রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

“বাবার প্রতি ছোট্ট শিশুর ভালবাসা”

প্রতীকী ছবি।

শাহ মোহাম্মদ দুলাল আহমেদ :

বাবা মা’র আকাশচুম্বী মায়া আর ভালবাসার একমাত্র তিশা। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হলেও বাবা মা কখনো বুঝতে দেয়নি অভাব অনটন। ছোট পরিবারে মা বাবার প্রথম কন্যা সন্তান তিশা। মা-বাবা তিশার দুই বছরের এক ভাই নিয়ে সুখেই চলছে পরিবার। বাবা পেশায় একজন শ্রমিক, পাশাপাশি সংবাদকর্মী হিসেবে পরিচিত। তিশা তাদের বাড়ির পাশের একটি মহিলা মাদ্রাসায় পড়ছে। কোন ক্লাসে নয়, তার বাবার নির্দেশনায় ওই মাদ্রাসায় আসা যাওয়া করে। তিশা একা তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। বিশেষ করে তার বাবা মাদ্রাসায় একা আসা যাওয়া করতে মানা করেন। যে রাস্তা দিয়ে তিশা মাদ্রাসায় যেতে হয় ওই রাস্তাটা অসংখ্য যানবাহন যাতায়াত করে। সেই ব্যস্ততম রাস্তা দিয়ে বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় আসা যাওয়া করতে হয়।

তিশার বাবা খুব ব্যস্ত মানুষ। একাই সামলাতে হয় পুরো পরিবার। নিত্য আয়ই হচ্ছে তিশার বাবার পরিবার খাওয়া দাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। কিন্ত তিশা একা রাস্তায় চলাফেরা করলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমন চিন্তা মাথায় নিয়ে তার বাবা শাহ আলম নিজেই প্রতিদিন মাদ্রাসায় আসা যাওয়া করেন। প্রতিদিন তিশা মাদ্রাসার সময় হলেই অপেক্ষায় থাকে বাবা কখন আসবেন। কবে নিয়ে যাবেন মাদ্রাসায়। প্রায় আড়াই মাস বাড়িতে আছে তিশা। মাঝে মাঝে তিশা তার বাবার কাছে এসে বলে, আব্বু মাদ্রাসা খুলে না কেন? কোন দিন খুলবে? তিশার বাবা উত্তরে বলে থাকে করোনাভাইরাসের জন্য সরকার বন্ধ করছে । আম্মু– হয় তো ঈদের পর পর খুলবে। মাদ্রাসা খুলবে শুনে তিশা অনেক আনন্দ পেল। সকাল হলেই মাদ্রাসায় যাবে।

তিশা আনন্দে মাতোয়ারা। দিন গড়িয়ে রাতের পর সকাল আসতেই তিশা মাদ্রাসায় যাবে বাবার নিকট বায়না ধরলো। আব্বু আমাকে মাদ্রাসায় নিয়ে যাও। এ কথা বলার সাথে সাথেই তিশার বাবা বারণ করে বলে উঠলেন মাগো তুমি অসুস্থ। সুস্থ হলেই প্রতিদিন মাদ্রাসায় নিয়ে যাব। তিশা চর্মরোগে আক্রান্ত। শরীরের কোন একটা অংশে হঠাৎ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তিশা অবুঝ তো চুলকিয়ে আক্রান্ত স্থানকে রক্তাক্ত করে ফেলছে । তিশার এমন চিত্র এর আগে কখনো দেখা হয়নি। আক্রান্ত স্থানের অবস্থা খারাপ হলে বাবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্থানীয় এক হোমিও ফার্মেসীতে নিয়ে গেলেন তিশার আম্মু। ডাক্তার তিশার জন্যে নিলেন মলম। আক্রান্ত স্থানে দিনে তিনবার সমানতালে ব্যবহার করতে হবে।

রাত গভীর, তিশা তার বাবার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ বাবার চোখে পড়ল, চর্মরোগে আক্রান্ত স্থান দিয়ে অঝোর ধারায় রক্ত বের হচ্ছে। তিশার পিঠের নিচে রক্ত পরে লাল লালে হয়ে আছে। কেঁদে কেঁদে ঘুম থেকে উঠলো তিশা। জোরেশোরে কান্না করছে ছোট্ট শিশু তিশা। চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাই মলম ওই স্থানে লাগিয়ে দিলেন তার বাবা। মলম যন্ত্রণাদায়ক, লাগালোর পরে চিৎকার শুরু করছে তিশা। অতিরিক্ত অসহ্যকর জলতে থাকে। মা হাত পাকা দিয়ে বাতাস দিচ্ছেন। গভীর রাত। এক সময় মা ঘুমিয়ে গেছেন। কান্না করছে তিশা। বাবা তো পাশেই ঘুমে। হুট করে ঘুম থেকে উঠে হাত পাকা হাতে নিলেন। হাত পাকার বাতাসে কিছুটা স্বস্তি পায় তিশা। বাতাস দিতেই আছেন তার পিতা। কখনো ডান হাত, কখনো বাম হাত দিয়ে বাতাস দিচ্ছেন তিশার আব্বু। কিন্ত দুঃখের বিষয় তিশার বাবার ডান হাত ভাঙ্গা থাকায় বেশিক্ষণ বাতাস দিতে পারেন নি।

জন্মদাতা পিতা ভাঙ্গা হাত দ্বারা মেয়েকে বাতাস দিতেই যাচ্ছেন। মেয়ে তিশা সজাগ হয়ে আছে। বাবা এক সময় তিশা কে বলে উঠলেন আম্মু আর পারছিনা, আমি হাতে ব্যাথা পাচ্ছি। মেয়ে তিশা বলে উঠল, আব্বু এখানে তোমার হাত ভাঙ্গা না কি। হ্যা মা। বাবা এ কথা বলার পরে তার দু হাত বাবার হাত ভাঙ্গা জায়গায় বুলিয়ে দিয়ে বলে যাচ্ছে, আব্বু আর বাতাস দিও না, ঘুমিয়ে পর। আম্মু বাতাস দিবা। এ কথা বলে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল, ব্যাথা (দুক) পেয়েছ আব্বু, আমার আর বাতাস (পাইল) লাগবে না।

তিশার বাবা মেয়ের সহানুভূতি দেখে মেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া কামনা করে বলেন, হে আল্লাহ আমার এ অবুঝ মেয়েকে কিভাবে এত এত বুঝ দিলেন? আমার হাতে ব্যাথা পাচ্ছি বলে নিজের কষ্ট ভোগ করতে বাধ্য হয়ে গেল। আমার প্রতি আদরের মেয়ের এত ভালবাসা কিভাবে জন্ম নিলো? হয়তো আল্লাহ তুমি আমার মেয়ের প্রতি সদয় আছ। যার জন্যে আজও আমি মেয়ের ভালবাসার সিক্ত। যাকে সত্যিকার অর্থে বলা হয় “বাবার প্রতি ছোট্ট শিশুর অফুরন্ত ভালবাসা”।

লেখক: সংবাদকর্মী

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com