শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ অপরাহ্ন

ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই: প্রধানমন্ত্রী

তরফ নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভূমি মালিকরা এখন অফিসে না গিয়েও ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর দিতে পারেন। ট্যাক্স, খাজনা দিতে পারেন সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে চাই।

হাতের মুঠোয় ভূমি সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের ভূসি অফিসগুলোর যে জীর্ণ দশা, আমাদের আগে তো অনেকই ক্ষমতায় ছিল, কেন এগুলো সংস্কার করেনি। এটা বড় প্রশ্ন।

বুধবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি ভবন, উপজেলা ও ইউনিয়নের ভূমি অফিস ভবন, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি ডাটা ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। আমাদের দেশের অনেক সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা দেখা দেয়। মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে থাকে সব থেকে বেশি এই ভূমি নিয়েই। ভূমির সঙ্গে মানুষের একটা বন্ধন ও অধিকার রয়েছে। আবার অধিকার হারাও হতে হয় মানুষকে। দেশে একসময় জমিদার প্রথা ছিল। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের পরে তা বাতিল হয়।

স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর ভূমি সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরে কৃষকদের সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করেন বঙ্গবন্ধু। ভূমি কর মাফ করেন। সেই সাথে সাথে ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। তিনি আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যে একজন মানুষের নামে সর্বোচ্চ কতটুকু জমি থাকবে। ১০০ বিঘা পর্যন্ত একটা সিলিংও তিনি করে দিয়েছিলেন। তার একটা লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান নিশ্চিত করা। জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সারা পৃথিবীতে যখন নগরায়ন শুরু হয়, সেটা যদি সুপরিকল্পিত হয়, তাহলে অসুবিধা হয় না। কিন্তু যখন শুরু হয়, ঠিক পরিকল্পনামাফিক হয় না। নগরায়নের চাপে আমরা একদিকে যেমন কৃষি জমি হারাই, বনায়ন ধ্বংস হয়, পরিবেশ নষ্ট হয়। এটা খুব স্বাভাবিক নিয়মই ছিল। আমরা সরকারে আসার পরে প্রচেষ্টা ছিল ভূমি ব্যবহার, উন্নয়ন ও ভূমিকে যথাযথভাবে রক্ষা করা। কৃষি জমি রক্ষা করা। মানুষের বসতিটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। এসব বিষয় আমরা চিন্তা করি। ভূমি ব্যবহারের জন্য যে একটা নীতিমালা প্রয়োজন তা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করেছিলাম। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরে কতগুলো পদক্ষেপও গ্রহণ করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক ভূমি অফিস জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। ৬টি ভূমি অফিসসহ অনেক অফিস তারা নষ্ট করে দেয়। তখন একটা ঘোষণা করেছিলাম যে, যারা এই ভূমি অফিস পোড়াচ্ছে, তাদের যেন আর কোনো দিন জমির মালিকানা না থাকে। কারণ তারাতো আগুন দিয়ে রেকর্ড পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই মালিকানা কেন পাবে? এই হুমকি দেওয়ার পরে তাদের ভূমি পোড়ানো বন্ধ হয়। তাদের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। কারণ তারা তো আর মানুষের জন্য কাজ করে না। বিএনপি সামরিক শাসকের হাতে তৈরি করা একটা সংগঠন। তাই মানুষের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধও নেই। দেশের জন্যও নেই। ক্ষমতা আর ক্ষমতায় থেকে টাকা বানানো, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি তাদের কাজ। সেটাই তারা করেছে।

তিনি বলেন, দেশে ডিজিটাল টেলিফোন ছিল না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে আমরাই তা করি। মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দেই। এখন আমরা ফোর জি চালু করেছি। ফাইভ জিও চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাব ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। মোবাইলের মাধ্যমেও অনেক কাজ সহজে করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ৩ কোটি হোল্ডিংয়ের মধ্যে ১ কোটির ডাটা এন্ট্রি ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করার প্রক্রিয়া চলছে। তা শেষ হলে সব কাজ সহজ হয়ে যাবে। যাতে সময় ও খরচ বাঁচবে। হয়রানি থেকেও মানুষ রক্ষা পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জলমহাল, হাওর, বাঁওড়, চা বাগান, লবণ মহল, চিংড়ি মহল, হাটবাজার, খাস জমি ও অধিগ্রহণকৃত জমির ডাটাবেইজ ছিল না। তা না থাকার কারণে তথ্য পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ভূমি নিয়ে। এই ভূমি কোথায় পাওয়া যাবে, কিভাবে হবে, অধিগ্রহণ করা, তার মালিকানা খোঁজা এবং তাদেরকে অর্থ পরিশোধ করা। এটা অনেক ঝামেলা। ডিজিটালাইজড হওয়াতে সুবিধা হবে।

আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন নিয়ে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ সেবা পায়, দেশের উন্নতি হয়, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা যখন শুরু হলো তখন থেকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিদেশে নষ্ট হতে শুরু করে। বাংলাদেশ নাম শুনলে মনে করতো দুর্ভিক্ষ, ঝড়, বন্যা , জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। আর খাদ্যের জন্য হাত পাততে হয়, গরিব, বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় এনে দেশের মানুষকে পরানো হতো। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত অসন্মানজনক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে আমরা চেষ্টা করেছি একদিকে যেমন মানুষের আত্মসামাজিক উন্নতি করা। অপরদিকে আমরা পারি করতে। দেশ স্বাধীন করেছি জাতির পিতার একডাকে সাড়া দিয়ে। তিনি বলেছিলেন ধাবায়ে রাখতে পারবা না।

এসময় তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখন সরকারে আসে তখন আমরা আন্তরিক, আদর্শ, নীতি ও সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি। কারণ এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। পাশে থেকেছে জনগণ। কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে যারা ক্ষমতায় বসে, তাদের সেই দায়বদ্ধতা থাকে না। ক্ষমতাটাকে ভোগের জায়গা বানায়। অর্থ-সম্পদ বানানোর একটা মেশিন হিসাবে পায়। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনো খেয়ালই থাকে না। এটা হলো বাস্তবতা। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে দেশের উন্নতি হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com