সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ অপরাহ্ন
মোঃ শহিদুল ইসলাম, নওগাঁ প্রতিনিধি : দেশের অন্যতম খাদ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁ। বর্তমানে নওগাঁর বাজারগুলোতে মোটা জাতের চাল নাই প্রায় একমাস যাবত। ফলে চিকন চালের দিকে ঝুঁকেছেন ভোক্তারা। একদিকে মোটা জাতের চাল না থাকা এবং অপরদিকে আবহাওয়া বিপর্যয়। এদু’য়ে গত ১৫ দিন পূর্বে নওগাঁর বাজারে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে প্রায় ২০০-২৫০ টাকা। আর প্রতি কেজিতে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৪-৫ টাকা। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষরা। বাজার নিয়ন্ত্রনে দ্রুত প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানোর দাবী করেছেন সচেতনরা।
চালকল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের আমদানী কমে যাওয়ায় চালের উৎপাদন কমেছে। কারণ চালের বাজার মূলত নিয়ন্ত্রন করে ছোট মিলাররা। তারা বাজার থেকে ধান কিনে চাল করে বাজারে ছাড়ে। গত কয়েক দফায় বন্যার কারনে বাজারে ধানের সংকটে চালের বাজার উর্ধ্বমূখী। তবে কোথাও মজুদ থাকলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করলে সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে।
নওগাঁ পৌর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত ১৫ দিনে কাটারি লাল জাতের চালের বর্তমান বাজার ৪২ টাকা পূর্বে ছিল ৩৮-৩৯ টাকা, সাদা ৪৬ টাকা, পূর্বে ছিল ৪২-৪৩ টাকা, জিরাশাইলের বর্তমান বাজার ৫০ টাকা, পূর্বে ছিল ৪৬-৪৭ টাকা, ব্রিআর-২৮ বর্তমান বাজার ৪৬ টাকা, পূর্বে ছিল ৪০-৪২ টাকা এবং পারিজা বর্তমান বাজার ৪০ টাকা এবং পূর্বে ৪৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজারে মিনিগেট/জিরাশাইল প্রতিমণ ধানের দাম ১ হাজার ২২০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা, কাটারি ১ হাজার ১৮০ থেকে ১২শ টাকা, পারিজা নতুন ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং ৫৬/৭৬ জাতের ধান ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বর্তমানে বাজরে প্রতিমণে ৫০-৭০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা নওগাঁ। প্রতি বছরে ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপান হয়। জেলার খাদ্যের চাহিদা প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। গত বোরো মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিল। এরমধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে চিকন জাতের ধানের আবাদ করা হয়।
প্রতি বছর এ মৌসুমে বাজারে চালের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও গত কয়েক দফায় এবার অস্বাভাবিক ভাবে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা বাজারে মোটা চালের সংকটে চিকন চালের দিকে ঝুঁকেছে ক্রেতারা। এতে করে নি¤œ আয়ের মানুষদের পক্ষে চাল কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দফায় বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ঘন ঘন বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকরা বাজারে ধান নিয়ে আসছেন না। ধান কিনতে না পারায় চালের উৎপাদন কমেছে।
পার-নওগাঁ মোহল্লার বাসিন্দা ফরমান আলী বলেন, প্রতিকেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা দাম বেড়েছে। আমরা মধ্যবিত্ত যারা আছি তাদের জন্য নাবিশ্বাস। চালের দাম বাড়ার কারণে আমাদের চাল কেনা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
আরজি-নওগাঁর গৃহবধু পলিরানী বলেন, আমরা গরীব মানুষ। স্বামী রিক্সা চালক। পরিবারের ৫জন সদস্য। স্বামীর উর্পাজন দিয়ে নিয়মিত চাল কিনে খেতে হয়। দাম যদিও বেশি, কিন্তু তারপর কষ্ট করে কিনতে হচ্ছে। যদি বাজারটা আর একটু কমে আসতে তাহলে আমাদের মতো সবারই সুবিধা হতো।
নওগাঁ পৌর খুচরা চাল ব্যবসায়ী সমিতি সাধারন সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার বলেন, বাজারে মোটা চাল নাই। এতে করে চিকন চালের দাম বেড়েছে। প্রতি বছর এ মৌসুমে নতুন ধানের চাল বাজারে আসার পূর্বে দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়। তবে বন্যার কারণে বাজারে ধানের সংকটে চালের উৎপাদন কম হচ্ছে বলে মনে করছেন।
নওগাঁ জেলা চাউলকল মালিক গ্রুপের সাধারন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, অতি বর্ষনের ফলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক এলাকায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যাওয়ায় তারা বাজারে ধান নিয়ে আসছেন না। ফলে বাজারে ধানের সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন ধানের দাম বেড়েছে অপরদিকে চালের উৎপাদন কমেছে। বাজারে চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি নীতিমালার বাহিরে যদি কোথাও অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ রাখা হয় তাহলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করলে সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে বলে মনে করছি।
নওগাঁ জেলা চাউলকল মালিক গ্রুপের সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম বলেন, চালকল চালানোর জন্য কিছু পরিমাণ ধান মজুদ রাখা হয়। ধান না থাকলে চালকল চালানো সম্ভব না। বাজারে ধানের আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ও বন্যা কমে গেলে ধান ও চালের বাজার কমে আসবে।