বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন

সাদা পাথরের দেশ ভোলাগঞ্জ থেকে ফিরে

শফিকুল ইসলাম রুম্মন : ভ্রমণ পিপাসু সকলেই জানেন সিলেটকে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান এর পূণ্যভূমি বলা হয় । প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই সিলেট অঞ্চল, এখানে অনেক প্রাকৃতিক দর্শনীয় জায়গা আছে যেমন হযরত শাহজালাল রঃ এবং হযরত শাহ পরানের মাজার, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, মাধবকুণ্ড, জাফলং, মালনীছড়া চা বাগান, লাক্কাতুরা চা বাগান, লালাখাল সহ আরো অনেক আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট আছে । ভ্রমণের জন্য প্রসিদ্ধ এসকল স্থানের পাশাপাশি সিলেটে বহু স্থান রয়েছে যা দৃষ্টি নন্দন এবং পর্যটক প্রিয়তা অর্জন করছে। তেমনি একটি স্থান ভোলাগঞ্জ যা সিলেট শহর থেকে ৩৩ কিঃমিঃ উত্তরে অবস্থিত।

গ্রামবাংলার মানুষের প্রিয় ঋতু শীত ও বসন্ত । শুধু গ্রামবাংলার মানুষের প্রিয় ঋতুই নয়, উৎসবেরও ঋতু। বাড়িতে বাড়িতে নতুন গুড়ের পিঠা নানা নামের, নানান ধাঁচের। নতুন গুড়ের মুড়কি, নাড়ু, পায়েস। ঘন দুধে ভেজানো ঢেঁকিছাঁটা চালের চিতই পিঠা। ময়রার দোকানে নতুন গুড়ের বাতাসা, কদমা, খোরমা। আর শীত এলেই শুরু হয় গ্রাম বা শহরের ব্যাস্ত মানুষের পিকনিক বা বনভোজনের প্রস্তুতি ৷ শত বাধাঁ উপেক্ষা করেও ভ্রমন পিপাসুরা চলেন বনভোজনে ৷ আর ঠিক শীত শেষে বসন্তের শেষ লগ্নে দেখা যায় নীল ফতুয়া আর টপস পরা শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের ৯৫ ব্যাচের এক ঝাঁক তরুণ তরুণীদের ৷ মনে হয় যেন আকাশের নীল রং এসে পড়েছে সাদা পাথরের দেশ ভোলাগঞ্জে ৷

উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় একটি স্থান যার নাম হচ্ছে সাদা পাথরের দেশ ভোলাগঞ্জ। এই ভোলাগঞ্জ কে সাদা পাথরের দেশ নামে অনেকেই জানেন । সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জের সরাসরি কোন যানবাহন সার্ভিসের ব্যবস্থা নাই । সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলোমিটার । পর্যটকরা যারা এখানে আসেন তারা মূলত সিলেট থেকে টুকের বাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহি বাস অথবা ফোরস্ট্রোক যোগে যাতায়াত করেন ।সাদা পাথরের দেশ ভোলাগঞ্জের রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা, কিন্তু এর রূপ দেখলে ভুলে যাবেন পথের সব কষ্ট। ভোলাগঞ্জের ধলাই নদী তো রূপের রাজ্য। পরিবার নিয়ে যদি কেউ ভ্রমণ করে তাহলে প্রাইভেট গাড়ি যদি না থাকে তাহলে অনেক কাঠ খড় পোহাতে হবে । সিলেট শহর থেকে প্রাইভেট যানবাহন নিয়ে গেলে আপনার দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে । সিলেটে অবস্থান করে কেউ যদি সকালের নাস্তা করে ভোলাগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় তাহলে দুপুরের লাঞ্চ আবার সিলেটে ফিরে করতে পারবেন । আশা করা যায় এই সময়ের মধ্যেই আপনি সাদা পাথরের দেশ ভোলাগঞ্জ এর সবকিছু মোটামুটি দেখতে পারবেন । সাধারনত এপ্রিলের শেষের দিক থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় যাওয়া যায় এবং এটাই উপযুক্ত সময় । তবে শীত ও বসন্তের ঊষা লগ্নেও ভ্রমন পিপাসুদের ভীড় থাকে উপচে পড়া ৷

