শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

জলমহাল দখলের চেষ্টা এমপির ভাইয়ের, জেলেকে গলা কেটে হত্যা

নিহত শ্যামাচরণ বর্মন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুনই জলমহালে শ্যামাচরণ বর্মণ (৬৫) নামে এক জেলেকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। তার মেয়ের দাবি, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের ছোট ভাই ও ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন রোকন এ ঘটনায় জড়িত।

মূলত উপজেলার সুনই জলমহালে দখল নিয়ে বিবাদের জেরে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন। দুপক্ষের বিবাদের জেরে জলমহালে জেলেদের খোলা ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। সামগ্রিক ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

নিহত শ্যামাচরণ বর্মণ উপজেলার পাইকুরহাটি ইউনিয়নের সুনই গ্রামের বাসিন্দা। তার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এসব তথ্য জানান, ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান।

সহকারি পুলিশ সুপার আরও জানান, গতকালকের ঘটনায় এখনও মামলা দায়ের করা না হলেও ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধর্মপাশার জলমহাল সুনই নিয়ে দুই মৎস্যজীবী সমিতির বিবাদ চলছে। জলমহালের খাজনা পরিশোধ করে দুই পক্ষই মহালের মালিকানা দাবি করে আসছে। একপক্ষ সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করে।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, ইজারা নিয়ে দুই মৎস্যজীবী সমিতির নেতা চন্দন বর্মণ এবং সুবীর বর্মণ মহালের খাজনা জমা দিয়ে রশিদ দেখিয়ে জলমহালের দখল নিতে চাইলেও জেলা প্রশাসন কাউকেই দখল বুঝিয়ে দেয়নি। দুপক্ষই মহালে মাছ ধরার জন্য স্থাপনা (খলা) নির্মাণ করেছে।
চন্দন বর্মণের পক্ষ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পায়। জলমহালে অন্য পক্ষের লোকজনও দখলে ছিল। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওখানকার স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিলেও তিনি সেটি পালন করেননি।

সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার আরও জানান, বিষয়টি বার বার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু এর মধ্যেই সুবীর বর্মণের লোকজন চন্দন বর্মণের লোকজনের উপর হামলা করে। এ সময় চন্দনের বাবা শ্যামাচরণ বর্মণকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। হামলাকারীদের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন রোকন উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

শ্যামাচরণ বর্মণের ভাগ্নে বিশ্বজিৎ বর্মণ বলেন, ‘এমপির ভাই (রোকন) ও তার লোকজনকে নিয়ে জলমহাল দখলের চেষ্টা করেন। তারা জেলেদের খোলা ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। লুটপাটও করেন। তাদের লোকজনই গলা কেটে মামাকে হত্যা করেন।’

শ্যামাচরণ বর্মণের মেয়ে রূপালি বর্মণ দাবি করে বলেন, ‘এমপির ভাইয়ের লোকজনই আমার বাবাকে গলা কেটে হত্যা করেছেন।’

এ ঘটনার বিষে কথা বলতে ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন রোকনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাকে কয়েকবার কলও দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি তার মুঠোফোন বন্ধ করে রেখেছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ইউএনও মো. মুনতাসির হাসান জানান, পূর্ব বিরোধের জের ধরে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ফের সংঘর্ষের ঘটনা যাতে না ঘটে, জলমহালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com