বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন

বিশ্ব বাবা দিবস : শতবর্ষী হোক পৃথিবীর সকল বাবা

ইদানিং বাবার শরীরটা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। বয়স আর অসুখের কাছে যেনো দ্রুতই হেরে যাচ্ছেন তিনি। রাত গভীর হলে অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে বাবার প্রতি। তখন চুপচাপ ঘরের বাইরে যাই, আকাশের দিকে চেয়ে থাকি অনেকক্ষণ। একসময় ঘরে ফিরি। দেখি বাবা অঘোরে ঘুমাচ্ছেন। নিশ্চিন্ত হয়ে তবেই ঘুমাতে যাই। এই যে পিতার প্রতি সন্তানের অদম্য টান, তবুও একবারের জন্যও বলতে পারি না, ‘বাবা, আমি তোমাকে ভালোবাসি’।
অথচ কত সহজেই না আমরা মা’কে ভালোবাসার কথা বলতে পারি।
বাবা কারো কাছে বটবৃক্ষের মতো। যার শীতল ছায়ায় নিরাপদে আশ্রয় নেয়া যায়। যার স্নেহ অবারিত ধারায় শুধু ঝরতেই থাকে।বাবা কারো কাছে মাথার ওপর বিশাল একটা ছাদের ন্যায় কিংবা তপ্ত রোদে এক টুকরো মেঘ। কারো কাছে বাবা মানেই উৎসব, বাবা মানে পৃথিবী। কত কিছুর সঙ্গেই আমরা বাবার তুলনা করতে যাই, অথচ এগুলো নিছক কিছু শব্দ মাত্র। বাবার তুলনা বাবা নিজেই। এ এক সংজ্ঞাহীন শব্দ।
সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে হয় বাবাকে। বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের পথচলা শুরু। সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিশোধ করতে পারে না।
প্রথম স্কুলে যাওয়া, সাঁতার শেখা, গাছে ওঠা, ক্রিকেট খেলায় ব্যাট ধরা, সাইকেলের প্যাডেল চালানো থেকে শুরু করে সবকিছুতেই বাবার অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে।
বাবাই সন্তানদের শেখান কীভাবে পাড়ি দিতে হয় জীবনের অলিগলি আর আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ। অতি সাধারণ মানুষটি এক সময় সন্তানদের কাছে হয়ে উঠেন অসাধারণ, অনুকরণীয় আদর্শ । দেশ-কাল-ভাষাভেদে বাবা ডাকটি বদলালেও বদলায় না রক্তের টান। এ যেন চির শ্বাশত এক সম্পর্ক।
সেই বাবার প্রতি সম্মান জানাতে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই এই দিবস পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্যাটেলাইট যুগের সুবাদে বাবা দিবস ঘটা করেই পালিত হচ্ছে।
সন্তান হিসেবে বাবার প্রতি আমাদেরও কিছু দায়িত্ব থাকে। আমরা কি পারি বাবার প্রতি সেই আনুগত্য দেখাতে? আমরা কি পারি, তাঁর শেষ বয়সে লাঠি হতে? বাবা হওয়াটা এখন কারো কারো কাছে অভিশাপে পরিণত হচ্ছে। বাবারা বৃদ্ধ হলেই ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। আমরা যে মানবতার কথা বলি, এই বৃদ্ধাশ্রমগুলো হলো মানবতার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি, সমাজের বিষফোড়া। ছোঁয়াচে রোগের মতো এই বিষফোড়াগুলো ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে। সারা জীবন বিনা পারিশ্রমিকে সন্তানদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া মানুষটির আজ কোনো গন্তব্য নেই, নেই কোনো আশ্রয়, নেই কোনো অভিযোগ।
বাবা দিবসে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা পূর্ণতা পাক; দৃঢ় হোক পরিবারের বন্ধন। আজকের দিনে এটিই হোক আমাদের শপথ। শতবর্ষী হোক পৃথিবীর সকল বাবা।

পংকজ কান্তি গোপ টিটু
শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী
ইমেইল: titubahubal79@gmail.com

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com