শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) থেকে : কৃষি ও গ্রামীণ তেপান্তর প্রধান জনপদ বানিয়াচং উপজেলায় মৌসুমেও মিঠা পানিতে দেশি প্রজাতির মাছ মিলছে না। মুক্ত জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিলে মৌসুমের শুরুতে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া গেছে চলতি মৌসুমে তা অর্ধেক নেমে এসেছে। ফলে বাজাওে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম আকাশচুম্বী। সংশ্লিষ্ট বলছেন,জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ,মা মাছ নিধন,অভয়াশ্রমের অভাব ও সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় দিনের পর দিন দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্থানীয় মৎস বিভাগ প্রায় নির্বিকার। অনেকে বলেছেন,বৃষ্টি হলেই মাছ বাজারে আসতে শুরু করে। কিন্তু চলতি মৌসুমে আশানরুপ বৃষ্টির পর বর্ষা প্রায় শেষ প্রান্তে তবুও প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে মাছ উৎপাদন না হওয়ায় বাজারে দেশি মাছ উঠছেনা।
জলাশয়গুলোতে একসময় শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, শোউল, গজার, বোয়াল, বালিয়া, বাইম, পুঁটি, চিংড়িসহ নানা প্রজাতি মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে এসব প্রজাতির মাছ পাওয়াই দুষ্কর। বিলুপ্তি প্রায় এই মাছ গুলো একসময় চিরচেনা হলেও এখন তা খুবই অচেনা, অপরিচিত। এছাড়া এলাকার হাট-বাজারগুলোতে দেশিয় মাছের আমাদানি একেবারেই কমে গেছে। মাঝেমধ্যে বাজারে কিছু আমদানি হলেও তার দাম চড়া হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকে। কয়েকটি হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়,রুই,কাতলা,সিলভার কার্প, বিদেশী মাগুর, পাঙ্গাস, বিদেশী কৈ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন ধরণের পুকুরে চাষ করা মাছ বিক্রি হলেও দেশীয় মাছের আমদানি নেই।
স্থানীয় মৎস্যজীবিরা জানান,বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত খাল-বিল,নদীনালা ও জলাশয়ে দেশী প্রজাতির মাছ ডিম পাড়ে। এ সময় একশ্রেণির অসাধু জেলেরা নির্বিচারে ছোট মাছ শিকার করায় মাছ বংশবিস্তার করতে পারছেনা। ফলে দিন দিন বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে এই দেশী প্রজাতির মাছ। সচেতন মহল মনে করেন-বাঁধ নির্মাণ না করা,ডোবাগুলোয় মাটি ভরাট না করা,কৃষিকাজে অপরিমিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশাকের ব্যবহার না করা,ডিমওয়ালা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা,জলাশয় দুষণ না করা,কারেন্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং মৎস্যবিভাগ সরেজমিন তদারকির ব্যবস্থা করলে মাছের উৎপাদন পুরোপুরি না হলেও অনেকটা স্বাভাবিক করা সম্ভব।
এই বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের সাথে কথা হলে তিনি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জানান,বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত চার মাস দেশীয় প্রজাতির ছোটমাছ না ধরে প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ করা,ডিমওয়ালা মাছ প্রকৃতিতে অবমুক্তকরণ,ছোট মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ, জেলে পরিবারগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ে মাছ ধরার পরিবর্তে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা,সমন্বিত বালাইনাশক প্রয়োগ পদ্বতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা সম্ভব বলে জানান তিনি।