সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: আবার পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা। এ নিয়ে ২৩ দিনে চারবার সেতুর পিলারে ধাক্কা খেল ফেরি। এর মধ্যে ১০ নম্বর পিলারে চার দিনের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো ধাক্কা লাগল। এসব ধাক্কায় পিলারের পাইল ক্যাপের (পানির অংশে) সিমেন্টের আস্তর উঠে গিয়ে সেখানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের এই স্বপ্নের সেতুর পিলারে প্রথমবার ধাক্কা লাগার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি সেতুর নিচ দিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধের সুপারিশ করেছিল। তারা বলেছে এ জন্য ঘাট স্থানান্তর করা দরকার। ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আরও তিনবার ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটল।
পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে বারবার ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনায় উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ। তারা ঘাট পিলারের সঙ্গে ফেরির ধাক্কা এড়াতে দুটি বিষয় সামনে রেখে সমাধানের কথা ভাবছে। একটা হলো ঘাট স্থানান্তর। আরেকটি হলো ফেরি চলাচলের সময় সেনাবাহিনীর সাহায্য নেওয়া।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তীব্র স্রোতের কারণে তৈরি ঘূর্ণির ফলে ফেরির নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে বারবার ধাক্কা লাগছে পিলারে। তাই সেতুর নিচ দিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধে ঘাট স্থানান্তরকে স্থায়ী সমাধান দেখছে তারা। সেটি না হওয়া পর্য ন্ত সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফেরি চলাচল করতে পারে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, সেতুতে হালকা আঘাত লাগলেও এটাকে হালকাভাবে দেখছেন না তারা। মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটের বাঁধ রক্ষায় শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দিতে ফেরিঘাট স্থানান্তরের বিষয়টি পরিকল্পনায় রয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা এড়াতে ঘাট স্থানান্তর করার কথা ভাবা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে জানান, পদ্মা সেতু এলাকা এড়ানোর জন্য বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। এই ঘাটটি শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দি ঘাটে নেওয়া হবে।
সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের অনেক কষ্ট ও স্বপ্নের সফল। আমরা কেউ এর ক্ষতি চাই না। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে আমরা একাধিক বৈঠক করেছি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ঘাট স্থানান্তরের পরিকল্পনাও আছে।’ ঘাট স্থানান্তর কত দিন সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার চাইলে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেও সম্ভব।’
ঘাট স্থানান্তরের আগে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা তাদের প্রস্তাব করেছি ফেরিতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য। ফেরিতে আমাদের লোকবল থাকে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী থাকলে তাদের দিকনির্দেশনা মতো আমাদের লোকজন ফেরি পরিচালনা করতে পারবে।’
শুক্রবার রাতে এ বিষয়ে একটি বৈঠক রয়েছে বলে জানান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম। বৈঠক শেষে একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও জানান তিনি। এদিকে চার দিনের ব্যবধানে গতকাল সেতুর ১০ নম্বর পিলারে কাকলি নামের ছোট একটি ফেরির ধাক্কা লাগে। সকাল পৌনে সাতটার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে।
ফেরির চালক বাদল হোসেন জানান, ফেরিটি পদ্মা সেতুর ১১-১২ পিলারের মধ্য দিয়ে আসার কথা। কিন্তু নদীর স্রোত ও বাতাসের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির একপাশে ফাটল ধরে।
এর আগে গত ২০ জুলাই প্রথম পদ্মা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রো রো ফেরি শাহ মখদুমের তলা ছিদ্র হয়ে যায়। দুই দিন পর ২৩ জুলাই মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহজালাল ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা দিলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর গত সোমবার সন্ধ্যায় রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ১০ নম্বর পিলারে সজোর ধাক্কা খায়। এসব ঘটনায় সেতুর পিলারের পানি লাগোয়া অংশে (পাইল ক্যাপ) পলেস্তারা উঠে গর্তের সৃষ্টি করেছে।