সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

মশার কামড়ে টেকা দায়!

তরফ নিউজ ডেস্ক : আমি আমার বাসায় কোনোদিন মশারি টাঙিয়েছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে।

মশারির মধ্যেও মশার কামড় খেতে হচ্ছে। এবার বর্ষা আসার আগেই মশার কামড়ে টেকা দায় হয়ে গেছে। ’

ক্ষোভমিশ্রিত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আব্দুল হালিম।

শনিবার (১৩ মার্চ) সকালে সেগুনবাগিচার আগোরার সামনে কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে।

আব্দুল হালিমের সঙ্গে আলাপনের সময় যোগ দেন একই এলাকার আরেক বাসিন্দা নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, সব সময় বর্ষার সময় মশা বাড়ে। এবার কোনো শিডিউলই মানছে না। সকাল নেই, বিকেল নেই, রাত নেই- সব সময় কামড়াছে। এটা এখন বড় টেনশনের বিষয়। কারণ বাসায় বাচ্চা আছে।

উপরোক্ত দুই ঢাকাবাসীর মতোই অবস্থা সমগ্র মহানগরে। শীত বিদায়ের পরপরই রাজধানীতে গত বছরের তুলনায় বেড়েছে মশা। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসার সম্প্রতি একটি গবেষণায় বলেছেন, গেলো বছরের তুলনায় এ বছর মশার ঘনত্ব বেড়েছে চারগুণ।

রাজধানীর ছয়টি এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এ গবেষণা করেন তিনি।

এ বিষয়ে অধ্যাপক কবিরুল বাসার বলেন, জানুয়ারির এক তারিখ থেকে ঢাকাকে আমরা মোট ছয়টা ভাগে ভাগ করে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যাতে কিউলেক্স মশা এবং এডিস মশা দুটোরই সন্ধান পাওয়া গেছে। আর ঢাকায় এডিস মশার যে ঘনত্বের মাত্রা পেয়েছি, তা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চার গুণ বেশি।

তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু রোগীর যে হিসাব পাওয়া যাচ্ছে, সে হিসাবেও দেখা যাচ্ছে গত বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যে সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ছিল, গত বছরের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। যেহেতু গত বছরের তুলনায় এ বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে মশার ঘনত্ব এবং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি, তাই একজন গবেষক হিসেবে আমি ধারণা করছি এবছর যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে।

মশার প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা ও সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন রাজধানীবাসী।

তাদের বক্তব্য, মশক নিধনে মাঝে মধ্যে ওষুধ ছিটানো ছাড়া সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম তারা দেখছেন না।

মিরপুর-১৩ নম্বরের বাসিন্দা আশিক বিল্লাহ বলেন, গেলো বছরের শুরুতে ‘গণভবনে মশা গান শোনাচ্ছে’ এমন কথা বলে প্রধানমন্ত্রী সর্তক করার পর বেশ কয়েকমাস মশা একেবারেই ছিল না। কয়েকমাস শান্তির পর আবারও শুরু হয় মশার পুরনো উৎপাত। এখনকার পরিস্থিতি ভয়াবহ।

মিরপুর-১০ নম্বরের আরেক বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, মশা এত বেশি বেড়েছে যে কয়েল, স্প্রে কোনোকিছুতেই কাজ করছে না। ঝাঁকে ঝাঁকে মশা হামলে পড়ে।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকজনকে মাঝে মধ্যে ধোঁয়া ছড়িয়ে যেতে দেখি। তবে সেগুলো আসলে মশার ওষুধ কিনা সন্দেহ আছে। কারণ মশা তো কমে না।

তবে এ বিষয়ে দুই সিটি করপোরেশনের বক্তব্য ভিন্ন। তাদের মন্তব্য, তারা মশা নিধনে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, কিউলেক্স মশার বংশবিস্তার রোধে লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে, ফগিংও চলছে। মশা নিয়ন্ত্রণে চতুর্থ প্রজন্মের নোভালিউরন ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত মশক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ  বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই আমরা মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ড এডিস মশার ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচনা করেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিবেদন হাতে আসার পরদিন থেকেই আমরা এসব ওয়ার্ডে মশা নিধনে স্পেশাল ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। এছাড়া অন্য ৭৫টি ওয়ার্ডে আমাদের রেগুলার রুটিন ওয়ার্ক করা হচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com