শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : শিক্ষক নিবন্ধনে সুযোগ পেয়েও চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না লাখো চাকরিপ্রার্থী। চরম হতাশায় দিন পার করছেন তারা। দেশে বতর্মানে ৫৭ হাজার ৩৬০টি পদ খালি রয়েছে সরকার নিবন্ধিত বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এসব শূন্য পদ পূরণে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের গণবিজ্ঞপ্তি বা নির্দেশনা প্রকাশ না হওয়ায় চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ হচ্ছে না । কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার কারণে এতোদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে থাকলেও এখন নতুন করে ব্যাচ জটিলতা সামনে এসেছে। চারটি ব্যাচের আলাদা মেধাতালিকা থাকায় এখন নিয়োগে তাদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে এ বিষয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে দু্রত নিয়োগ দিতে নিবন্ধিত শিক্ষকদের বিভিন্ন ফোরাম ইতিমধ্যে এনটিআরসিএতে স্মারকলিপি দিয়েছে।
ওদিকে ১৩তম নিবন্ধিত শিক্ষকদের একক নিয়োগ প্রদানের খবরে নিবন্ধিত প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য ও সমান অধিকার বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
নিবন্ধিত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একক কোনো ব্যাচকে নিয়োগ প্রদানে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত বা যৌক্তিক হবে না। তাছাড়া কোনো ব্যাচের ছোট একটি অংশকে বিশেষ সুবিধা দিতে গেলে বিরাট একটা অংশকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে।
তারা জানান, নিবন্ধিত সবাই সমানভাবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং মেধাতালিকায় স্থান নিশ্চিত করেছে। তারা দাবি করেন, সবাইকে তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানে সুবিধা দিতে হবে।
১০ম ব্যাচের একজন নিবন্ধনধারী বলেন, কোনো ব্যাচের একক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত একেবারেই মেনে নেয়া যাবে না। একই প্রতিষ্ঠানে দুই নিয়মে নিয়োগ কখনই মেনে নেবো না আমরা। যদি দিতেই হয় সবাইকে বিশেষ সুবিধা দিতে হবে তা না হলে বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হতে হবে।
১৪তম ব্যাচের একজন নিবন্ধনধারী বলেন, ১৩তম ও ১৪তম পরিপত্র একই তাহলে আমাদেরকেও একক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হোক। আমার আকুল আবেদন জাতীয় মেধাতালিকার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়াই হবে সবচেয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
১৫তম নিবন্ধ আর ১৫তমদের যেভাবে করানো হয়েছে তা অবিশ্বাস্য, এত কষ্ট করে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েও নিয়োগ বঞ্চিত হবো তা কখনই মেনে নেয়া যায়। এমনটাই বলেন, ১৫তম কলেজ উত্তীর্ণ একজন নিবন্ধনধারী। ১৫তম-তে সুপারিশপ্রাপ্ত সান্ত আলী বলেন, শিক্ষক নিয়োগে সমঅধিকার নিশ্চিত পূর্বক জাতীয় মেধাতালিকায় মূল্যায়ন করে দ্রুত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।
এনটিআরসিএ থেকে জানা যায়, দু’টি সিদ্ধান্ত ভিন্ন হওয়ায় সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের তালিকা চূড়ান্ত হলেও নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নতুন করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনটিআরসিএ।
আরো জানা যায়, ১ম থেকে ১৫তম নিবন্ধিত মেধাতালিকায় ছয় লাখ ৩৪ হাজার ১২৭ জন রয়েছেন। এর মধ্যে এক লাখ ৮২১ জনের বয়স ৩৫ বছর পার হওয়ায় তারা নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন না। ৩৫ বছরের মধ্যে আরো দুই লাখ ৮৮ হাজার নিবন্ধিত প্রার্থী রয়েছেন। তবে তাদের অনেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগ পেয়েছেন। মামলা জটিলতায় অনেকের বয়স পার হলেও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে প্রার্থীদের মধ্যে বড় একটি সংখ্যা নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছেন।
১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রস্তুত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে এ ফল প্রকাশ করা হবে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন ইতিমধ্যে ১২ লাখ চাকরি প্রত্যাশী। বয়স ৩৫ পেরিয়ে যেতে বসা দু’জন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৩তমদের জটিলতার জন্য আমাদের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে চলেছে।
৩য় গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরাম দাবি করে বলে, নিবন্ধিত বিশাল জনগোষ্ঠীর হুমকি ও এনটিআরসিএ’র জটিলতা বৃদ্ধিসহ তাদের কার্যক্রম স্থবির করতে এই কালো সিদ্ধান্তই যথেষ্ট হবে।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন বলেন, এটা আমাদের হাতে নেই। ১৩তম ব্যাচ একক নিয়োগের আবেদন করে। কিন্তু ১৩তম ব্যাচ যদি একক নিয়োগ পায় তবে অন্যদের দোষটা কোথায়? আদালত বলেছেন, তাদের মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। এখন আমরা কোনটা অনুসরণ করবো? এরপর আমরা নিজস্ব আইনজীবী দিয়ে একটা আর্জি তৈরি করছি। আমরা জানি না বিজ্ঞ আদালত কোনটা অনুসরণ করতে বলবেন। কিন্তু ১৩’র নিয়োগটা যদি হয় তবে তো অন্যরাও আবেদন করবে। এতে সবারটাই আটকে যেতে পারে। আবার ১৭তমের জন্য প্রায় ১২ লাখ আবেদন নিলাম। পরিস্থিতি ভালো হলে এটাও নিতে হবে। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সবকিছু নির্ভর করছে আদালতের আদেশের ওপর।