সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে বাংলাদেশকে ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করার স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তান প্রেমীদের ষড়যন্ত্র কখনো সফল হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসর বা দালাল চক্র যারা অন্তরে অন্তরে পাকিস্তান প্রেমে ভোগে, তাদের চক্রান্ত এই মাটিতে কখনও সফল হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা এবং জাতির পিতা এই দেশের জন্য সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাঁর ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪৯ তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্বকালে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নীতি আদর্শগতভাবে যেভাবেই হোক পাকিস্তানের ওপরে আমরা থাকবো।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সত্যিই বাংলাদেশ সবদিক থেকে পাকিস্তানের ওপরে অবস্থান করছে এবং সেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নইলে ঐ পাকি প্রেমী যারা তারা বিদেশেই থাক, জেলখানাতেই থাক আর যেখানেই থাক তাদের চক্রান্ত থাকবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন।
সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ, দলের সভাপতি মন্ডলির সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রিয় সদস্য মোফাজ্জ্বল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীরবিক্রম, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কোচি এবং হুমায়ুন কবির বক্তৃতা করেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির অপর সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা ‘তুমিই বঙ্গবন্ধু তুমিই বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্বরোচিত কবিতা আবৃত্তি করেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক মো.আমিনুল ইসলাম সভাটি পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার কালজয়ী আহ্বান স্মরণ করে বলেন, জাতির পিতার সেই কথা স্মরণ করতে হবে যে-এই সাত কোটি বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা।’
‘আর এখন আমরা ১৬ কোটি। এখানে মুষ্টিমেয় দালাল থাকতে পারে কিন্তু এই বাঙালিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি এবং পারবে না। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি’, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ৪৯ তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এই বিজয় দিবস আজকে ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়েছে। সারাদেশ লাল-সবুজের রঙে রঙ্গিন হয়ে এ বিজয় উদযাপন করেছে। অনেকে চোখে বুকভাঙ্গা কান্না আর মুখে হাসি না নিয়ে উদযাপন করেছে। তাই, এদিনটি যেমন আনন্দের তেমনি স্বজন হারানোর বেদনারও।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি ঠিক বিজয়ীর বেশে বাঙালি জাতি সারাবিশ্বে তাঁর মর্যাদা নিয়ে চলবে। বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ এবং জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করবো-সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের বিগত তিন মেয়াদে সাড়ে ১০ বছরের শাসনে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধলে বলেন, ‘শতবাধা বা ষড়যন্ত্র হলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দারিদ্র ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি এবং প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। মাতৃ এবং শিশু মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে আয়ুস্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ার ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের শতকরা ৯০ শতাংশ বাংলাদেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নেই করতে পারে। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে তৈরী করছে এবং ক্রমান্বয়ে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করছে।
জনগণ পক্ষে থাকলেও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় বিরোধীতা করে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনকারি তৎকালিন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হলে কি হবে, তলাবিহীন ঝুড়ি হবে’ সংক্রান্ত বিদেশি মিডিয়ায় করা মন্তব্য’র প্রসংগ উল্লেখ করে সে দেশটির থেকে অন্তত এক শতাংশ অধিক দারিদ্রের হার কমানোই তাঁর সরকারের লক্ষ্য হিসেবেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘যেদেশ বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কি হবে একটা বাস্কেট কেস হবে’- সেই দেশের দারিদ্রের হার ১৮ শতাংশ। আমার লক্ষ্য হলো ঐ ১৮ শতাংশ থেকে এক শতাংশ হলেও দারিদ্রের হার কমানো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘কাজেই আমি একটা অনুরোধ করবো সবাইকে- জীবনে কি পেলাম, পেলাম না, সে চিন্তা নয়, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, জনগণকে কতটুকু দিতে পারলাম সে চিন্তাটাই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের থাকতে হবে।’
অপরিমিত অর্থ- সম্পদের দিকে ঝুঁকে পড়াদের তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘অর্থ সম্পদ কেউ কবরে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু অর্থপ্রাপ্তি একটি নেশার মত হয়ে যায়। মানুষ অন্ধের মত ছুটতে থাকে। তাদের পরিবার ধ্বংস হয়, ছেলে-মেয়েরা বিপথে যায়, মাদকের পথে বা জঙ্গিবাদে জড়ায়।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে যদি কেউ মুক্ত হতে পারে আর দেশের জন্য নিবেদিত প্রান হতে পারে তাহলেই সে দেশের উন্নতি হবে।’
জাতির পিতা তাঁর সারাটি জীবন ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘সেই জন্যই আমরা স্বাধীনতা অর্জনে সমর্থ হয়েছিলাম।’ বাংলাদেশ যে একদিন স্বাধীন হবে তা জাতির পিতা তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় অনেক আগেই জেনেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, ‘২৩ মার্চ ১৯৭১ সাল তখন আমি কেবল সন্তান সম্ভবা হওয়ার কথা জানতে পেরেছি। আমাদের ধানমন্ডী ৩২ নম্বরের বাসায় তখন বাংলাদেশের জাতিয় পতাকা উত্তোলন শেষে আমি বাবার মাথার কাছে বসে তাঁর হাতের নখ কেটে দিচ্ছিলাম।’
তিনি বললেন- ‘তোরতো একটা ছেলে হবে। আর সে ছেলে স্বাধীন দেশে হবে। এই ছেলের নাম রাখবি জয়। আমি দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না। তবে,তোর ছেলে স্বাধীন দেশেই হবে।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতাকে হারিয়ে ফেলার জন্য ও এদেশের বিরুদ্ধে সবসময়ের ষড়যন্ত্রকারি কতিপয় পাকিস্তান প্রেমিক ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর পূনরায় সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ষড়যন্ত্রকারিরা যারা তখনও ঐ পাকি প্রেমে মুগ্ধ আর সেইসাথে আমাদের দেশেও কিছু আছে তারা স্বাধীনতা পেয়ে এমনই বিভোর হয়ে গেল যে, কেউ আর জাতির পিতাকে কিভাবে রক্ষা করবে আর তাঁর সেবাটা নেবে সে চিন্তাও করতে পারেনি। ফলে আমাদের জীবনে অমানিশার অন্ধকারের মত ১৫ আগষ্ট আসলো।’
প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগষ্টের বিয়োগান্তকব ঘটনা স্মরণ করে বলেন,‘এতবড় একটা ঘটনা বাংলাদেশে কি কোন লোক জানতে পারল না। কেউ কোন পদক্ষেপ নিল না। ঐ লাশ পড়ে থাকলো ৩২ নম্বরে,কেন? সেই উত্তর আমি এখনো পাইনি।’
তিনি বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, ‘এতবড় সংগঠন,এত নেতা কোথায় ছিল? মাঝে মাঝে আমার বড় জানতে ইচ্ছে করে যে, কেউ সাহসে ভর করে আসতে পারল না! বাংলাদেশের সাধারণ মানুষতো বঙ্গবন্ধু মুজিবের সঙ্গে ছিল! হয়তো সেই ব্যর্থতার খেসারতই দিতে হয়েছে জাতিকে!’
এ সময় জাতির পিতা হত্যার পর এদেশে ১৯টি ক্যু, একের পর এক সামরিক সরকারের আগমন এবং ইতিহাস বিকৃত করে দেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টার জন্য দুঃখী জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন না হওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
বাসস।