বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ন
অরুন সরকার: সিলেটসহ সমগ্র বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান দেয়া হোক। শুদ্ধি অভিযান নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন আছে। আশাও আছে। দেশের মানুষ শুদ্ধি অভিযানে সন্তুষ্ট প্রকাশ করবে এটাই সকলের কাম্য। তবে এতে বেরিয়েও আসতে পারে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এছাড়া নিউজ বাণিজ্যের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত রয়েছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হোক। ধন-সম্পদের হিসাব-নিকাশও নেয়া অতিব জরুরী। কারন আমরা সকলেই জানি সম্পূর্ণ অলাভজনক ও অরাজনৈতিক পেশা হল সাংবাদিকতা পেশা। জাতির দর্পন হিসেবে খ্যাত এই পেশা আজ লন্ডভন্ড। চারদিকে শুধু কোন্দল আর কোন্দল। এতে করে ধস নেমেছে এই সাংবাদিকতা পেশার। যে যার মত করে নামে বেনামে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে তুলছে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। সিলেটে এর ছড়াছরি সবচেয়ে বেশি বললে চলে। নামসর্বস্বহীন কিছু অনলাইন গণমাধ্যম সহ ইউটিউব চ্যানেল বদলে দিয়েছে পুরো মিডিয়া জগতকে। বস্তু সংবাদ প্রকাশে বড় দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব কচুরিপনা। মুক্তভাবে ভাসমান বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদের মত এসকল যোগাযোগ মাধ্যমে ছেয়ে গেছে পুরো সিলেট। হাতেগুণা কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম থাকলেও তাদের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে বিতর্কিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শুধু কি তাই তাদের কুকর্মের ফসল এদের উপরেও প্রভাব বিস্তার ফেলছে। বিভাগ-জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়েও তাদের ছড়াছরি। কেউবা আবার সেটাকে পুজি হিসেবেও দেখছে। সময়ের ব্যবধানে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে বস্তুনিষ্ট মিডিয়াগুলো।
রাস্তা-ঘাটে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কত মোটরসাইকেল দেখা যায় প্রেস লেখা সম্বলিত যানচলাচল করছে প্রকাশ্যে দিবালোকে। দিন-রাত থানা এলাকায় তাদের আনাগুনা। অনেকে আবার কার্ড ঝুলিয়ে নিজেকে উজার করে দিচ্ছে এই পেশায়। এর সবচেয়ে বেশি চাহিদা লোভ পেয়েছে বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে। তাদের টেলায় জাতীয়-স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সংবাদকর্মীরা এখন কোনঠাসা। পিয়াজি বিক্রেতা, পত্রিকা বিক্রেতা, শীর্ষ সন্ত্রাসী, সোর্স পরিচয়ধানকারী ব্যক্তি, চোরাকারবারী, গাড়ি চালক, পলিথিন ব্যাবসায়ী, রাজনীতির আড়ালে নিজেকে আত্মরক্ষা ও ভূমিখেকো সহ হরেক ধরনের পরিচয় ব্যক্তিও আজ সাংবাদিক হয়ে কার্ড ঝুলিয়ে চলাফেরা করছে। প্রশাসনের গোয়েন্দা নজরধারী এড়িয়ে তারাও এখন সাংবাদিক।
এদিকে অনূসন্ধ্যান করলে দেখা যাবে অনেক ভাল ভাল প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরাও জর্জিত রয়েছেন বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। এরমধ্যে অন্যতম হল চাঁদা আদায় বাণিজ্য। টাকা ছাড়া তারা কোন প্রতিবেদন লিখতে বা পত্রিকার পাতায় তুলে ধরতে রাজি নয়। অনেকে আবার নিউজ প্রকাশ করার আগেই হাতিয়ে নেন টাকা কড়ি। রির্পোটার যেমন তেমন ঠিক তেমনি ক্যামেরাম্যানরাও। কেউবা রাজনৈতীক কর্তাদের দোষর, ব্যাবসায়ীক পাটনারের সহযোগী, ফুটপাত ঠেকানোর নাটের গুরু, কতিপয় অসাধু চক্রের শেল্টারদাতা, সীমান্ত এলাকার পাহারাদার হয়ে চাঁদা আদায় বাণিজ্য, মাদক সম্রাটদের ভক্ত, জুয়া খেলায় মত্ত, নারী কেলেংকারীতে জর্জিত, প্রশাসনের কতিপয় অসাধু ব্যাক্তিদের হয়ে তাবেদারি ইত্যাদি ইত্যাদি কাজে ব্যস্থ্য। এসব মিলে গুরে বালি!
