রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন
আরিফুর রহমান স্বপন, কুমিল্লা: কুমিল্লার লাকসামে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর বাড়ী পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার।
নবাব বাড়ীর উত্তোসূরীদের আমন্ত্রণে ২৫ সেপ্টেম্বর (শনিবার) দুপুরে নবাব বাড়ি পরিদর্শনে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
কুমিল্লা জেলার লাকসাম পৌরশহরের পশ্চিমগাঁওয়ে ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত ভারত উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব, নারী শিক্ষার অগ্রদূত ময়হিসী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর স্থাপত্যশৈলী বাড়িটি পরিদর্শনে আসলে বাড়ির মূল ফটকে রাষ্ট্রদূতকে বরণ করেন স্থানীয় প্রশাসন, নবাব পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ । মার্কিন রাষ্ট্রদ্রুত নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর কর্মকাণ্ডের নিদর্শন, বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলী, নবাব বাড়ি, নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ, নবাব ফয়জুন্নেছা ও বদরুন্নেছা যুক্ত উচ্চ বিদ্যলয় ঘুরে দেখেন। পরে রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতিচারণ করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
তাঁর সফরকালে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যসহ এসময় অন্যান্যদের উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ইউনুছ ভুঁইয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সাইফুল আলম, পৌর মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজিয়া বিনতে আলম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (লাকসাম সার্কেল) মহিতুল ইসলাম, ওসি মেজবাহ উদ্দিন ভুইয়া, লাকসাম প্রেসক্লাবে সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম হিরা, নবাব পরিবারের উত্তোরসূরী নবাবজাদা ফজলে রহমান চৌধুরী আয়াজ, সৈয়দ মাসুদুল হক চৌধুরী প্রমূখ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলের কারুকার্য দিয়ে নির্মিত ভারতীয় উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব ও নারী আন্দোলনের প্রথম অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক এ বাড়িটি চমৎকার একটি স্থাপত্যশৈলী, যা দক্ষিণ এশিয়ার সৌন্দর্যমন্ডিত বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়িটি বছরের পর বছর অরক্ষিত থাকলেও সম্প্রতি এটিকে আকর্ষণীয় প্রত্নপর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বরাদ্দ পেলেই বদলে যেতে শুরু করবে নবাব বাড়িটি।
সৌন্দর্যমন্ডিত বাড়িটি ঘিরে দেখা দিতে পারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা। কুমিল্লা জেলার লাকসাম পৌরশহরের পশ্চিমগাঁওয়ে ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর বাড়ির অবস্থান। ঐতিহ্যের ধারক বাড়িটির নির্মাণসাল নিয়ে মতান্তর রয়েছে। কথিত আছে, উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব, জমিদার কন্যা ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর বিয়ের ১৭ বছর পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামী হাছান আলী জমিদারের আরেকজন স্ত্রী রয়েছেন। অসাধারণ ব্যক্তিত্ববান, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন, দৃঢ়চেতা নবাব ফয়জুন্নেছা এটি মানতে পারেননি। তিনি পৃথক থাকার জন্য সাড়ে ৩ একর জমির ওপর তৎকালীন সময়ে তাঁর বিয়ের কাবিনের ১ লাখ ১ টাকা দিয়ে এই বাড়িটি নির্মাণ করেন।
বাড়িটি নির্মাণ করতে প্রায় তিন বছর সময় লাগে। ব্রিটিশ আমলে সিমেন্ট, রড, চুন ও সুরকি দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বাড়ির পশ্চিম পাশেই ১০ গম্বুজবিশিষ্ট একটি অনিন্দ্য স্থাপত্যশৈলীর পারিবারিক মসজিদ রয়েছে। মসজিদের পাশেই রয়েছে পারিবারিক কবরস্থান, যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন নবাব ফয়জুন্নেছাসহ তার বংশধরেরা। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ওই ময়হিসী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর ১১৮তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে।