মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: অবশেষে অসুস্থ তাফিদা রাকিবকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন তাফিদার মা-বাবা।
বৃহস্পতিবার ( ৩ অক্টোবর) ইউকের হাইকোর্ট তাফিদাকে ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে রায় ঘোষণা করে।
বার্তা সংস্থা বিবিসি জানায়, রায় ঘোষণার পর তাফিদার আইনজীবী ব্যারিস্টার ডেভিড লক কিউসি রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, একটা অনেক বড় যন্ত্রণা থেকে তার মা-বাবা মুক্তি পেলেন।
হাসপাতালের আইনজীবী ব্যারিস্টার কেটি গলপ কিউসি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হয়তো রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও করতে পারে। তবে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত আসে নি তাদের তরফ থেকে।
রায়ের ফলে এখন তাফিদাকে ইতালির জেনোয়ার গ্যাসলিনি চিলড্রেনস হাসপাতালে নিয়ে যেতে আর বাধা দিতে পারবে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ৫ বছর বয়সের তাফিদা রাকিব চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মাথায় ব্যথা অনুভব করে। এর একটু পরেই তাফিদা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাকে স্থানীয় নিউ হ্যাম হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলেন তাফিদার ব্রেইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর তার মাথায় অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সে কোমায় রয়েছে। বর্তমানে তাফিদা রয়েল লন্ডন হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
ডাক্তাররা জানিয়েছেন,তাফিদার আর সুস্থ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, তার জন্যে এখন উত্তম হচ্ছে তাকে শান্তিতে মরতে দেয়া। কিন্তু তাফিদার মা সেলিনা রাকিব বলে আসছেন, তার মেয়ে এখন আগের চেয়ে ভালো এবং সে দিন দিন সুস্থ হচ্ছে।
তিনি জানান, তাকে একজন ভালো নিউরোলজিস্ট বলেছিলেন তাফিদার শারীরীক অবস্থা পুরোপরি বুঝার জন্যে আরও সময় লাগবে। তাফিদার পরিবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ইতালির জেনোয়ার গ্যাসলিনি চিলড্রেনস হাসপাতালে স্থানান্তর করতে চায়। কিন্তু তাফিদার রয়েল লন্ডন হাসপাতালের ডাক্তাররা তাকে ইতালির হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছিল না। তারা বার বার বলছিলেন তাফিদার ব্রেইন আর সুস্থ হবে না। বরং তারা তাফিদার লাইফ সাপোর্ট খুলে নিতে চেয়েছিলেন। লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়ার মানে হচ্ছে তাফিদার জীবন শেষ বলে ঘোষণা করা।
কিন্তু তাফিদার মা ডাক্তারদের লাইফসাপোর্ট খুলে নেয়ার অনুমতি দেন না। ডাক্তাররা লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়ার অনুমতি আদায়ের জন্যে আদালতে মামলা করেন। এদিকে তাফিদার মা সেলিনা বেগমও তার মেয়েকে ইতালির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুমতির জন্যে আদালতের শরণাপন্ন হন। ১৩ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) আদালতে যুক্তিতর্ক শেষ হয়। অবশেষে ৩ অক্টোবর ব্রিটেনের হাইকোর্ট তাফিদাকে ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
তাফিদার গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায়। তার বাবা মোহাম্মদ রাকিব একজন কন্সট্রাকশন কনসালটেন্ট এবং মা সেলিনা বেগম একজন আইনজীবী।
তাফিদার জীবন রক্ষা করার জন্যে ইউকেজুড়ে ক্যাম্পেইন করেন অনেকে। ‘সিটিজেন গো’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে বহুবার। ২ অক্টোবর (বুধবার) পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ মানববন্ধনে ব্রিটিশ র্পালামেন্টের এমপি ছাড়াও স্থানীয় বারার ডেপুটি স্পিকার কাউন্সিলর সহ বিভিন্ন কমিউনিটির বিপুল সংখ্যক লোকজন অংশ নেন।