শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

তরফ নিউজ ডেস্ক: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, বিশেষভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৩ ফুট নিরাপদ দূরত্ব থেকে অবস্থানের নির্দেশনা থাকলেও কেন্দ্রগুলোর সামনে দেখা গেছে ভিড়। পরীক্ষার্থী অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। কেন্দ্রগুলোর প্রবেশমুখে স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি।

করোনাভাইরাসের কারণে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা পেছানো হয়। কিন্তু যখন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসছেন তখন দেশে করোনা শনাক্তের পরিমাণ সর্বোচ্চ। স্বাস্থবিধি মানতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষভাবে নজর দেয়ার কথা বলা হলেও কেন্দ্রে তার দেখা পাওয়া যায়নি।

কেন্দ্রের বাইরে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে পরীক্ষার দিতে প্রবেশ করেছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছিলেন অভিভাবকরাও। ফলে দূরত্ব মানার কোনো বালাই ছিল না এ সময়।

ঢাকাসহ সারা দেশে ৫৫টি কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল ১০টা শুরু হচ্ছে পরীক্ষা এক ঘণ্টার এই ভর্তিযুদ্ধ। মোট ১ লাখ ২২ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন তাতে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সকাল ৮টার মধ্যে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ৯টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রধান ফটক বন্ধ হয়ে যাবে। সাড়ে ৯টার পর কোনো শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, বিশেষভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৩ ফুট নিরাপদ দূরত্ব থেকে অবস্থানের নির্দেশনা থাকলেও কেন্দ্রগুলোর সামনে দেখা গেছে ভিড়।

পরীক্ষার্থী অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। কেন্দ্রগুলোর প্রবেশমুখে স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি।

রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা কলেজ, টিচার ট্রেনিং কলেজ ঘুরে এমনটায় দেখা গেছে।

দেখা গেছে, পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে অথবা স্যানিটাইজ করতে হবে বলে নির্দেশনা দেয়া হলেও এমন কোনো ব্যবস্থা রাখেনি কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া কেন্দ্রের আশপাশে গাড়ি রাখা যাবে না নির্দশনা মানা হয়নি। কলাভবনে সামনে রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গাড়ি। অভিভাবকরা কেন্দ্রের কাছে অবস্থান করতে পারবেন না, ছিল এমন নির্দেশনা। বাস্তবে তার মিল পাওয়া যায়নি। প্রায় সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে এসেছেন অভিভাবক।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ছিটেফোঁটাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের পরীক্ষাকেন্দ্রে না দেখে হতাশ আর ক্ষুব্ধ হয়েছেন ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস।

তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও কেউই মানছেন না।’

একদিকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়, অন্যদিকে নিজের স্বপ্নপূরণ আরা বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করা। সবমিলিয়ে, এই ঝুঁকির মধ্যেও পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে তাকে।

পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের আগে এভাবেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ভর্তিচ্ছুদের। ছবিটি রাজধানীর তিতুমীর কলেজের সামনে থেকে তোলা।

রাজধানীর রামপুরা বাসিন্দা হাসেম আলী মেয়েকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে এসেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে দেশের সব পরীক্ষা স্থগিত, কিন্তু কেন মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে জানি না। কাউকেই তেমন স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যাচ্ছে না।’

শিক্ষার্থী অনেকের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে তেমন কোনো সতর্ককর্তা দেখা যায়নি। অনেকেই জটলা পাকিয়ে গল্পে মজেছেন। কেউ বা আড্ডা দিচ্ছেন মাস্ক না পরেই।

পরীক্ষার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকা আটটা থেকে এই যানজট ছিল। অনেকে উপায় না দেখে রিকশা, বাস, নিজের গাড়ি ছেড়ে পায়ে হেঁটে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছান। তবে হলে প্রবেশ করতে গিয়ে ধরতে হয়েছে দীর্ঘ লাইন। সেখানেও গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ানোয় মানেননি দূরত্ব।

এ বছর ৩৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ৪ হাজার ৩৫০টি আসনের জন্য পরীক্ষা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকাসহ ১৫টি শহরের মোট ১৯টি মেডিকেল কলেজের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই ভর্তি পরীক্ষা। এর মধ্যে ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজের অধীনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সংক্রমণের হার বর্তমানের অর্ধেক থাকাকালেই ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরীক্ষা। তবে

সংক্রমণ আর মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার পরও এবার লকডাউন বা সাধারণ ছুটির মতো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। বরং জনসমাগম এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ ১৮ দফা নির্দেশনা এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন কেন্দ্রটিও দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।

স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো সার্বিক চেষ্টা করেছি। দেখেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়া তো খুব কঠিন।’

কেন্দ্রে অভিভাবক প্রবেশ নিষেধ থাকলেও কেন প্রবেশ করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ‘আমরা অভিভাবকদের নিরুৎসাহিত করেছি, কিন্তু তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই ঢুকছেন।’

প্রতিটা কেন্দ্রে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার কথা ছিল নির্দেশনায় তবে সেটা কেন রাখা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে আসছে, আর এত শিক্ষার্থীর সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা অনেক কষ্টসাধ্য।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন ভর্তিপরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

সংক্রমিতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ আশঙ্কা করে থাকেন যে তার মাঝে করোনা উপসর্গ আছে অথবা কারও মাঝে সংক্রমণ থাকে, তবে আমরা তাদের আলাদাভাবে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নেব।’

এ জন্য প্রথমবারের মতো প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে আইসোলেশন কক্ষের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা পরিমাপ করে সবাইকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। আশা করছি সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। সবাই যার যার প্রস্তুতি নিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com