শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

মৃত্যুর ১১৬ বছরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী

আরিফুর রহমান স্বপন, লাকসাম (কুমিল্লা): উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব নারী শিক্ষার অগ্রদূত মহিয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর ১১৬তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ সোমবার লাকসামে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে।

ওই মহিয়সী নারীর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে লাকসাম উপজেলা প্রশাসন, নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ এবং নবাব ফয়জুন্নেছা ও বদরুন্নেছা যুক্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে পৃথক পৃথক ভাবে আলোচন সভা, শোভাযাত্রা, তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ দোয়া মোনাজাতসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

লাকসাম উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই মহিয়সী নারীর কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, লাকসাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট ইউনুস ভূঁইয়া।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, লাকসাম পৌরসভা মেয়র অধ্যাপক মো. আবুল খায়ের, পৌর কাউন্সিলর মো. আবদুল আলিম দিদার প্রমূখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, এই মহিয়সী নারী জমিদারি পরিচালনাসহ নানাহ ব্যস্ততার মাঝেও অসাধারণ সাহিত্যচর্চা করতেন। তাঁর কাব্য সাধনার অমর সৃষ্টি ”রূপজালাল” কাব্যগ্রন্থ। তাঁর সৃজনশীল কর্মকে আমাদের চিন্তন ও মননে লালন করতে হবে। এই জন্য বর্তমান সরকারসহ সকলকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহবান জানান।

মহিয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী কেবল মাত্র নারী শিক্ষার ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখেননি, সর্বস্তরে শিক্ষা বিস্তারে ছিল তাঁর অসাধারণ অবদান। তাঁর জমিদারির অন্তর্গত ১৪টি মৌজায় ১৪টি প্রাথমিক মক্তব (বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়) স্থাপন করেন। এ ছাড়াও স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, মুসাফিরখানা, হাসপাতাল, পুল, পুকুর-দীঘি খননসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।

আলোচনা সভায় বক্তারা মহিয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর জীবনী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভূক্ত এবং বাংলাদেশে নবাব ফয়জুন্নেছা দিবস পালনের জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি দাবি জানান।

এ ছাড়া একই দিন দুপুরে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ এবং নবাব ফয়জুন্নেছা ও বদরুন্নেছা যুক্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে পৃথক অনুষ্ঠানে এই মহিয়সী নারির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ-মাহফিল, দোয়া-মোনাজাত এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত; ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী লাকসামের পশ্চিমগাঁও জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ছিল জমিদার আহম্মদ আলী চৌধুরী। মাতার নাম আরফান্নেছা চৌধুরী। বাবা-মা তাঁকে আদর করে ’ফয়জুন’ নামে ডাকতেন। ফয়জুন’র বয়স যখন ১০ বছর, তখন তাঁর বাবা মারা যান। ছোট বেলায়ই পিতৃহারা হলেন জমিদার তনয়া ফয়জুন। এটি ছিল তাঁর জীবনে প্রথম প্রচন্ড হোঁচট।

মায়ের সাথে চলছিল ফয়জুন্নেছার জীবন। কিছুকাল পর ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে মাতৃবিয়োগ হলে ফয়জুন্নেছা পিতার জমিদারির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। অসাধারণ দৃঢ়চেতা এই নারী স্বামী বিচ্ছেদের দুঃখকেও শক্তিতে পরিণত করে নিজকে নিষ্ঠাবান সমাজসেবক প্রজা রঞ্জক জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন। পশ্চিমগাঁও নিজ বাড়ির পাশে তাঁরই নির্মিত দশ গম্বুজ মসজিদের পাশে এই মহিয়সী নারী চির নিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com