মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৮ অপরাহ্ন

সুতার বান্ডিল সূত্রে উদঘাটিত হয় অভিনেত্রী শিমু হত্যার রহস্য

তরফ নিউজ ডেস্ক: তদন্তের সময় একটি প্লাস্টিকের সুতার বান্ডিলের সূত্র ধরে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। আলোচিত হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

অভিনেত্রী শিমু সপরিবারে কলাবাগান থানার গ্রিন রোডে থাকতেন। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার হজরতপুর ইউনিয়নের আলীপুর ব্রিজ এলাকায় রাস্তার পাশে ঝোঁপের ভেতর থেকে শিমুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। একই দিন কলাবাগান মডেল থানায় স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিমুর স্বামী নোবেল।

পুলিশ বলছে, লাশ উদ্ধারের পর তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে নিহত নারীর পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। পাশাপাশি অভিনেত্রী শিমুর বাসায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। এ সময়ই একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে উদঘাটন হয় হত্যার মূল রহস্য।

লাশ গুম করতে দুটি বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতাই হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোবেলকে আটক করে পুলিশ। কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে শিমুর স্বামী জানান, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি শিমুকে হত্যা করেছেন। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর বন্ধু ফরহাদকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে নেন। পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাস্তা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান।

প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পুনরায় লাশ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হজরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোঁপের ভেতর লাশটি ফেলে চলে যান। তখন রাত সাড়ে নয়টা। শিমুর স্বামী ও তার বন্ধু দুজনই মাদকাসক্ত ও বেকার ছিলেন।

এর আগে সোমবার দুপুরে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর সেতুর পাশে দুটি বস্তায় শিমুর দেহের দুটি অংশ পাওয়া যায়। তখন পরিচয় শনাক্ত না হলেও রাতে স্বজনরা মরদেহটি শিমুর বলে শনাক্ত করে। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিত্রনায়িকা শিমুর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে রাতেই কেরানীগঞ্জ মডেল থানা হেফাজতে নেয়। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়।

গ্রেপ্তার দুজন পুলিশকে জানান, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে স্বামী নোবেলের সঙ্গে শিমুর দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এর জেরে গত ১৬ জানুয়ারি সকাল সাতটা থেকে ৮টার মধ্যে যেকোনো সময় শিমুকে খুন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এসপি মারুফ হোসেন আরও বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই যে গাড়ি ব্যবহার করে লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়েছে সেই গাড়িটি জব্দ করে থানায় নিয়েছি এবং অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করেছি।

১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫টি সিনেমায় অভিনয় করেন শিমু। তিনি কাজী হায়াতের ‘বর্তমান’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন। পরে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ আরও বেশ কিছু পরিচালকের সিনেমায় কাজ করেন।

কয়েক বছর ধরে একটি বেসরকারি টিভির মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত ছিলেন শিমু। টুকটাক নাটকে কাজ করতেন। পাশাপাশি তার নিজের নাটক নির্মাণের প্রোডাকশন হাউজ ছিল বলে জানা যায়। তাছাড়া শিমু চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য ছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে ১৮৪ জনের সঙ্গে তার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে স্থগিত হওয়া অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সরব ছিলেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com