শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : করোনা মহামারী থেকে নিরাপদে থাকতে মাস্ক ব্যবহারে গুরুত্বারোপ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পাশাপাশি এ বিষয়ে বেশকিছু নতুন নির্দেশনাও দিয়েছে সংস্থাটি। এতে বলা হয়েছে, মাস্ক পরা বা খোলার সময় অবশ্যই হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। কথা বলার সময় বা অন্য কোনো কারণে মাস্ক কখনও চিবুকের কাছে নামিয়ে রাখা যাবে না। পুনরায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাস্কটি পলিব্যাগে সংরক্ষণ করতে হবে। নতুন নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ৫ বছরের নিচের শিশুদের মাস্ক পরাতে হবে না।
৪ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহার সম্পর্কিত নতুন এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে, যতদিন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেয়া না যায়, ততদিন পর্যন্ত সুস্থ থাকতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যবহার বিধি ভালোভাবে মানতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, যেসব জায়গায় ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করছে, সেখানে থাকা অবস্থায় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। যেসব স্থানে অন্যের কাছ থেকে কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্বে থাকা সম্ভব হবে না এবং দুর্বল বা অজানা বায়ু চলাচল সেখানে মাস্ক পরতে হবে।
সংস্থাটি জানায়, মাস্ক অন্যের সঙ্গে ভাগ করে ব্যবহার করা যাবে না। বাহু বা কব্জির পাশে প্যাঁচিয়ে বা ঝুলিয়ে মাস্ক সংরক্ষণ করা যাবে না। শুধু পরিষ্কার প্লাস্টিকের ব্যাগে সংরক্ষণ করা যাবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, মাস্ক পরার পরও অন্যের থেকে যতটা সম্ভব শারীরিক দূরত্ব রাখতে হবে। কারণ মাস্ক পরার অর্থ এই নয় যে, মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা যাবে। এছাড়া ব্যস্ত শপিং সেন্টার, ধর্মীয় ভবন, রেস্তোরাঁ, স্কুল এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যদি অন্যের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা না যায় তাহলে মুখোশ পরে নেয়া উচিত।
এতে আরও বলা হয়, যদি বাড়িতে কোনো অতিথি আসেন যিনি পরিবারের সদস্য নন, তার সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক যদি কাটা, ফাটা বা ছেঁড়া হয় তাহলে সেটি ব্যবহার করা যাবে না। মাথা বা কানের পেছনে যে স্ট্রাপগুলো রয়েছে সেগুলো অবশ্যই যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। যাতে মুখের পাশের কোনো স্থান ফাঁকা না থাকে। মাস্ক পরা অবস্থায় তা স্পর্শ না করাই ভালো। স্পর্শ করতে হলে অবশ্যই হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। মাস্ক যদি নোংরা হয়ে যায় বা ভিজে যায় তাহলে এটি পরিবর্তন করতে হবে।
মাস্ক খোলার ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ আগে হাত পরিষ্কার করতে হবে। মাস্কের সামনের অংশটি স্পর্শ না করে কানের লুপগুলো ধরে খুলতে হবে। মাস্কটি যদি ময়লা বা ভেজা না থাকে এবং এটিকে পুনরায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা থাকে তাহলে অবশ্যই একটি পরিষ্কার প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে রাখতে হবে। ব্যবহারের আগে অবশ্যই ইলাস্টিক লুপগুলো ধরে বের করতে হবে। পুনরায় ব্যবহারের জন্য অবশ্যই প্রতিদিন মাস্কটি পরিষ্কার করতে হবে।
কাপড়ের মাস্ক পরিষ্কার করার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, দিনে কমপক্ষে একবার সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে গরম পানিতে (কমপক্ষে ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড/১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ধুয়ে ফেলতে হবে। অথবা ১ মিনিটের জন্য মাস্কটি ০ দশমিক ১ শতাংশ ক্লোরিনে ভিজিয়ে রেখে স্বাভাবিক পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মাস্কের ওপর ক্লোরিনের কোনো বিষাক্ত অবশিষ্টাংশ যেন না থাকে।
এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক নিরাপত্তার জন্য মাস্ক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। মাস্ককে বলা হয় বিকল্প ভ্যাকসিন। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে মাস্ক পরতে হবে।
শিশুদের মাস্ক পরা নিয়ে নতুন নির্দেশনা : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ৫ বছরের নিচের শিশুদের মাস্ক পরাতে হবে না। আর ৬ থেকে ১১ বছরের শিশুরা করোনা সংক্রমণ নিয়ে খুব বেশি জানে না। মাস্কের ব্যবহার সম্পর্কেও তাদের ধারণা নেই। তাই বড়দের উপস্থিতি ছাড়া এদেরও মাস্ক পরানো উচিত হবে না। তবে ১২ বছরের ওপরের বাচ্চাদের বড়দের মতোই মাস্ক পরার নিয়ম ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের নিয়ম মেনে চলা উচিত। এর আগে, ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে বা নিজে থেকে মাস্ক খুলতে পারে না, তাদের মাস্ক পরা উচিত নয়। ৫ বছরের নিচের শিশুদের মাস্ক পরানোর প্রয়োজন নেই, বরং মাস্ক পরলে তাদের আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে। কারণ তারা মাস্কের সঠিক ব্যবহার জানে না। তাছাড়া শিশুদের করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকিও অনেক কম।