রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস প্রতিরোধের অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় লকডাইনে চলে গেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১৯ টি খাসিয়া পুঞ্জি। প্রায় তিন সপ্তাহধরে বেশিরভাগ পুঞ্জির প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। পুঞ্জির কেউ বাইরে যাচ্ছে না। আবার বাইরের কাউকে পুঞ্জির ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নিজেদের সুরক্ষায় পুঞ্জির লোকেরা এই উদ্যোগে নিয়েছেন।
পুঞ্জি প্রধানদের সংগঠন খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলে ১২টি ও কমলগঞ্জে ৭টি খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। এর সবকটি পর্যায়ক্রমে নিজেদের উদ্যোগে লগডাউন করা হয়েছে। তারা নিজেরাই বিভিন্ন পুঞ্জিতে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দিচ্ছেন। এর ক্ষেত্রে পুঞ্জির যুব সংগঠনগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগেও বিভিন্ন পুঞ্জিতে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ লকডাউন অব্যাহত থাকবে।
কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, পুঞ্জিগুলো সাধারণত বনের ভেতরে। পান চাষই তাদের আয়ের প্রধান উৎস। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হলে তারা সেই নির্দেশনা অনুসরণ করতে শুরু করেন। পুঞ্জিগুলোতে লকডাউন ঘোষণা করে লোকজনের আসা-যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাগুরছড়া পুঞ্জিতে গত ১৮ মার্চ থেকেই লগডাউন চলছে। জরুরি চিকিৎসা ছাড়া কেউ বাইরে যেতে পারছেন না। বাইরে থেকে আসা স্বজনদেরও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাইরে থেকে শাকসবজি আনা বন্ধ রয়েছে। শুধু প্রয়োজনীয় প্যাকেটজাত পণ্য নির্দিষ্ট ব্যক্তির মাধ্যমে আনিয়ে প্রধান ফটকের কাছে রাখা হয়। তাতে ছিটানো হয় জীবাণুনাশক। পরে সেখান থেকে যার যা প্রয়োজন, তা নিয়ে যান।
মাগুরছড়া পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, আমাদের পুঞ্জি ১৮ মার্চেই লগডাউন করেছি। এর দুইদিন আগে থেকেই সবাইকে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করতে সময় দেওয়া হয়েছে। কঠিন ভাবে আমরা লগডাউন মানছি। এখন পান বেচতে পারছি না, অর্থকষ্টে আছি। একই ভাবে ২৭ মার্চ থেকে লাউয়াছড়া পুঞ্জিও লকডাউনে আছে। এখানে ৩০টি পরিবারের প্রায় ২০০ লোক বসবাস করেন।
পুঞ্জির বাসিন্দা গৃহিণী জুনলি বলেন, আগে পাইকারেরা পান কেনার জন্য আসতেন। এখন তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। দেশের অবস্থা ভালো হলেই তারা ব্যবসা করতে পারবেন।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সাজু মারছিয়াং বলেন, দরিদ্র পরিবারগুলোর যাতে কোন সমস্যা না হয় ,স্থানীয় প্রশাসন থেকে সে সব পরিবারকে খাদ্য সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সব পুঞ্জির মান্ত্রীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। যতদিন প্রয়োজন পুঞ্জিগুলো লগডাউন রাখা হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গির্জাও বন্ধ রয়েছে।