মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন

পৌরসভা নির্বাচন: পঞ্চম ধাপেও আ’লীগের জয়-জয়কার

হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দৃশ্য। ছবি: কাজী মাহমুদুল হক সুজন, তরফ নিউজ।

তরফ নিউজ ডেস্ক: পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত ২৯ পৌরসভা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়-জয়কার। আগের চারটি ধাপেও পৌরসভায় মেয়র পদে জয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও বিদ্রোহী প্রার্থীসহ অন্যদের দখলে গেছে হাতে গোনা কয়েকটি পৌরসভা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

রবিবার দিনভর পঞ্চমধাপে পৌরসভা নির্বাচনের ভোট শেষে সন্ধ্যা থেকে ফলাফল আসা শুরু হয়। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ২১টি পৌরসভার প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, ১৯টিতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। আর বাকি দুটির একটিতে জয় পেয়েছেন বিএনপি প্রার্থী ও অপরটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী।

বিজয়ী আ.লীগ প্রার্থীরা

কালীগঞ্জ (গাজীপুর): এ পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এস এম রবীন হোসেন। তিনি পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকের লুৎফুর রহমান পেয়েছেন ১০ হাজার ২২৫টি ভোট।

মাদারীপুর পৌরসভা: আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খালিদ হোসেন ইয়াদ ২২ হাজার ৫৯ ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর): রায়পুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. গিয়াসউদ্দিন রুবেল ভাট বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ৮ হাজার ৪০২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী এবিএম জিলানী পেয়েছেন এক হাজার ৪৪১ ভোট।

দুর্গাপুর (রাজশাহী): এ পৌরসভায় মেয়র পদে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান মেয়র তোফাজ্জল হোসেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি ৮ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়েছেন।

এছাড়া, রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী। তিনি ৭৭ হাজার ৬৮ ভোট পেয়েছেন।

কেশবপুর (যশোর): এ পৌরসভায় মেয়র পদে আবার নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মোড়ল। তিনি ১১ হাজার ৮৮৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সামাদ বিশ্বাস পেয়েছেন ২ হাজার ৩১৩ ভোট।

জয়পুরহাট: এ পৌরসভার মেয়রপদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২৪ হাজার ৪৯০ ভোট পেয়ে ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী অধ্যক্ষ শামছুল হক পেয়েছেন চারহাজার ১৬১ ভোট।

হবিগঞ্জ: এ পৌরসভায় মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম। তিনি ১৩ হাজার ৪৪৩ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমান মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান (নারিকেল গাছ প্রতীক) ১০ হাজার ৭৯০ ভোট পেয়েছেন।

সিংগাইর (মানিকগঞ্জ): এ পৌরসভা নির্বাচনে ১২ হাজার ৬০৩ ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগের আবু নাঈম মো. বাসার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী খোরশেদ আলম ভুঁইয়া জয় পেয়েছেন হাজার এক হাজার ৭১৯ ভোট। বিএনপির (ধানের শীষ) নাজমুল হক সবুজ মিয়া পেয়েছেন ৪৪০ ভোট।

জামালপুরের তিন পৌরসভায় আ.লীগ প্রার্থীদের জয়

এর মধ্যে জামালপুর পৌরসভায় ছানোয়ার হোসেন ছানু (৪৫ হাজার ৫৯৮ ভোট), মাদারগঞ্জ পৌরসভায় মির্জা গোলাম কিবরিয়া কবির ও ইসলামপুর পৌরসভায় আব্দুল কাদের শেখ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন (১৪ হাজার ১৯১ ভোট)।

ঝিনাইদহে দুই পৌরসভায় নৌকার জয়

এরমধ্যে কালীগঞ্জ পৌরসভায় ফের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আশরাফুল আলম আশরাফ। তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৩২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মাহাবুবার রহমান পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৪ ভোট।

মহেশপুর পৌরসভায় দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুর রশিদ খান। তিনি ১৩ হাজার ৫৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী ১ হাজার ৫৫ ভোট পেয়েছেন।

এছাড়া জেলার শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকার প্রার্থী শিকদার শেফালী বেগম। তিনি ভোট পেয়েছেন ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮১৬। ধানের শীষ প্রতীকের হুমায়ুন বাবর ফিরোজ ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৩৩।

সৈয়দপুর (নীলফামারী): এ পৌরসভার ৬৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন রাফিকা জাহান আকতার বেবী। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ২৮ হাজার ২৭৮ ভোট।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা: এ পৌরসভা নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিসেস নায়ার কবির। তিনি পেয়েছেন ২৮ হাজার ৫৫৪ ভোট।

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইফতেখার হোসেন বেনু ৩৭ হাজার ৯৪৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী মো. শাহিন ৯ হাজার ৬৪৯ ভোট পেয়েছেন।

বারৈয়ারহাট (চট্টগ্রাম): আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম খোকন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৭৮টি।।

নাচোল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ): আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রশীদ খান বিজয়ী হয়েছেন।

ভোলা পৌরসভা: আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

বিএনপির জয়ী প্রার্থীরা

বগুড়া পৌরসভা: এ পৌরসভায় নৌকা প্রতীকের চেয়ে তিন গুণের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি নেতা রেজাউল করিম বাদশা। বাদশা পেয়েছেন ৮২ হাজার ২১৭ ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু ওবায়দুল হাসান ববি পেয়েছেন ২০ হাজার ৮৯ ভোট।

বিদ্রোহী/স্বতন্ত্র

ডামুড্যা (শরীয়তপুর): এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল করিম রাজা ছৈয়াল বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৫ হাজার ৮৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কামাল উদ্দিন আহমদ নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ৩৭৩ ভোট।

পঞ্চমাধাপে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১০০ জন। তাদের মধ্যে ১৪টি পৌরসভায় ২২ জন স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী।

নির্বাচন কমিশন গত ১৯ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ৩১ পৌরসভার নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে। পরে অন্য ধাপ থেকে পঞ্চমে যুক্ত হয় সৈয়দপুর পৌরসভা। এরই মধ্যে উচ্চ আদালতে যশোর পৌরসভার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। আর ভোটগ্রহণের আগ মুহূর্তে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌর নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে ইসি।

এছাড়া চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলরসহ সব পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পান। রাউজান পৌরসভায় মেয়র হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জমির উদ্দিন পারভেজ। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আওলাদ হোসেন খানও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে আজ ২৯ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com