বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : ‘পর্তুগালকে হারাতে আক্রমণভাগকে হতে হবে ধারাল’-কোচের ডাকে সাড়া দিলেন মুলার-হাভার্টজরা। প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে আক্রমণাত্মক ফুটবলে ছড়ি ঘোরালো জার্মানি। সঙ্গে মিলল প্রতিপক্ষের ‘উপহার’ দুটি আত্মঘাতী গোল। ঘটনাবহুল ম্যাচে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অসাধারণ এক জয় পেল জার্মানি।
মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শনিবার ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচে ৪-২ গোলে শিরোপাধারীদের হারিয়েছে তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা। আসরে জার্মানির এটি প্রথম জয়। ফ্রান্সের কাছে ১-০ গোলে হেরে এবার যাত্রা শুরু করেছিল ইওয়াখিম লুভের দল।
পাল্টা আক্রমণে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর গোলে শুরুতে এগিয়ে যাওয়ার পর প্রয়োজন ছিল রক্ষণ জমাট রাখার। হলো উল্টো, চার মিনিটের মধ্যে নিজেরাই নিজেদের জালে বল পাঠাল দুবার। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে ভুল হয়নি জার্মানির। হাত থেকে ছুটে যাওয়া ম্যাচে পর্তুগাল শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করেছিল বটে, কিন্তু ব্যবধানটা ছিল অনেক বড়।
বল দখলেও অনেক এগিয়ে থাকা জার্মানি গোলের উদ্দেশে মোট ১২টি শট নেয়, যার সাতটি ছিল লক্ষ্যে। অবশ্য এর বাইরেও অনেক সময় ভীতি ছড়িয়েছে দলটি। বিপরীতে, প্রথমার্ধে ভোগা পর্তুগালের আট শটের মধ্যে কেবল ওই দুটিই লক্ষ্যে।
রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পর থেকেই নিজেদের খুঁজে ফিরছে জার্মানি। আসরের প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষেও তারা তেমন আশানুরূপ কিছুই করতে পারেনি। আত্মঘাতী গোলে হারের পর হয়তো জেগেছিল আবারও অভিযানের শুরুর পর্বেই বিদায়ের শঙ্কা।
ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ম্যাচের শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে জার্মানি। পঞ্চম মিনিটে দারুণ অ্যাক্রোবেটিক শটে জালে বলও পাঠিয়েছিলেন রবিন গোসেন্স। তবে আক্রমণের শুরুতে টমাস মুলারের হাতে বল লাগায় হয়নি গোল।
চাপ ধরে রেখেই খেলতে থাকে জার্মানি। ঘর সামলাতে ব্যস্ত পর্তুগাল নিজেদের সীমানা থেকে বেরই হতে পারছিল না। এর মাঝে খেলার ধারার বিপরীতে অসাধারণ এক প্রতি-আক্রমণে এগিয়ে যায় দলটি।
প্রতিপক্ষের কর্নার হেডে ক্লিয়ার করে ছুট দেন রোনালদো। তার হেড থেকেই বল পেয়ে এগিয়ে যান বের্নার্দো সিলভা, মাঝমাঠ থেকে বাড়ান দারুণ ক্রস। বুক দিয়ে বল নামিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন দিয়োগো জটা, সামনে একমাত্র বাধা গোলরক্ষক। কিন্তু ততক্ষণে পাশে চলে এসেছেন রোনালদো, নিশ্চিত হতে জটা ছোট্ট পাস দেন রোনালদোকে। অনায়াসে বাকি কাজটুকু সারেন তারকা ফরোয়ার্ড।
আগের ম্যাচে দুটি রেকর্ড গড়া রোনালদো এবার গড়লেন আরেক কীর্তি। মেজর টুর্নামেন্টে (বিশ্বকাপ ও ইউরো মিলে) ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় ১৯ গোল নিয়ে বসলেন শীর্ষে; জার্মানির সাবেক স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসার পাশে।
ইউরোয় তার গোল হলো রেকর্ড ১২টি। জাতীয় দলের হয়ে ১০৭, ইরানের আলি দাইয়ের রেকর্ড ছুঁতে প্রয়োজন আর দুটি।
দারুণ খেলতে থাকার মাঝে ওভাবে হঠাৎ পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা অনেক সময়ই বড় হয়ে দেখা দেয়। তবে এদিনের জার্মানি ছিল বিধ্বংসী রূপে। প্রতিপক্ষকে গুছিয়ে ওঠার সুযোগই দিচ্ছিল না তারা।
বিরতির আগে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশে ১০টি শট নেয় তারা, যার ছয়টি ছিল লক্ষ্যে এবং প্রায় সবগুলোই কঠিন চ্যালেঞ্জ জানায় গোলরক্ষককে। সবগুলো পরীক্ষায় দারুণ নৈপুণ্যে উতরে যান রুই পাত্রিসিও। তারপরও দুই আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় পর্তুগাল।
৩৫তম মিনিটে ডান দিক থেকে আসা ক্রস পেয়ে ভলিতে মাঝ বরাবর কাই হাভার্টজকে বাড়ান গোসেন্স। সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডার রুবেন দিয়াস বিপদমুক্ত করতে গিয়ে জালে ঠেলে দেন বল। এই গোলে পর্তুগিজ রক্ষণের অবস্থান ছিল দৃষ্টিকটু। ডি-বক্সে এক সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিন জন, বাঁ দিকে গোসেন্স ছিলেন ফাঁকায়।
চার মিনিট পর আবারও আত্মঘাতী পর্তুগাল; এবার গোলমুখে বল ক্লিয়ার করতে একটু বেশি সময় পেয়েছিলেন রাফায়েল গেররেরো। কিন্তু তিনিও নিজেদের জালেই নেন জোরালো শট!
শুরুর ভুল শুধরে বিরতির পর ঘুরে দাঁড়াবে কী, উল্টো ৯ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল খেয়ে আরও কোণঠাসা হয়ে যায় পর্তুগাল। ৫১তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে গোলমুখে ক্রস বাড়ান শুরু থেকে দারুণ খেলতে থাকা গোসেন্স। তাকে বাধা দিতে কিছুটা এগিয়ে ছিলেন গোলরক্ষক, সেই সুযোগে বিনা বাধায় বল জালে পাঠান চেলসি ফরোয়ার্ড হাভার্টজ। ৬০ তম মিনিটে ডান দিক থেকে জশুয়া কিমিচের ক্রসে লাফিয়ে হেডে স্কোরলাইন ৪-১ করেন গোসেন্স।
সাত মিনিট পর ব্যবধান কমায় পর্তুগাল। এই গোলেও অবদান আছে রোনালদোর। মৌতিনিয়োর ফ্রি কিকে বল সবাইকে ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, শেষ মুহূর্তে বাইলাইন থেকে দারুণভাবে বল গোলমুখে ফেরত পাঠান অধিনায়ক, ছুটে গিয়ে অনায়াসে জালে ঠেলে দেন জটা।