রেস ক্লাব-এর বিদায় সংবর্ধনা বাতিল হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শনিবারের ছুটি মাছ ধরতে গিয়ে জেলের পায়ুপথ দিয়ে পেটের ভিতর কুঁচিয়া, তারপর… বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু সিলেটে টেস্টে ৩৮২ রানে হারলো বাংলাদেশ পেটে অসহ্য যন্ত্রণা, অস্ত্রোপচার করতেই বেরিয়ে এলো ১২ ইঞ্চির জ্যান্ত ইল মাছ! বাহুবল সদর কেন্দ্র স্থানান্তরের প্রস্তাব; জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাহুবলে সর্বজনিন পেনশন স্কীম অবহিতকরণ সভায় অনুষ্ঠিত পেঁয়াজ রপ্তানিতে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা ভারতের গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে চীন-রাশিয়ার ভেটো

বাহুবলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে অবসরে হাবিব মাষ্টার

সিদ্দিকুর রহমান মাসুম: আপাদমস্তক একজন শিক্ষানুরাগী হবিবুর রহমান। হাবিব মাষ্টার নামেই এলাকায় রয়েছে উনার জনপ্রিয়তা। টানা ৪০ বছর শিক্ষকতা করে সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন।

ছাত্রজীবন থেকে একজন সৎ, ধার্মিক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন। তিনি মানুষকে ইসলাম ধর্মের দাওয়াত ও ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনে মুসলমানদের সব সময় উদ্বুদ্ধ করেন। পবিত্র হজ্জও পালন করেছেন তিনি।

তিনি শিক্ষাকার্যত্রুমের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যত্রুমের সাথেও জড়িত রয়েছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে কলেজে উন্নীত হয়েছে। ছিলেন সালিশ বিচারকও, সমাজ সংষ্কারে রয়েছে বিশেষ অবদান। এলাকার যেকোন সমস্যার ডাক পড়ে হাবিব মাষ্টারের।

গত ৩০ জুন ২০২০ সালে অবসরে যান তিনি। তিনি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জয়পুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।

আমাদের ধারণা মতে যিনি পড়ান তিনি শিক্ষক আর শিক্ষকতা শুধু একটি চাকুরী। যারা শিক্ষকতাকে একটি চাকুরী হিসেবে দেখেন সেখানেই বিপদ। তাঁদের কাছে ক্লাসরুমে গতানুগতিক পাঠদান করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। সত্যি কথা বলতে কি এ রকম শিক্ষকের সংখ্যাই আমাদের সমাজে অনেক বেশি।

তাই এটা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, একজন শিক্ষক হওয়া আমাদের দেশে খুব সহজ হলেও একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া অত্যন্ত কঠিন। বাংলায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে “গুরু মিলে বুরে বুরে আদর্শ গুরু মিলে কপালের জোরে”। আমাদের সেই রকমই কপালের জোরে এলাকাবাসী একজন আদর্শ শিক্ষক পেয়েছিল আর তিনিই হলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় হাবিব মাষ্টার।

হাবিব মাষ্টার সাহেবকে এলাকাবাসী পেয়েছে একজন আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে। এ ধরনের শিক্ষক পাওয়া সত্যিই কপালের ব্যাপার।

একজন আদর্শ শিক্ষককে এক বাক্যে সংজ্ঞায়িত করা খুবই কঠিন, তবে সাধারণভাবে আদর্শ শিক্ষক হলো উনিই যাঁকে তাঁর শিক্ষার্থীরা চিরকালের জন্য স্বরণ রাখে। আদর্শ শিক্ষকের তাঁর ছাত্র-ছাত্রীর জীবনের উপর প্রভাব হলো অতি দীর্ঘ। ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে মহিমা তৈরি ও একজন আদর্শ মানুষ হতে তাদের অনুপ্রাণিত করেন।

আমাদের হাবিব মাষ্টার সাহেব ঐ রকমই একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। একজন সাধারণ শিক্ষক একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে চিন্তা করেন কিন্তু হাবিব মাষ্টার সাহেব ছিলেন এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি ছিলেন সর্বদা “ Out of the box thinker”.।

ক্লাসরুমে আদর্শ শিক্ষকগণ অন্যদের তুলনায় আলাদা থাকেন। শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ, পাঠ্যবইই নয় কিন্তু তার সাথে বাস্তবতার সম্মিলন ঘটিয়ে প্রকৃত জ্ঞান প্রদান করাই হচ্ছে আদর্শ শিক্ষকের কাজ। সাধারণত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় টেকনিক্যাল রাইটনেসের প্রতি গুরুত্ব প্রদান হয়- যেমন যে সকল বিষয় কেউ না কেউ সত্য বলে গেছেন যেমন দুই+দুই=চার। দুই এ দুই চার এটি টেকনিক্যালি রাইট কিন্তু একজন আদর্শ শিক্ষক অজানাকে জানার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে।

শুধু টেকনিক্যাল রাইটনেস নয় প্র্যাকটিক্যাল রাইটনেসের প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করেন। হাবিব মাষ্টার সাহেব ঐ রকম একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন যিনি শিক্ষার্থীদের টেকনিক্যাল ও প্র্যাকটিক্যাল উভয় ন্যায্যতার প্রতি নজর দিতেন।

ইতিবাচক আচরণ শিক্ষকের অন্যতম বৈশিষ্ট, শিক্ষার্থীদের প্রনোদনার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করা। শিক্ষক শুধু নিজেই ইতিবাচক হবেন না তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের ইতিবাচক আচরণ শিখাবেন।

আমাদের হাবিব মাষ্টার সাহেবকে আমি প্রথমে অত্যন্ত একজন রাগী মানুষ হিসেবে মনে করলেও আসলে ছিলেন খুবই কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তিনি একজন ইতিবাচক শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষার্থীদের অন্যতম আশ্রয়স্থল ছিলেন এই প্রিয় শিক্ষক।

তিনি ১৯৮১ সালে মিরপুর ফয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় এ যোগদান এর মাধ্যমে উনার কর্মজীবনের যাত্রা শুরু করেন।সেখানে প্রায় এক বছর কর্মরত ছিলেন।

মাধ্যমিক স্কুল ছেড়ে,১৯৮৩ সালে আবার বাহুবল উপজেলার কালিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগাদান করেন।তারপরে বাহুবল ও দওপাড়া প্রাইমারি স্কুলেও চাকরি করেন।প্রাইমারি স্কুলে সব মিলিয়ে এক বছর শিক্ষকতা করেন।

পরবর্তীতে প্রাইমারী শিক্ষকতা ছেড়ে ১৯৮৪ সালে আবারও পুটিজুরী এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক(ইংরেজি) হিসেবে যোগদান করেন।ঐ স্কুলে উনি প্রায় ১১ বছর কর্মরত ছিলেন।

১৯৯৫ সালে পুটিজুরী এসসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ এ যোগদান করেন।১৯৯৬ সালেই উনি সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে মনোনীত হন।

সর্বশেষ মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবেই দীর্ঘ ৪০ বছরের শিক্ষকতা পেশার সমাপ্তি টেনেছেন।

তিনি অসুস্থ, দেশ-বিদেশে তার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তিনি সবার কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেন। তিনি যেন সুস্থভাবে বাকি জীবন আল্লাহর রাস্তায় থেকে ইমান ও আমলের সঙ্গে বিদায় নিতে চান।

লেখক: সাংবাদিক
সাধারন সম্পাদক, হবিগঞ্জ জেলা অনলাইন প্রেসক্লাব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com