সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৪ অপরাহ্ন
বাহুবল ( হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: বাহুবলের লামাতাসি ইউনিয়নে ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীকে ধর্ষকের সাথে বিয়ের মধ্য দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপার পরিসমাপ্তি ঘটালেন কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও মাতব্বর। পক্ষকাল ধরে অনেক নাটকীয়তার পর কথিত বিয়ের মাধ্যমেই ধামাচাপা দেওয়া হলো আলোচিত এই ধর্ষণ ঘটনার। এর জন্য ধর্ষিতার সৎ ভাই ও ভগ্নিপতিকে ম্যানেজ করতে ধর্ষকের পরিবার থেকে দিতে হয়েছে মোটা অংকের টাকা। এনিয়ে এলাকায় চলছে তোলপাড়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১ টার দিকে শিবপাশা গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মতলিবের ১৩ বছরের কিশোরী কন্যা ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্রীকে কোর্ট ম্যারেজের কথা বলে বাড়ি থেকে বের করে নেয় পাশ্ববর্তী মুশফিকখলা গ্রামের আজিজুর রহমান বাচ্চুর লম্পট পুত্র শাকিল মিয়া (২০)। কিন্তু ছাত্রীকে নিয়ে হবিগঞ্জ না গিয়ে পথিমধ্যে কটিয়াদি বাজারে শাকিল তার বন্ধু টমটম গাড়ির সিরিয়াল ম্যান শিবপাশা গ্রামের রঙ্গাই মিয়ার পুত্র কয়েছের ভাড়া বাসায় উঠে। আর ওই বাসায় স্কুল ছাত্রী জোসনাকে আটকে রেখে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।
ধর্ষিতার পিতা আব্দুল মতলিব জানান, তার কন্যাকে বাড়িতে না পেয়ে আত্মীয় সহ বিভিন্ন স্থানে খোজাখুজি করতে থাকেন। এরই ভিতর পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারী বিকেল ৪টার দিকে তার কিশোরী কন্যা রক্তাক্ত অবস্থায় একা একা বাড়ি ফিরে এবং স্বজনদের বিস্তারিত খুলে বলে। তাৎক্ষণিক ওইদিন ধর্ষিতার সৎ বোনের জামাই সাবেক ইউপি সদস্য ধন মিয়া, সৎ ভাই মস্তুফা তাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে ৪ দিন চিকিৎসা গ্রহণের পর ধর্ষিতাকে ২ মার্চ বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
অপরদিকে, ধর্ষিতাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় শাকিল। সেখানে মোবাইল ফোন ও মানি ব্যাগসহ কাগজপত্র নিজের জিম্মায় নেয় শাকিলের বন্ধু কয়েছ। এ ব্যাপারে শাকিলের ভাই হামিদ জানান, কয়েছ মিয়া মালামাল আটকে রাখার কথা বলে জানায় তার কাছে ১০-১২ হাজার টাকা দিলে নাকি সে সমাধান করে দিতে পারবে। এছাড়া ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর পরই ধর্ষককে রক্ষায় তৎপরতা শুরু করেন সাবেক ইউপি সদস্য ধন মিয়া, আশিকুর রহমান, মাসুক মিয়া সহ কয়েক মাতব্বর। এমনকি কয়েছের কাছ থেকে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোনও জব্দ করেন তারা।
কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকার পর শাকিল প্রকাশ্যে আসে এবং ১১ মার্চ ওই ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেন।
এব্যাপারে, সাবেক ইউপি সদস্য আশিকুর রহমান জানান, ধর্ষিতার ভাই মস্তুফা ও ভগ্নিপতি ধন মিয়ার সহযোগিতায় বিয়ের মাধ্যমে ঘটনা মিমাংসা করা হয়েছে। তবে মাসুক মিয়া মেম্বার ও ধন মিয়ার মোবাইল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী টেনু বলেন, কিছুদিন আগে মেয়ের পক্ষ তার কাছে গিয়েছিল। তবে বিষয়টি জঠিল হওয়ায় আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। পরে কি হয়েছে আর কিছু তিনি অবগত নন বলে জানান।
বিয়ের সাথে জড়িত কাইয়ুম নামের জনৈক ব্যক্তি বলেন, থানা পুলিশকে জানিয়েই বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।
লামাতাশি ইউনিয়ন বিট অফিসার এসআই ইদ্রিস জানান, এ ব্যাপারে কেউ থানা পুলিশকে কিছু জানায়নি। এনিয়ে এলাকায় চলছে তোলপাড়।