বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন ড. ইউনূস ধান ক্ষেত থেকে অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার জমি নিয়ে বিরোধ; দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত দোকান বাকীর টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : বৃদ্ধ নিহত হবিগঞ্জে হত্যা মামলা, আ.লীগ সভাপতিসহ ২শ জন আসামি গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে শামীম ওসমান লুকিয়ে থাকার গুঞ্জন, তাল্লাশি শেষে যা বলছে পুলিশ নগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না এ সপ্তাহে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সারাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর গণভবনের মাছ-হাঁসও নিয়ে গেল জনতা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন, ছাড়লেন দেশ

বানিয়াচংয়ে গ্রাহকদের রক্তচুষে নিচ্ছে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) : শায়েস্তাগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতের আওতাধীন বানিয়াচং উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহকরা ভূতুড়ে বিলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। প্রায় প্রতিনিদিনই বানিয়াচং জোনাল অফিসে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা। এতে করে একদিকে বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তারা যেমন বিপাকে পড়েছেন তেমনি গ্রাহকদের মাঝেও দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ। গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন। পাশাপাশি লাগামহীন এই ভূতুড়ে বিলে গ্রাহকদের মাথায় হাত উঠেছে। এককথায় সাধারণ গ্রাহকদের রক্তচুষে নিচ্ছে তারা। অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের বিদ্যুত বিলের কপি হাতে পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা।

বিগত কয়েক মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ বিলের পরিমান দুই থেকে তিনগুন বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক গ্রাহহকদের অভিযোগ,পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি লোকসান দেখিয়ে একদিকে যেমন সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে,অন্যদিকে গ্রাহকের মাথায় ভৌতিক বিলের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা। এক কথায় তারা সেবার নামে গ্রাহকের সাথে চরম প্রতারণা শুরু করেছে। গ্রাহক মোস্তফা,জালাল,সুহেল মিয়াসহ অনেক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন-বানিয়াচং বিদ্যুৎ অফিস থেকে জানুয়ারি মাসের তৈরিকৃত বিদ্যুৎ বিল অফিসের নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে। সে বিলের বকেয়া হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসের বিলে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

গ্রাহকরা বলেন, এ অবস্থায় বাড়তি টাকা খরচ করে অফিসে গিয়ে বিল সংশোধন করে আনতে হয়েছে। অন্যদিকে অফিসের স্টাফদের আচার-আচরণ ও ভালো নয়। তাছাড়া অনেক স্থানে নিয়মিত মিটার রিডিং না দেখেই বিল তোলে দেওয়া হয়। ফলে কোনো মাসে বিল কম আবার কোনো মাসে বিল খুব বেশি আসে।

গ্রাহক আনহারুল ইসলাম জানান,আমার ঘরে মাত্র তিনটা বাতি জ্বলে। অথচ চলতি মাসে বিল এসেছে ৪হাজার টাকার মতো। বানিয়াচং ৪নং ইউনিয়নের গ্রাহক আনসার আলী, সিজিল মিয়া ও আব্দুস সালাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট ছাড়াও বিদ্যুৎ বিলের সাথে প্রতিমাসে ২০ টাকা হারে মিটার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অথচ টাকা দিয়ে মিটার কিনে নেওয়ার পর মাসে মাসে মিটার ভাড়া দিতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে তদারকি করার কেউ নেই। সাধারণ গ্রাহকদের কথা কেউ ই চিন্তা করেনা। এসব নিয়ে জনপ্রতিনিধিদেরও যেন কোনো ধরণের মাথা ব্যথা নেই।

পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক জমির উদ্দিন জানান, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বিদ্যুৎ বিলের পরিমান কিছুটা কম ছিল। কিন্তু তার ফেব্রুয়ারি মাসের বিল দুই তিনগুন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিল পরিশোধে তিনি চরম বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছেন। আরেক গ্রাহক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সোলায়মান খান জানান, ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে তার ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা বিল এসেছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে তার দ্বিগুন বাড়িয়ে ৮শ’৯৪টাকা করা হয়েছে। ব্যবসায়ী সুমন গাজী জানান, যেখানে আমার দোকানে বিল ১ হাজারের ভিতরে থাকার কথা গত দুই মাসে বিদ্যুৎ বিল ৪ হাজার টাকার উপরে পরিশোধ করেছি। একমাসের বিল আরেক মাসের বিলের সাথে যোগ করে দেয়। তাই বিলের পরিমান বেশি হচ্ছে।

অন্যদিকে একাধিক গ্রাহক জানান, আবেদন থেকে শুরু করে সংযোগ দেয়া পর্যন্ত নানা সমস্যা দেখিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করে টাকার বিনিময়ে সংযোগ মিলছে পল্লীবিদ্যুতের। অভিযোগ রয়েছে সেবা পেতে অফিসের গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে রাখার পর শেষ এক রুম থেকে আরেক রুমে পাঠানো হয় সেবাপ্রত্যাশীদের। তারপরও অমুক স্যার নাই তমুক স্যার নাই কাল আসেন বা পরশু আসেন এই বলে হয়রানি করা হয় গ্রাহকদের। বাড়তি বিল যোগ করে দিলে সেটা অফিস থেকে ঠিক করে আনতে গেলে যেমন সময় ব্যয় হচ্ছে অন্যদিকে আর্থিক ভাবেও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে গ্রাহকরা।

দিনের পর দিন নতুন নিয়ম আর বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হয় পল্লীবিদ্যুতের কিছু অলিখিত দালালদের মাধ্যমে। অন্যদিকে দালাল ব্যতীত কোন গ্রাহক যদি নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করেন,তাহলে সে সংযোগ কখন মিলবে বা আদৌ মিলবে কিনা এমন প্রশ্ন এখন বিদ্যুতের নতুন সংযোগ প্রত্যাশীদের ।

গ্রাহক জামিল মিয়া জানান,ফেব্রুয়ারি মাসের বিলের কপি হাতে পেয়ে এক প্রকার হতবাক হয়েছি। আমার মতো শতশত গ্রাহক হাজার হাজার টাকা ভূতুড়ে বিল পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমিতির একাধিক গ্রাহক জানান,মাঠ পর্যায়ে মিটার রিডাররা অনেক সময় গ্রাহকের বাড়িতে না গিয়ে আন্দাজের উপর রিডিং উঠিয়ে নিয়ে এসে বিল বিলি করে দেয়। সেই চাপ সামলাতে গিয়ে সাধারণ গ্রাহককে হিমশিম খেতে হয়। সমিতির ভূতুড়ে বিলের জন্য গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।

এ বিষয়ে বানিয়াচং পল্লীবিদ্যুৎ সমিটির ডিজিএম প্রকৌশলী ইসমাত কামাল জানান, বিদ্যুৎ ব্যবহার বেশি হওয়ায় বিল বেশি আসতে পারে। তবে অসামঞ্জস্য কিছু ত্রুটি থাকলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে রিডারম্যানরা চুক্তিভিত্তিক থাকায় কোনো কোনো রিডারম্যান এসব করতে পারে। অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব। আর মিটার চার্জ এটা সারাদেশেই জাতীয়ভাবে নেয়া হচ্ছে। এটা আমাদের কোনো কিছু করার নেই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com