শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ইউএনও তাহমিলুর রহমানকে বাহুবল মডেল প্রেস ক্লাব-এর বিদায় সংবর্ধনা বাতিল হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শনিবারের ছুটি মাছ ধরতে গিয়ে জেলের পায়ুপথ দিয়ে পেটের ভিতর কুঁচিয়া, তারপর… বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু সিলেটে টেস্টে ৩৮২ রানে হারলো বাংলাদেশ পেটে অসহ্য যন্ত্রণা, অস্ত্রোপচার করতেই বেরিয়ে এলো ১২ ইঞ্চির জ্যান্ত ইল মাছ! বাহুবল সদর কেন্দ্র স্থানান্তরের প্রস্তাব; জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাহুবলে সর্বজনিন পেনশন স্কীম অবহিতকরণ সভায় অনুষ্ঠিত পেঁয়াজ রপ্তানিতে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা ভারতের গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে চীন-রাশিয়ার ভেটো

দেশে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ

নিজস্ব প্রতিনিধি : একটা সময় ছিল যখন চায়ের ক্রেতা ছিল উচ্চবিত্ত। খুব কম মধ্যবিত্তরা চা পান করত। বিভিন্ন উৎসব কিংবা বাসায় অতিথি এলে আপ্যায়নে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে চায়ের আয়োজন থাকত। সেটাও খুব বেশি দিন আগে নয়, আশির দশকের কথা। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে এখন সব শ্রেণি-পেশার মানুষই চা পান করে। এখন এই শিল্পের বাজার ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। উৎপাদনের প্রায় পুরোটাই ভোগ হয় দেশে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ও চা বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, ১৯৮০ সালে চা উৎপাদন ছিল তিন কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার কেজি। আর সর্বশেষ ২০১৯ সালে উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। অর্থাৎ চার দশকে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। ২০১৯ সালে এই উৎপাদন দেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন।

বিবিএসের এই উৎপাদন তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ সালে দেশে চা উৎপাদন ছিল আট কোটি ১৮ লাখ কেজি। ২০১৭-১৮ সালে ছিল সাত কোটি আট লাখ ১১ হাজার কেজি। এর আগের তিন বছরে (২০১৩-২০১৫) গড় উৎপাদন ছিল ছয় কোটি ৫৮ লাখ কেজি। ২০১৬-১৭ সালে চা উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ৩৩ হাজার একর জমিতে। পরের বছর তা দাঁড়ায় এক লাখ ৬৫ হাজার একর। ২০১৮-১৯ সালে দাঁড়ায় এক লাখ ৩৩ হাজার একরে।

লন্ডনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি’ প্রকাশিত ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নবম। তাদের হিসাবে বিশ্বের মোট চায়ের ২ শতাংশই উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। একটানা কয়েক বছর ধরেই দশম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। গত শতাব্দীর শেষে চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১তম, ১৯৮৯ সালে ছিল ১২তম। সংস্থাটির হিসাবে চা উৎপাদনে এখন শীর্ষে রয়েছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত। উৎপাদনে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশের নিচে আছে জাপান, উগান্ডা, নেপাল, ইরান, মিয়ানমারের মতো দেশগুলো।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চায়ের একরপ্রতি উৎপাদনের কমবেশি হয় মূলত মাটির গুণাগুণ, আবহাওয়া এবং বাগান পরিচর্যার ওপর। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে চায়ের উৎপাদন বেশি হয়। ফলে চায়ের বাজার কিছুটা কমবেশি হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চায়ের ভোগও বেড়েছে। আশির দশকে দেশে যে চা উৎপাদন হতো তার ৮০ শতাংশই রপ্তানি হয়ে যেত। বর্তমানে যা উৎপাদন হয় তার ৯৫ থেকে ৯৬ শতাংশই দেশের বাজারের জন্য লাগে।

তবে এখন রপ্তানি যেমন হচ্ছে, তেমন আমদানিও হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্নজন বিভিন্ন কারণে আমদানি করে। কেউ উন্নত মানের চা এনে দেশি চায়ের সঙ্গে বাজারজাত করে। আবার কেউ দাম কম হওয়ায় আমদানি করে। তবে এটিও হবে না যদি আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়। এ খাতের মূল সমস্যা হলো, প্রতি হেক্টরে উৎপাদন বাড়ানো। এখন বাগানের চারাগুলো ৪০ বছরেরও পুরনো। এগুলো তুলে আবার নতুন করে উচ্চফলনশীল চারা লাগাতে হবে। এগুলো থেকে ফলন আসতে ১২-১৩ বছর সময় লাগবে। এই সময়টাতে শ্রমিক খরচসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। এ জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা দিতে হবে সরকারকে। এ জন্য একটি ফান্ড তৈরি করা দরকার।’

টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্য মতে, প্রতি সপ্তাহের সোমবার দেশের নিলামকেন্দ্রগুলোতে চা নিলাম হয়। তার আগে শ্রমিক, মিল ও ব্রোকারের হাত ঘুরে আসে নিলামকেন্দ্রে। নিলামে প্রতি কেজি চা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। নিলামের দর হিসাব করেই চা-শিল্পের বাজারের আকার বোঝা যায়। তার হিসাবে বর্তমানে প্রতিবছর ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি চা বিক্রি হয়। তার ওপর বাজারজাতকরণ, পরিবহনসহ সব মিলিয়ে চা-শিল্পের বাজারের আকার হবে ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

জানা যায়, দেশে বর্তমানে দুই ধরনের চা উৎপাদন হয়। ব্ল্যাক টি ও গ্রিন টি। এগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটে ভরে বিভিন্ন কম্পানি বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামে বিক্রি করে। তবে গ্রিন টির বেশির ভাগই আসে আমদানি হয়ে। দেশে উৎপাদন হয় খুব সামান্য।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ২০১০ সাল থেকে চা আমদানি শুরু হয়। শঙ্কা ছিল চা আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে। ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ এক কোটি ১৪ লাখ কেজি চা আমদানি হয়। তবে এখন চাহিদার কাছাকাছি উৎপাদন হওয়ায় আমদানিও কমেছে। ২০১৮ সালে চা বোর্ড ৬৫ লাখ কেজি চা আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের অনুমতি দিয়েছে। গত বছরের আমদানির তথ্য না দিতে পারলেও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন ও দাম ভালো থাকায় আমদানিও অনেক কমেছে।

টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাহ মঈন উদ্দীন হাসান বলেন, ‘চা আমদানি হয় মূলত দুটি কারণে। একটি হলো উন্নত মান, অন্যটি হলো কম দাম। দেশের উন্নত চা খুব বেশি উৎপাদন না হওয়ায় কিছু আমদানি করতে হয়। আর মাঝে মাঝে দেশের নিলামকেন্দ্রগুলোতে দাম বেড়ে যায়। তখন অন্য দেশ থেকে কম দামে আমদানি করা হয়।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com