মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩১ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, ‘গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, তা দেখে আচার্য হিসেবে আমাকে মর্মাহত করে। আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়, প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লোভে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ঠিকমতো অংশ নেন না, বরং বিভিন্ন লবিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেকে স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না। এটা অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর।’
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একাদশ সমাবর্তনে শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শিক্ষার সাথে মানবিক মূল্যবোধ পৃথিবীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কিছু কিছু ঘটনা এই মানবিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা যেন এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সচেতন থাকি এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা ও মানবিক মূল্যবোধের পীঠস্থান হিসেবে সমুন্নত রাখি।’
এ সময় শিক্ষকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সাথে কখনো আপস করবেন না। আপনাদের মর্যাদা আপনাদেরই সমুন্নত রাখতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থের কাছে আদর্শ যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয়, সে দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। রাজনৈতিক মতাদর্শ ও চিন্তা-চেতনায় একজনের সাথে আরেকজনের পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব যেন প্রতিষ্ঠানে বা শিক্ষার্থীদের ওপর না পড়ে তাও নিশ্চিত করতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন নেই। যেখানে শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী। সরকারকে এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি প্রণোদিত হয়ে সকল চাহিদা পূরণ করবেন। শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা বর্তমান সরকার করছে এবং করবে। অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন জিম্মি করা হলে তা কিন্তু সরকার বরদাশত করবে না।’
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ হেলিকপ্টারযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবতরণের পর তাকে ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখান থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে গেলে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
পরে বিকাল সাড়ে ৩টায় সমাবর্তনস্থলে রাষ্ট্রপতি সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। সেখানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠের পর রাষ্ট্রপতি সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর ডিগ্রি উপস্থাপন ও প্রদান পর্ব, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্তদের সনদপত্র প্রদান, বিশেষ অতিথির বক্তব্য, সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য ও সমাবর্তন স্মারক প্রদান করা হয়।
এবারের সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তী। এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক। পরে সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম ও জাফরিন জিনিয়া লুইপা।