বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাহুবল হাসপাতালের নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রথম সভা বাহুবলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বাছাইয়ে দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ বাহুবল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল শিশুদের বিবাদের জেরে আজমিরীগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৩৫ দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর কেএনএফের প্রধান সমন্বয়ক বান্দরবানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার ফেনীতে ট্রেন-ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ৬ ফিলিস্তিনি শিশু দিবস: গাজায় প্রতি ঘণ্টায় মরছে ৪ শিশু বাহুবলে বাংলা নববর্ষ ও ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা বাহুবল মডেল প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

নবীগঞ্জে চেয়ারম্যান-মেম্বারের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ

উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ): হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে ঘর দেয়ার নামে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে আউশকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন ও ইউপি সদস্য দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় তাদের কথামতো উৎকোচের সম্পূর্ণ টাকা দিতে না পারার সুবিধাভোগীকে অফিসে ডেকে এনে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নবীগঞ্জ থানার ওসির বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ব্যক্তি। স্থানীয় ভূমিহীনদের অভিযোগ চেয়ারম্যান-মেম্বারের চাহিদা মতো উৎকোচ দিতে না পারায় তাদেরকে সরকারের এই প্রকেল্পের আওতায় আনা হয়নি। প্রশাসন বলছে অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে।

সূত্রে প্রকাশ, ‘গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প’ সরকারের দারিদ্র বিমোচনে অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি খাস জমি প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে সুষম বণ্টন করা হয়।

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পারকুল গ্রামের অসহায় মহিবুর রহমান ২ মাস পূর্বে পারকুল গ্রামে গুচ্ছ প্রকল্পের ১টি সরকারী ঘরের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন ও মেম্বার দুলাল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করেন। তখন ইউপি চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন ও মেম্বার দুলাল মিয়া ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন।

চেয়ারম্যান-মেম্বারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে একপর্যায়ে প্রথম অবস্থায় ৩০ হাজার টাকা দিতে পারবেন এবং ঘর বুঝে পাওয়ার পর বাকী ২০ হাজার টাকা দিবেন বলে জানান মুহিবুর রহমান। প্রায় ১ সপ্তাহ আগে ঘর দখল বুঝে পাওয়ার পর বাকী ২০ হাজার টাকা দেয়ার দেয়ার জন্য চাপ দেন মেম্বার দুলাল মিয়া। কিন্তু হতদরিদ্র মুহিবুর রহমান জানায় সে এখন টাকা দিতে পারবে না। পরে তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে মুহিবুরকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেন চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন।

মুহিবুর রহমানের অভিযোগ, তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বার। এমন অভিযোগ এনে গত ১৯ জুলাই নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নবীগঞ্জ থানার ওসির বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ব্যক্তি।

গতকাল সরেজমিনে পারকুল গ্রামে গেলে স্থানীয় ভূমিহীন লোকজনও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেয়ার নামে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ তুলেন চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন ও মেম্বার দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে।

ওই ইউনিয়নের খুর্শেদা বেগম বলেন- স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে অসহায় হয়ে ভূমিহীন অবস্থায় মানুষের বাড়িতে থাকেন তিনি। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর পাওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে ইউনিয়ন অফিসে যোগাযোগ করেন। পরে তিনি চেয়ারম্যানের কাছে ১১ হাজার টাকা দেন। পরে আরো ৫ হাজার টাকা দাবী করেন চেয়ারম্যান। টাকা দিতে না পারায় তাকে ঘর দেয়া হয়নি বলে এমনটাই জানান হতদরিদ্র ভুমিহীন খুর্শেদা বেগম।

একই গ্রামের ভূমিহীন মুক্তাদির মিয়া বলেন- এখানে যারা ২০ হাজার ৩০ হাজার দিতে পারছে তারাই ঘর পাইছে। সে ইউপি মেম্বার দুলাল মিয়ার মাধ্যমে ঘরের জন্য ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যান হারুনের সাথে দেখা করেন মুক্তাদির। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বার মিলে ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন মুক্তাদিরের কাছে। তাদের চাহিদা মতো ৫০ হাজার টাকা দিতে না পারায় তাকে ঘর দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন মুক্তাদির।

স্থানীয়দের অভিযোগ- চেয়ারম্যান ও মেম্বারের চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর দেয়া হয়নি। এমনকি নিজ এলাকার ভুমিহীনদের স্থান না দিয়ে অন্য জেলার লোকজনকেও এখানে গৃহায়নের আওতায় আনা হয়েছে। দ্রুত অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রকৃত ভূমিহীনদের এ প্রকল্পের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দুলাল মিয়া বলেন- “আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি, টাকা নিয়ে কাউকে ঘরও দেইনি। এটা ইউএনও সাহেবের প্রকল্প। ইউএনও সাহেব, পিআইও সাহেব তারা ঘর দিছে আমি কিছু জানিনা।”

এদিকে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুনের মন্তব্য জানতে তার অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তিনি কল দিয়ে তার অফিসে গিয়ে চা খাওয়ার দাওয়াত দেন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুমাইয়া মমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com