মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : পশ্চিমবাংলার ফুরফুরা শরীফে জন্মগ্রহণ করা চতুর্থ প্রজন্মের সন্তান আব্বাস সিদ্দিকী। দাদা হুজুর মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী রহ. এর সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে খুব অল্পসময়ের মধ্যে সুপরিচিত এবং সর্বাধিক সমাদৃত হয়ে উঠেছেন।
২০২০ সালে করোনার লকডাউন এর পরে দু-একটি ওয়াজ মাহফিলে তিনি সব ধরনের শোষিত-বঞ্চিত মানুষদের পক্ষে কথা বলার পাশাপাশি ক্ষুধার্ত বঞ্চিত মানুষের মাঝে সাধ্যানুযায়ী সমাজসেবামূলক কাজ শুরু করেন। তার বক্তব্য এবং সমাজসেবা থেকে বাদ যায়নি সবচেয়ে অবহেলিত মথুয়া, দলিত আদিবাসী, এবং হিন্দু সমাজের ভাই-বোনরাও।
অনেকটা হায়দ্রাবাদের সিংহ শার্দুল, ভারতীয় লোকসভার পার্লামেন্টেরিয়ান, ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসির স্টাইলে দেওয়া তার বক্তব্যে খেটে খাওয়া,অভাবী,দরিদ্র, অবহেলিত মানুষকে নাড়া দিয়ে ওঠে। ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চেই তিনি নিপীড়িত অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে নতুন দল এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করে দেন।
তাকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া সাধারণ মানুষের একটা স্লোগান আমাকেও আন্দোলিত করে, ‘শিরায় শিরায় রক্ত ভাইজানের ভক্ত’, ‘দেখেছি তৃণমূল বিজেপির পদ্মফুল, এবার যাবে ভাইজানের দল’
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রোববার ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ ময়দান, ঐতিহাসিক ব্রিগেড মঞ্চে উঠার সময় ‘আব্বাস সিদ্দিকী ভাইজান’ পুরো ময়দান কাঁপিয়ে যেভাবে মঞ্চে আসলেন এবং ভাষণ দিলেন তা ভারতবাসী এবং মিডিয়াপাড়ায় অনেক অনেক দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
পশ্চিমবাংলার অবহেলিত হাই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করা আব্বাস সিদ্দিকী বামফ্রন্টের প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান, পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ, মোহাম্মদ সেলিম এবং সর্বভারতীয় বামফ্রন্ট নেতা বিমান বসু ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভারতীয় পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় মুখপাত্র অধীর চৌধুরীকে দেখিয়ে দিলেন! মাত্র ১ মাস আগে ঘরে তোলা ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট তোমাদের চাইতে কোন অংশে কম নয়!
অবাক করা বিষয় হচ্ছে আব্বাস সিদ্দিকী “ভাইজান” যতক্ষণ মঞ্চে ছিলেন ততক্ষণ ব্রিগেড ছিল কানায় কানায় পূর্ণ আর যখনি তিনি নেমে আসলেন ময়দান হয়ে গেল জনশূন্য। জনপ্রিয়তা ও সম্মান সম্পূর্ণ আল্লাহ প্রদত্ত দান, কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যক্তি জনপ্রিয়তা আর ভোটের রাজনীতি এক জিনিস নয়।
পশ্চিমবাংলায় আমার যাতায়াত সেই ছোটবেলা থেকে। এখানকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সব সময় একজনকে খুঁজে বেড়ান যিনি শুধু তাদের কথা বলবেন। আব্বাস সিদ্দিকী বিষয়টি উপলব্ধি করার পর তা ষোল কলায় পূর্ণ করতে পারুক বা না পারুক সকল ঝড় তুফান মোকাবেলা করে মাঠে নেমে গেলেন, পেয়ে গেলেন অবুঝ থেকে প্রবীণ সকলের জনমত ও ভালোবাসা।
সম্পূর্ণ অসংগঠিত অগোছালো একটি ফ্রন্টের জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আব্বাসের এই প্রচারণা এবং সংখ্যালঘু মুসলিম জাতিকে আলাদা করে নির্বাচনী কৌশল গ্রহণে সবচাইতে বেশি লাভবান হবে স্থানীয় ভারতীয় জনতা পার্টি তথা বিজেপি। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুসলিম সাপোর্টে পশ্চিমবাংলায় দুইবার ক্ষমতায় আসা ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
বিহারে আসাদুদ্দিন ওয়াইসি সাহেবের এআইএমআইএম দল নির্বাচন করার কারণে লালুপ্রসাদের ছেলে বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু মুসলিমদের ভোট তেমন না পাওয়ায় পরাজিত এবং মধ্যখান দিয়ে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির পাঁচটি বিধায়ক নির্বাচিত হলেও বিহার বিধানসভায় আবারো ক্ষমতায় আসলেন ভারতীয় জনতা পার্টির ফ্রন্ট প্রধান নিতিশ কুমার।
আসাদুদ্দিন ওয়াইসি পৈত্রিক সূত্রে রাজনীতিবিদ আর আব্বাস সিদ্দিকী পৈত্রিক সূত্রে পীর আউলিয়ার সন্তান। ভোটের বাজারে হাটে-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত-অপরিচিতদের মুখোমুখি হয়ে যতটুকু জানতে এবং বুঝতে পারলাম! “আব্বাস সিদ্দিকী সাহেব” প্রচুর পরিমাণ ভোট কাটবেন কিন্তু কোন একটি বিধানসভায় নির্বাচিত হতে পারবেন কি-না কিংবা হতে দেওয়া হবে কিনা! যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
হ্যাঁ যদি আব্বাস সিদ্দিকী পশ্চিমবাংলার আরেক সিংহ শার্দুল মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী সাহেবের মত পদ-পদবিতে না জড়িয়ে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে মাঠে ময়দানে লেগে থাকেন! তাহলে অবশ্যই অবশ্যই সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তিনি একজন যুগান্তকারী ও সম্মানজনক রাজনীতিবিদ হিসেবে খুব অল্প দিনেই অনেক দূরে চলে যাবেন।
আব্বাস সিদ্দিকী ভাইজানের জন্য সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে স্থানীয় উলামায়ে দেওবন্দ, পীর মাশায়েখ কিংবা তাবলীগের পক্ষ থেকে অদ্যবধি কোনরকম বিরোধিতা উঠাতো দূরের কথা কোনরকম প্রোপাগান্ডাও চোখে পড়েনি। জানি না হিন্দু অধ্যুষিত ভারতবর্ষে একজন আব্বাস সিদ্দিকী ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মত কতটা ধৈর্য সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন তা সময়ই বলে দিবে।