বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : ভারতের সংবিধানে ৩৭০নং ধারাটি সংসদের উভয়কক্ষ বাতিল করে। জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে এখন দুটি অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে- জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ। কাশ্মীর এখন রাজনীতির গ্যাড়াকলে পড়ে অশান্ত । তার পরও কাশ্মীর বিশ্বের বিস্ময়। যতই বিরোধপূর্ণ এলাকা হোক, কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য এতটাই দৃষ্টিনন্দন যে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর থেকে শুরু করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও মজেছিলেন এর অপরূপ রূপে। তার ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতা লিখেছিলেন কাশ্মীরে বসেই। অনিন্দ্যসুন্দর কাশ্মীরের মাটিতে মৃত্যুবরণ করতে চেয়েছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর।
প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে বহু মানুষ কাশ্মীর ভ্রমণে যায়। কিন্তু কতজন জানেন যে কাশ্মীরেও বাংলাদেশ নামে একখণ্ড জনপদ রয়েছে। এ গ্রামের নাম বাংলাদেশ হলো কেন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে। সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বাংলাদেশের জন্মবৃত্তান্তের কথা উল্লেখ করতে হবে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। বাংলাদেশে চলছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা। তাদের দেয়া আগুনে জ্বলছে সবুজ বাংলার গ্রামের পর গ্রাম। প্রাণ বাঁচাতে ছুটে চলছে মানুষ; আশ্রয় নিচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। একই সালের অপর একটি ঘটনা; তবে প্রেক্ষাপট ও দেশ দুটোই ভিন্ন। ভারতের কাশ্মীরের পাকিস্তানঘেঁষা জেলা বান্ডিপুরা।
সেখানকার আলুসা তহশিলের ছোট্ট গ্রামের নাম জুরিমন। এখানে হঠাৎই আগুন লাগে; পুড়ে যায় পাঁচ থেকে ছয়টি ঘর। গৃহহীন হয়ে পড়ে গ্রামের নিরীহ মানুষ। তারা তখন ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা থেকে কিছুটা দূরে পার্শ্ববর্তী ফাঁকা জায়গায় সবাই মিলে ঘর তোলেন। ডিসেম্বরে স্বাধীন হয়ে জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র- বাংলাদেশ। একই সময় জুরিমনের গৃহহীন মানুষগুলো দুঃসময় মোকাবিলা করে শুরু করেন নতুন জীবন। আবেগ-ভালোবাসায় তারাও তাদের নতুন গ্রামের নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ’। সেই টুকরো গ্রামটি ভাসমান- তবে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, কাশ্মীর সব মিলিয়ে যেন কাকতালীয় যোগাযোগ!
রাজ্য ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, কাশ্মীরে সব মিলিয়ে ২২টি জেলা রয়েছে। সেখানকার শ্রীনগর থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে বান্ডিপুরার অবস্থান। বান্ডিপুরা-সোপুরের মধ্য দিয়ে মাটির রাস্তা ধরে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটলেই দেখা পাওয়া যাবে কাশ্মীরের ‘বাংলাদেশ’। বিখ্যাত উলার হ্রদের তীরে ভাসমান গ্রামটিতে বাইরের মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। তবে গ্রামটির সৌন্দর্য কোনো অংশেই কম নয়। চারদিকে পানি, পেছনে সুউচ্চ পর্বতমালা, সব মিলিয়ে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে গ্রামজুড়ে। নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই এখনো গ্রামবাসীর হাতের মুঠোয় আসেনি। তবে দিন দিন উন্নতি হচ্ছে সবকিছুর। এরই মধ্যে সেখানে স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বান্ডিপুরার ডিসি অফিস ২০১০ সালে এই আলাদা গ্রামের মর্যাদা দেন। গ্রামবাসীর প্রধান জীবিকা মাছ ধরা। পাশাপাশি তারা পানিবাদাম সংগ্রহ করে থাকে।
গ্রামটিতেও ৫-৬ ঘর থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ গ্রামে এখন আছে পঞ্চাশেরও বেশি ঘর। তবে এই প্রজন্মের অনেকে গ্রামটির জন্ম ইতিহাস জানেন না।
ভাসমান এই গ্রাম, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, কাশ্মীর সব মিলিয়ে যেন আশ্চর্য কাকতালীয় যোগাযোগ! কোথায় যেন একটা মায়া কাজ করে শুনলে। বিশেষ করে যে গ্রামটির জন্ম একাত্তরে, স্বাধীন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি জন্মের বছরে! আজকে কাশ্মীরের এই উত্তপ্ত দিনে এই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেই ‘বাংলাদেশ’র বসিন্দাদের প্রতি অনেক শুভকামনা। ভালো থেকো বাংলাদেশ, যুগ যুগ শতাব্দীর পর শতাব্দী।