মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : নদীর কোলঘেঁষা ফসলের মাঠ। তাতে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকেছেন কৃষক আবদুল কাদির। শৈল্পিক বুননে সরিষা গাছ দিয়ে পঁয়ত্রিশ শতক জমির মাঝখানে ও চারপাশে ‘লাভ’ চিহ্ন এঁকেছেন। মাঝখানে নিজের নাম ফুটিয়ে তুলেছেন। তার দৃষ্টিনন্দন জমিটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
কৃষক আবদুল কাদিরের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের পাড়া খালবলা গ্রামের মো. তারা মিয়ার ছেলে তিনি। স্ত্রীর নাম মোকসুদা আক্তার। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ৪০ বছর বয়সী আবদুল কাদির পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় শ্রমিকের সংকট থাকায় নিজেদের জমিতে কাজ শুরু করেন। পরে আর পড়ালেখা হয়নি। মাঠেই দিন-রাত পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলান তিনি।
গত নভেম্বরের মাঝামাঝি বাড়ির কাছে কাঁচামাটিয়া নদীঘেঁষা ৩৫ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেন আবদুল কাদির। বারি সরিষা-১৫ জাতের সরিষা দিয়ে তিনি নিজের জমিতে দৃষ্টিনন্দন ‘ভালোবাসার’ বার্তা এঁকেছেন। ফসলি জমির মাঝখানে একটি বড় ‘লাভ’ চিহ্নে তার ভেতরে নিজের নাম, চারপাশে চারটি লাভ এঁকে পুরো মাঠটিকে দৃষ্টিনন্দন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে কাদিরের নিপূণ হাতের সৌন্দর্য।
কৃষক আবদুল কাদির বলেন, তরুণ বয়সে প্রেমে পড়েন পাশের সোহাগী ইউনিয়নের মেয়ে মোকসুদা আক্তারের। তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টার পর সফল হন। প্রেমের সময় নিজেদের আবেগ বিনিময় করতেন চিঠির মাধ্যমে। চিঠির মাঝখানে একটি বড় লাভ, চারদিকে চারটি লাভ এঁকে মাঝের লাভের ভেতরে লিখতেন দু’জনের নাম। তিনি আরও বলেন, ভালোবেসে সম্রাট শাহজাহান তাজমহল তৈরি করেছেন। তার সেই সামর্থ্য নেই। কিন্তু নিজের মনের ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। নিজের প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে স্থানীয় পাড়া খালবলা ডিজিটাল ক্লাবের ছেলেদের সহযোগিতা নিয়ে তিনি সরিষা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ভালোবাসার বার্তাটি তৈরি করেছেন। ফসল দিয়ে নিজের নাম, চার কোণে চারটি লাভ চিহ্ন, মাঝখানে বড় একটি লাভ, একটি শাপলা ফুল ও দুটি নৌকা এঁকেছেন। কাদির আরও বলেন, সমাজে কলহ, দ্বন্দ্ব সব সময় লেগেই থাকে। তরুণ সমাজ সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। যাদের মনে প্রেম আছে তারা কখনও সহিংস হয় না। অহিংসের বার্তা ছড়িয়ে দিতেই তিনি মাঠে প্রেমের বার্তা ফুটিয়েছেন।
কাদিরের বাবা তারা মিয়া বলেন, ‘ছেলেকে বেশি পড়ালেখা করাতে পারিনি। তার ছেলে ফসলের মাঠে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে, তা দেখতে সবাই ভিড় করছে। এতে নিজের কাছে ভালো লাগছে’।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, কৃষক আবদুল কাদির মানসিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন নিজের ফসলের মাঠে। তার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়।
সূত্র : দৈনিক জাগরণ।