সত্যেকার অর্থে সাংবাদিকতা পেশা এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। রহস্যজনক হলেও সত্য যে, অনেকে সাংবাদিকতার আগা-গুরাও জানেন না। কিন্তু তারাও নাকি সাংবাদিক। তাদের রয়েছে নামে-বেনামের সংগঠন। অথচ তারা আদৌ জানেনা কোনও সংগঠন সাংবাদিক জন্ম দেয়না বরং সাংবাদিকরাই সংগঠনের জন্ম দেয়।
অবাক হলেও সত্য যে, সমগ্র বাংলাদেশে ছোট পরিসরে কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ পায়। আর এর বাহিরের অন্যান্য হায় হায় পত্রিকাগুলোর মালিকগণ বড় অংকের উৎকুচ হাতিয়ে নিয়ে তাদের গলায় কার্ড ঝুলিয়ে দেয়। কোন যাচাই-বাচাই ছাড়াই তারা হাতে কার্ড ধরিয়ে দিয়ে সপ্তাহে ৩-৪ দিন ১০-১৫টি পত্রিকা জেলাওয়ারী পাটিয়ে তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করে। মাস শেষ হলে সেই পত্রিকার খরচও হাতিয়ে নেয় তাদের দেয়া প্রতিনিধির কাছ থেকে। সরকারী ব্যবস্থাপনা নীতিমালার পরিপন্থি এসব পত্রিকাওয়ালারা ঢাকায় বসে গুণছে কাড়ি কাড়ি টাকা। এতে সরকারের (তথ্যমন্ত্রনালয়)’র উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নজর নেই বললে চলে।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সিলেটে যে সকল সংবাদকর্মী রয়েছেন এরমধ্যে বেশিরভাগই ভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত ব্যক্তিবর্গ। স্থানীয়রা তুলনামূলক অনেক কম। তাই তাদের তালিকাও যাচাই-বাচাই করা আবশ্যক। সাংবাদিকতার আড়ালে কে কোন ব্যাবসায় জড়িত রয়েছেন তাও জানা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব ও কত্যর্ব। শুরগুল শুনা যায় প্রোগ্রামে অংশ না নিলে নাকি কথিত সাংবাদিকদের পরিবার না খেয়ে থাকবে। তাদের প্রোগ্রাম মানেই টাকা হাতিয়ে নেয়া। আসলে প্রোগ্রাম খায় পরে মাথায় দেয়? তাদের বেলায় বলা যেতে পারে এটা একটি এলার্জি। সকাল হলেই তারা তাকে প্রোগ্রামের উপেক্ষায়। শকুন যেমন মৃত বস্তু খুজে বেরায় ঠিক তেমনি তারাও তাকে সেই ধান্ধায়। সত্যেকার অর্থে এদের না আছে মনুষ্যত্ব, না আছে নিথর জলের কোন কুল বা মা। তারা এই পেশাটাকে এখন বাণিজ্যে পরিণত করেছে। এক কথায় নিউজ মানেই বাণিজ্য! আজকাল সম্মানি ভাতা শব্দটাও তাদের মুখে আর শুনা যায় না। হায়রে অভাগা বহুরুপী সাংবাদিক জাতি। কেন যে অতই জল সাগরে সাঁতার কাটতে তারা বড্ড ভালবাসে তাও কারো জানা নেই। তবে সবচেয়ে বেশি এদের বিরুদ্ধে দেয়া উচিত নিউজের নামে চাঁদা আদায় বাণিজ্যের দিকে। এরজন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। খুজ নিতে হবে পত্রিকা বা চ্যানেলের মালিকগণ সেই প্রতিনিধিদের সম্মানিভাতা ঠিকমত পরিশোধ করছে কি না। এনিয়েও তৈরী করতে হবে নীতিমালা। যদি পরীক্ষা না থাকে তাহলে তো শিক্ষার্থীদের জবাবদিহিতার যায়গাটুকু শূণ্য থেকে যাবে। তাইতো সময় থাকতে হাতে-কলমে লাগাম দিতে হবে। এরপর দেখা মিলবে দেশের ভেতরে ক’টি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করছে। ক’জন সাংবাদিক সেই লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে। তখন আর দেখা মিলবেনা ভূইফোড় অনলাইন গণমাধ্যম বা প্রিন্ট মিডিয়া সহ ইলেকট্রনিক মিডিয়া। নীতিনির্ধারনে ভুল থাকলে এভাবেই চলবে মিডিয়ার ছড়াছরি। যদিও জানি এই লেখাটি প্রকাশ হওয়ার পর অনেকের মাথায় বাজ পড়বে। কিন্তু কিছু করার নেই, বাস্তবতা মেনে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই অনতিবিলম্বে সরকারের উচিত সিলেটের সাংবাদিকদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ভূইফোর, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা। জাতীয়-স্থানীয় ও সাপ্তাহিক দৈনিক সহ ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যাক্তিত্বদের বিষয়ে সঠিক অনূসন্ধ্যান করা। রাজধানী ঢাকায় পত্রিকা প্রেস-এ তদন্ত জোরদার করা। দেশের প্রত্যন্ত বিভাগ-জেলাগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো-বস্তু নিষ্ট সাংবাদিকদের সম্মানিভাতা-নিরাপত্তা সহ সু-ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এতে উইপোকা তাড়ানো সম্ভব।
অরুন সরকার
লেখক ও সাংবাদিক।