বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

বানিয়াচংয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম

রায়হান ইউ সুমন বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) থেকে : বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এই খাত থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান করাই হলো সরকারের মূল উদ্দেশ্য। তবে এই বিভাগে যদি নিয়মিত তদারকি না থাকে, প্রাত্যহিক কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে ও যদি কোনো নিয়মানুবর্তিতা না থাকে তাহলে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কিভাবে সেবা প্রদান করবে এই বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মচারিগণ ?

মাঠ পর্যায়ে সঠিক তদারকি না থাকায় জন্মনিয়ন্ত্রণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। সেই সাথে গর্ভবতী মায়েরাও প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে অনেকটা দায়সারা ভাবেই চলছে এ বিভাগের কার্যক্রম। চাহিদা থাকা সত্তে¡ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ও সেবা পাচ্ছেন না আগ্রহী দম্পতীরা। মাঠ পর্যায়ে এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র জনগোষ্ঠী। মাঠপর্যায়ে এই বিভাগের সেবা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর এ কারণে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জনসংখ্যা।

বানিয়াচংয়ে এই বিভাগের কর্মকান্ড পুরোটাই নির্ভর করছে ফ্যামিলি প্ল্যানিং ইন্সপেক্টর (এফপিআই) ও  ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটির (এফডবিøওভি) তথা সংশ্লিষ্টদের এর মেজাজ-মর্জির উপর। তাদের ইচ্ছে হলে যথাসময়ে প্রতিষ্ঠানের প্রাত্যহিক কর্মকান্ড শুরু হয়,তাদের ইচ্ছে হলে বন্ধ থাকে সেবার সব কর্মকান্ড। অনুসন্ধানে জানা গেছে-মাঠে না গিয়ে নিজ বাড়িতে বসে কার্যক্রম চালাচ্ছেন পরিবার পরিকল্পান পরিদর্শক ও পরিবার কল্যাণ সহকারিরা। স্যাটেলাইট ক্লিনিক গুলোতে এফডবিøওভি এবং এফডবিøউএ’র উপস্থিতি থাকলেও সার্বক্ষনিকই অনুপস্থিত থাকেন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকরা (এফপিআই)।

বানিয়াচং উপজেলা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি। এরমধ্যে ২৪/৭ সেন্টার রয়েছে কয়েকটি কেন্দ্রে। এসবে শুধু নামে মাত্র ২৪/৭ থাকলেও মুলত বাস্তবে ৪ঘন্টা সেবা প্রদান করা হয়নি। এসব গুলোতে এফডবিøওভি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা কেউ সেখানে থাকেননি। এসব কেন্দ্রের কর্মচারিগণ তাদের ইচ্ছেমতো আসা-যাওয়া করেন। আবার কোন কোন কেন্দ্রে তাদের কর্মীরাই যাননি। এসব কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্তরা না গিয়ে যে যার মতো করে কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন আসেন। আবার কেউ কেউ হবিগঞ্জ থেকে মাসে একবার এসে শুধু চক্কর দিয়েই দায়িত্ব পালন করেন। আবার রিপোর্ট ও পেশ করেন জেলা শহরে বসে বসে। ফলে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষগুলো প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যার কারণে সরকার তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছুতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বানিয়াচং ৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আশুতোষ তিনি হবিগঞ্জের বাসা থেকে ওই ইউনিয়নে মাঝে-মধ্যে আসেন বলে জানা গেছে। ৭নং বড়ইউড়ি ইউনিয়নের পরিদর্শক সৈয়দ আরিফুল হক মাসে একদিন বা দুইদিন তার কর্ম এলাকায় আসেন। উনিও জেলা শহরের রাজনগরে বাসা-বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন।

৮নং খাগাউড়া ইউনিয়নের পরিদর্শক আনোয়ার সাদাতের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তিনি জেলা শহরে বসে বসে রিপোর্ট পেশ করেন এমনকি মাসে একদিন বা দুইদিন কেন্দ্রে আসেন। থাকেন শহরে। ১১নং ইউনিয়নের পরিদর্শক ত্রিশংকু রঞ্জন দাস তার গ্রাম হিয়ালা ছাড়া পার্শ্ববর্তী অন্য গ্রামের না যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ১২নং ইউনিয়নের পরিদর্শক খায়রুজ্জামান সবসময় জেলা শহরে থাকেন। মাসিক রিপোর্ট পর্যন্ত তিনি সেখানে বসে বসে করেন। ১৩নং মন্দরি ইউনিয়নের পরিদর্শক শিহাব আহমেদের বিরুদ্ধে তার কর্ম এলাকাতে না যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। উনি পাশাপাশি অন্য একটি ব্যবসার সাথেও জড়িত আছেন। উপর মহলকে হাত করে নাকি তারা প্রতিমাসের বেতন থেকে কিছু অংশ তাদেরকে প্রদান করেন। এভাবে মাসের পর মাস তাদের কাজে ফাঁকি দিলেও কিন্তু বেতন-ভাতা যথাসময়ে ঠিকই উত্তোলন করছেন। বর্তমানে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।

এসব বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র দেবের সাথে কথা হলে তিনি জানান,কয়েকজনের বিরুদ্ধে কর্ম এলাকায় না যাওয়ার বিষয়টি আমরাও অবগত আছি। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাবুল চন্দ্র দেবের কাছে তার অফিসের হাজিরা কপি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি হাজিরা খাতা নেই বলে জানান। পাশাপাশি তার মাসিক ট্যুর প্রোগ্রামের এর কপি চাইলে কর্তৃপক্ষের নিষেধ রয়েছে বলে তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বাবুল চন্দ্র দেব মাসিক ট্যুরের ফিল্ড ভিজিটে না গিয়েই মাসের পর মাস (টিএডিএ) ভাতা নিচ্ছেন। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন-সব ইউনিয়নে একমাসের মধ্যে যাওয়া হয়না। তারপরও চেষ্টা করি যাওয়ার। ওই কর্মকর্তার মাঠ পর্যায়ে প্রতিমাসে ১২টা ট্যুর রয়েছে। কিন্তু এসব ট্যুরে যাওয়ার প্রমাণাদি দেখাতে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের পিয়ন আবুল কালাম চাকুরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরেও তিনি এখনো এমসিএইচ-এফপি’ মেডিকেল অফিসার ডা:সুবিমল চন্দের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অফিসের বিভিন্ন কাজকর্ম করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে  পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক (হবিগঞ্জ) ডা: নাসিমা খানম ইভার মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com