শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ): হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভার অভ্যন্তরীণ একাধিক সড়ক এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে সড়কগুলো দিয়ে চলাচলকারী হাজারো মানুষ দুর্গন্ধের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। নাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে স্থানগুলো অতিক্রম করতে হচ্ছে পথচারীদের। সড়কগুলোর প্রতিদিনের চিত্রই এখন ময়লার স্তুপের দুর্গন্ধে ভরা। ময়লার কারণে এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
পৌরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা, ১৯৯৭ সালের ৩১শে জুলাই গঠিত হয় নবীগঞ্জ পৌরসভা। শুরু থেকেই উপজেলা পরিষদের ভিতরে অস্থায়ী কক্ষে যাত্রা শুরু করে প্রায় ২ বছর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯৯ সালের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন অধ্যাপক ভোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী।
২০০৫ সালে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয় পৌরসভাটি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয় । প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভার আয়তন ৯ দশমিক ৭ কিলোমিটার। পৌর এলাকায় রয়েছে ৩টি হাটবাজার, ১টি কসাইখানা, ৪২ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ইট সলিং রাস্তা ৮.১ কিলোমিটার, কাঁচারাস্তা ৩.৯ কিলোমিটার। এছাড়াও পাঁকা ড্রেন রয়েছে ৬ কিলোমিটার, কাঁচা ড্রেন ৪.১ কিলোমিটার, সড়কবাতি আছে ৫ শত টি। বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৭৭। কিন্তু প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভায় গত প্রায় ৮ বছর থেকে শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থান করা হয়নি। এর কারণে প্রতিদিন পৌরসভার গাড়িতে ভরে ময়লা এনে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কের শান্তিপাড়া, নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কের ১ নম্বর ব্রিজের গোড়া ও খালে ফেলছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। পাশাপাশি নবীগঞ্জ নতুন বাজার মোড়, কাঁচা মালের ময়লা জমে থাকে,হিরামিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, ডাকবাংলো সড়কের ব্রিজের গোড়া, হাসপাতাল এলাকার অদূরের শাখা বরাকের খাল,পৌরসভার গ্রোথসেন্টার সংলগ্ন শাখাবরাক নদীর কিযদংশ ও রুদ্রগ্রাম সড়কের শিবপাশা ব্রিজের গোড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নবীগঞ্জ নতুন বাজার মোড় কাঁচা মালের ময়লা জমে থাকে , বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, ডাকবাংলো সড়কের ব্রিজের গোড়া, হাসপাতাল এলাকার অদূরের শাখা বরাকের খাল ও রুদ্রগ্রাম সড়কের শিবপাশা ব্রিজের গোড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। এসব এসব আবর্জনার পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। পথচারীরা চলাচল করছেন নাকে কাপড় ঢেকে। একই চিত্র দেখা গেছে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কের শান্তিপাড়া, নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কের ১ নম্বর ব্রিজ এলাকায়ও। তবে অভ্যন্তরীণ চারটি সড়ক আবাসিক এলাকায় হওয়ায় বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
শিবপাশা এলাকার বাসিন্দা দুলাল মিয়া এ প্রতিনিধিকে জানান , ‘আমাদের এলাকায় প্রায় কয়েক বছর ধরে ময়লা ফেলা হচ্ছে। আমাদের বাসা সড়কের কাছেই। আমরা বাসা-বাড়ি নিয়া থাকি এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা মোটেও ঠিক নয়। ১ নম্বর সমস্যা ময়লায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া। আগুন দিলে গন্ধ বেশি বেড়ে যায়। বাসা-বাড়িতে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। কাশি অয়। যাওয়া আসা করা যায় না গন্ধের জন্য।’
এই এলাকার সড়ক দিয়ে প্রতিদিন রিক্সা চালান সাফি মিয়া । তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন রাস্তা দিয়া পেসেঞ্জার নিয়া যাই। রাস্তার কান্দাত ময়লা থাকায় খারাপ গন্ধ বাইরয় (গন্ধ ছড়ায়)। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া কষ্টকর।’
শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ছমির মিয়া সাথে কথা হলে তিনি জানান, তিনি ওই এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘যত্রতত্র পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। মানুষ খুব ভোগান্তিতে আছে। শহরে বেশ কয়েকটি রাস্তা এখন ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে।
এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, স্থানীয় কাঁচা বাজারের প্রতিদিনের নষ্ট তরিতরকারি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্যসহ বিভিন্ন রকমের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এসব সড়কের পাশে, খালে। ডাস্টবিন না থাকায় স্থানীয় লোকজনও আবর্জনা ফেলেন সড়কের পাশে। এতে এ সড়কে চলাচলকারী মানুষ পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছেন। কয়েক বছর ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
হাসপাতাল এলাকায় কথা হয় এক সি,এন,জি চালক জসিম উদ্দিনের সাথে। কথা হলে তিনি বলেন, ‘গত ৮ বছর নবীগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। আর প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার প্রধান কাজ হচ্ছে উন্নয়নের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে পৌর এলাকাকে স্বাস্থ্যকর শহরে পরিণত করা। গুরুত্বপূর্ণ ২টি ও অভ্যন্তরীণ ৪টি সড়কের অবস্থা খুবই শোচনীয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিংয়ের জায়গার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।