এ রাস্তা দিয়েই ভারতের আসাম প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ে এক সময় লোকজন চলাফেরা করত । এখানে রাত্রি যাপনের জন্য ভাল ব্যবস্থা নাই, জেলা পরিষদের একটি রেস্ট হাউজ আছে থাকতে হলে অবশ্যই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি নিতে হবে আগে থেকে । সবচেয়ে ভালো হচ্ছে আপনি ভোলাগঞ্জ দর্শন শেষ করে সিলেটে এসে অবস্থান নিতে পারেন এবং একই দিনে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান আপনি ঘুরে বেড়াতে পারেন।

ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর সাথে প্রতিবছর বর্ষাকালে নেমে আসে প্রচুর পাথর। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ। এই পাথর দিয়ে পঞ্চাশ বছর চালানো যাবে- এই হিসাব ধরে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে প্রকল্প। বৃটিশ রোপওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত সোয়া ১১ মাইল দীর্ঘ রোপওয়ের জন্য নির্মাণ করা হয় ১২০টি টাওয়ার এক্সক্যাভেশন প্যান্ট । মধ্যখানে চারটি সাব স্টেশন। দু’প্রান্তে ডিজেল চালিত দুটি ইলেকটৃক পাওয়ার হাউস, ভোলাগঞ্জে রেলওয়ে কলোনী , স্কুল,মসজিদ ও রেস্ট হাউস নির্মাণও প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছিল। এক্সক্যাভেশন প্যান্ট সাহায্যে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাথর উত্তোলন করা হলেও বর্তমানে এ পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।

সংশি­ষ্টরা জানান, পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব, পাথরের অপর্যাপ্ততা ও বিকল ইঞ্জিনের কারণে দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ধরে এক্সক্যাভেশন মেশিন বন্ধ রয়েছে। আগে উত্তোলিত পাথর ভাঙ্গা, ধোয়া ও টুকরোর আকার অনুসারে বালু,স্টোন চিপস ও ট্রাক ব্যালাস্ট ইত্যাদি শ্রেণীতে ভাগ করা হতো। শ্রেণী অনুসারে সেগুলো পৃথক পৃথকভাবে বের হয়ে রোপওয়েতে ঝুলানো চারকোনা বিশিষ্ট ষ্টীলের বাকেটে জমা হতো। প্রতিটি বাকেটের ধারণ ক্ষমতা ২৩৭ কেজি(প্রায় ১২০ফুট)। পাথর ভর্তি বাকেট পাঠানো হতো ছাতকে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ঠিকাদাররা স্থানীয়ভাবে বোল্ডার পাথর ক্রয়ের পর তা ভেঙ্গে বিভিন্ন সাইজে বিভক্ত করে। তারপর তা বাকেটে পুরে ছাতকে প্রেরণ করা হয়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের কাছে ধলাই নদী মিলিত হয়েছে-পিয়াইন নদীর সাথে। রোপওয়ের আয়তন প্রায় একশ’একর। আর এ কারণেই সাদা পাথরের দেশ পর্যটকদের কাছে এত আকর্ষণীয়।

সাদা পাথরের দেশ ভোলাগঞ্জে আছে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন। সীমান্তের জিরো লাইনে এ কাস্টমের অবস্থান। এখানে গিয়ে পর্যটকরা বেশিরভাগ চুনাপাথর আমদানির দৃশ্য দেখতে পাবেন। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা প্রধানত চুনাপাথর আমদানি করে থাকেন এই সীমান্ত দিয়ে। চুনাপাথর নিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে এই সীমান্ত দিয়ে। মূলত এ স্টেশন দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চলে। চুনাপাথর আমদানির দৃশ্য অবলোকনের বিষয়টিও পর্যটকদের রুমাঞ্চিত করে ।

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের ৯৫ ব্যাচের আসমা, সাবিনা, রাজিব, সনাত, শহিদ ও রাকিব বলেন, আসলে দীর্ঘ ২৫ বছর পর আমরা এক হয়েছি এবং সেই পুরোনো দিনের কথা স্বরণ করে সবাই এসেছি হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোকে স্মৃতির এ্যালবামে স্বরণীয় করে রাখতে ৷

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com