বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন

রাতেই সরব সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক : এই রিপোর্ট যখন লেখা হচ্ছে তখন রাত ১টা। নগরীর জিন্দাবাজার সড়কে রিকশা-গাড়িগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বিকট হরণ বাজাচ্ছে একেকটা। কিন্তু সামনে এগুতে পারছে না কেউ। আটকে আছে জ্যামে। আর সড়কের পাশ দিয়ে মানুষ ছুটছে মিছিলের মতো। একজনের সাথে আরেকজনের ধাক্কাধাক্কি লেগে যাচ্ছে প্রায়ই। আর এদের প্রায় সকলের হাতেই শপিং ব্যাগ।

এই দৃশ্য কেবল বৃহস্পতিবার রাতের। বরং গত কয়েক রাতেরই চিত্র এমন। দিনেও এই একই দৃশ্য। শহরজুড়ে যানজট আর যানজট। শপিং ব্যাগ হাতে ছুটছে মানুষ।

ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে নগরবাসীর ঈদের কেনাকাটা যেন ততই জমে উঠেছে। একাকার হয়ে যাচ্ছে রাত দিন। বড় বড় শপিংমল আর ফ্যাশন হাউসগুলোতে হুড়মুড় করে ঢুকছেন আর বেরুচ্ছেন ক্রেতারা। ওসব জায়গায় গেলে এখন আর হাঁটতে হয় না। দাঁড়ালেই হয়, মানুষ ধাক্কা দিয়ে আপনাআপনিই এগিয়ে নিয়ে যায়।

তবে অধিকাংশ মার্কেটে ইফতারের পর থেকেই জমে বিকিকিনি। তীব্র গরমে দিনে নাভিশ্বাস ওঠছে নগরবাসীর। তাই ইফতার খেয়ে আয়েশে শপিংয়ে বের হচ্ছেন ক্রেতারা। মধ্যরাত ছাপিয়ে শেষরাত অবধি চলে কেনাকাটা।

নগরীর কয়েকটি মার্কেট ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নানা ধরনের পোশাক থাকলেও এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে দেশী ও ভারতীয় সূতি পোশাকের চাহিদা বেশি। পাশাপাশি অন্যান্য পোশাকের চাহিদাও রয়েছে। পরিবারের সকলের জন্য নতুন কাপড় কিনতে বিপণী বিতানগুলিতে ঘুরে ঘুরে পোশাক কিনছেন সব শ্রেণি পেশার মানুষ। শুধু বড়রাই নয় পছন্দ মত পোশাক কিনতে মা-বাবা সাথে দোকানে ভিড় করছে শিশুরাও।

নগরীর ব্লু ওয়াটার, সিটি সেন্টার, আল হামরা শপিং মলের মতো বড় বড় বিপণিবিতানগুলোর পাশাপাশি নগরীর নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, লামাবাজারেও দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। মার্কেটে ইফতারের পর পরই অনেকে এসেছেন পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে। অনেকে আবার বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা সারছেন। পরিবারের সদস্যরা ঈদে কাকে কী দেবেন, তার তালিকা তৈরি করে নিয়ে এসেছেন অনেকে। পছন্দের জিনিসটি খুঁজে পেতে এক দোকান থেকে ছুটছেন অন্য দোকানে। আবার অনেকে পোশাক দেখে, নাড়াচাড়া করে সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে যাচ্ছেন অন্য দোকানে। কেউ আবার ঝটপট কিনে ব্যাগ ভরে হাঁটা দিচ্ছেন বাড়ির পথে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, এবারের ঈদে পোষাকে কিছুটা নতুনত্ব এসেছে। পোশাকের পাশাপাশি নিত্যনতুন জুতা স্যান্ডেলের প্রতি চাহিদা রয়েছে প্রচুর। বাজারে ছেলেদের নরমাল, নবাব, প্রিন্ট, বুটিক ও হাতে কাজ করাসহ বাহারি ডিজাইনের নানা বৈচিত্র্যের পাঞ্জাবীও বেশ বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবীর পাশাপাশি তরুণদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ফিটিং হাফ শার্ট, ফুল শার্ট, শর্ট পাঞ্জাবী, জিন্স প্যান্ট, চায়না গ্যাবাডিন, ফরমাল প্যান্ট, টি-শার্ট, ফরমাল শার্ট, শেরওয়ানি।

