সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা : সৌন্দর্যবর্ধন আর পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে শতাধিক কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপন করেছিলো বন বিভাগ। সড়কের পাশে সারি সারি গাছে থোকায় থোকায় ফুটবে কৃষ্ণচূড়া ফুল। পুরো এলাকা সাজবে লালের গালিচায়। পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হবে সড়কটি- এমনটিই বলা হয়েছিলো।
কিন্তু সড়কে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর গা ঘেঁষে বৈদুত্যিক খুঁটি বসিয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। এই খুঁটিতে লাইন টানানো হলে গাছগুলো কাটা পড়বে বলে আশঙ্কা পরিবেশকর্মীদের। সড়কের পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছের পাশ থেকে খুঁটিগুলো অন্যদিকে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের বধ্যভুমির সামনে থেকে বিটিআরআই’র প্রবেশ মুখ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের সারি। এই গাছগুলোর পাশে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুতের লাইন নেয়ার জন্য খুঁটি বসিয়েছে। খুটিগুলোতে লাইন টানানোর প্রস্তুতি চলছে।
লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম সদস্য সচিব তাপস দাশ বলেন, শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য এই সড়কটা অন্যতম আকর্ষণ। বধ্যভুমি, বিটিআরআই, লাউয়াছড়া, চা বাগান এ জায়গাগুলোতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম এই রাস্তাটি। রাস্তার দুই পাশের গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে আগামী বছরই ফুল ফোঁটার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যেভাবে বিদ্যুতের লাইন টানার জন্য খুঁটি বসানো হচ্ছে তাতে কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো কাটা হবে। যার কারনে কাটা পড়বে গাছগুলো, এত সুন্দর গাছগুলো নষ্ট হোক আমরা চাই না। পল্লী বিদ্যুৎ ইচ্ছে করলে অন্য জায়গা দিয়ে খুটি বসিয়ে লাইন নিতে পারে। রাস্তার দুই পাশে খুটি বসানোর যুক্তি দেখি না। তাছাড়া রাস্তার সামনে খুটি থাকলে প্রায়ই দেখা যাবে খুটি সংস্কাররের জন্য রাস্তা বন্ধ করে দিবে।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী এসকে সুমন সিলেটটুডে কে বলেন, ভানুগাছ সড়কের বিটিআরআই এর সামনে একটি অনেক পুরোনো বটবৃক্ষ ছিলো,সেই বৃক্ষের সাথে অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িয়ে ছিলো। কিন্তু বিদ্যুতের লাইনের কারনে প্রতিবছর গাছটি ছাটাই করতে করতে গাছটিকে পুরো ন্যাড়া বানিয়ে ফেলা হয়েছে, গাছটি আজ মৃতপ্রায়। এখন দেখা যাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া গাছের গা ঘেষে খুটি বসানো হচ্ছে। উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতের লাইন নিতে হলে রাস্তার পাশের চা বাগানের ভিতর দিয়ে নিলেই তো হয়। তাতে গাছগুলোও কাটা লাগবে না।
লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক জলি পাল বলেন, যেখানে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে গাছ লাগানোর উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা থাকার পরও গাছ কেটে এদিকে বিদ্যুতের লাইন নেয়ার সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত দুঃখজনক৷ আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে পল্লীবিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারের বরাবরে আপত্তিপত্র দিয়েছি, আমাদের দাবী কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোকে বাঁচিয়ে যেন পল্লীবিদ্যুত তাদের বৈদ্যুতিক লাইন টেনে নেয়৷
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য এই গাছগুলো লাগানো হয়েছে। কৃষ্ণচুড়া গাছগুলোতে যখন ফুল ফুটবে তখন অনেক সুন্দর হবে রাস্তার দুই পাশ। পল্লী বিদ্যুৎ হঠাৎ করেই কৃষ্ণচুড়ার গাছ ঘেষে বিদ্যুতের খুটি বসানোর কাজ করছে এতে করে দেখা যাবে গাছ বড় হলেই সব কাটা পড়বে। আমি মৌলভীবাজারের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে মৌখিকভাবে আপত্তি জানিয়েছি।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনালের ম্যানেজার (জিএম) শিবু লাল বসু বলেন, বৈদ্যুতিক এই লাইনটাকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ওই লাইনটা সিঙ্গেল সার্কিট ছিল; এখন ৩৩ কেভির ডাবল সার্কিট করা হচ্ছে। আমি বলেছি পাকা সড়কের গাছগুলো না কাটার জন্য। প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো একটু সরিয়ে যদি গাছগুলো রক্ষা করা যায় আমরা তা-ই করবো। আর যদি একান্তই খুঁটি না সরানো যায় তবে আরো উন্নত পদ্ধতি বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারে ব্যবহার করে গাছগুলোকে রক্ষা করবো।