অন্যদিকে, মেয়েদের জন্য দামি ঈদের পোশাকের ছড়াছড়ি দেখা গেছে বড় বড় বিপণিবিতানগুলোতে। মেয়েদের জন্য রয়েছে টিস্যু ফ্রক, লেহেঙ্গা, লং গাউন, ফ্লোরটাস। তবে এবার তীব্র গরম পড়ায় দেশী ও ভারতীয় সুতি কাপড়ের দিকে বেশি ছুটছেন সাধারণ মেয়েরা।

ভারতীয় পোশাকের মধ্যে সুতি ও বুটিক্স পোশাক রয়েছে চাহিদার শীর্ষে। এছাড়াও কামিজসহ বিভিন্ন পোশাক থাকলেও দামের দিক থেকে কিছুটা সাশ্রয় হওয়ায় মহিলাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে জামদানি ও টাঙ্গাইল শাড়ি।

রাশেদা আক্তার নামে এক ক্রেতা বলেন, বাচ্চাদের জন্য ড্রেস কিনলাম। এখন ঘুরে ঘুরে পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য ঈদের কাপড় কিনবো।

পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অনেকে বেল্ট, জুতা-স্যান্ডেল, জুয়েলারি এবং কসমেটিকসও কিনছেন। এছাড়া সুতি ও সিল্কের পাঞ্জাবী, থ্রি-পিছ, শিশুদের রেডিমেড জামা কাপড় বিক্রি হচ্ছে।

বৃষ্টি রশিদ নামের এক তরুণী ক্রেতা বলেন, নিজের পছন্দসই সিঙ্গেল ড্রেস কিনলাম। এখন এর সাথে মিলিয়ে ওড়না, পায়জামা, অর্নামেন্টস ও জুতো কিনবো।

এদিকে বাজারে পোশাকের দাম গত বছরের থেকে এবছর অনেকটাই বেশি বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, অত্যাধুনিক ডিজাইনের পোশাক আনায় দাম একটু বেশি।

রুম্মান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে এবার পাঞ্জাবির কালেকশন অনেক বেশি। এর থেকে পছন্দ করে সুতির একটি পাঞ্জাবি কিনবো। যদিও এবারে পাঞ্জাবির দাম তুলনামূলক গত বছরের থেকে একটু বেশি তারপরও ঈদ বলে কথা কিনতেতো তো হবেই। তিনি আরও বলেন, আমি ইতোমধ্যে পেন্ট , শার্ট কিনে নিয়েছি। আমার ঈদের বাজার মোটামুটি শেষ।

এদিকে পিছিয়ে নেই ফুটপাতের বেচাকেনা। ফুটপাতের দোকানিদের হাঁকডাকের মধ্যে নিজেদের ঈদের পোশাক কিনে নিচ্ছেন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এর পরেও তাদের মুখে হাসির কমতি নেই। এদিক-সেদিক ঘুরে সাধ্যের মধ্যে নিজেদের পছন্দের পোশাক কিনছেন।

শুকরিয়া মার্কেটের রেডিমেড কাপড়ের দোকান তামিম ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী হেলাল বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারের ঈদ বাজারে ভারতীয় ছবি-সিরিয়ালের নায়িকাদের পোশাকের সাথে মিল রেখে নামকরণ করা কাপড় বাজারে না থাকলেও ভারতীয় পোশাকের চাহিদা রয়েছে। ভারতীয় পোশাকের মধ্যে সূতির কাপড়ের চাহিদাটা বেশি রয়েছে। মূলত গরমের কারণেই ক্রেতারা এ সূতির কাপড়ের দিকে ঝুঁকছেন বেশি।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় সূতির কাপড়ের পাশাপাশি দেশি কাপড়ের প্রতিও ক্রেতাদের নজর রয়েছে। অনেক ক্রেতা একটি ভারতীয় সূতির কাপড়ের দামে দেশী ২-৩ টি কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

বর্তমান বাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে বেচা-বিক্রি ততোই বাড়ছে। দিনের বেলা ব্যবসা ততোটা ভালো না হলেও ইফতারের পর থেকে একটু একটু করে ব্যবসা বাড়িতে শুরু করে। রাত নয়টার পর ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে যায়।

সিলেটের নয়াসড়কে অবস্থিত ফ্যাশন হাউজ নবরূপার ম্যানেজার মো. জসিম মিয়া বলেন, ভারতীয় ড্রেসের প্রতি বা ভারতীয় শাড়ির প্রতি ক্রেতাদের একটা চাহিদা থাকে। তাই আমরা প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও ক্রেতার চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে সেরকম কালেকশন তুলেছি। ক্রেতারা ভারতীয় ড্রেসের পাশাপাশি দেশীয় ড্রেসও কিনছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com