মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) : বানিয়াচাং উপজেলা জুড়ে গত মাসখানেক থেকেই বিভিন্ন উন্নয়ন অজুহাতের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করছে। কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এ লোডশেডিংয়ের কারণে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের তেমনি চলতি বছরে অংশগ্রহণকারী এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। এই শীতের মধ্যে বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিপাকে পড়ছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
স্থানীয় লোকজনসহ বাজার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত একমাস থেকে বানিয়াচং উপজেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল চোখে পড়ার মতো। আগে বিদ্যুতের কোনো লাইনে কাজ করতে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগের দিন শুধু মাত্র সদরে মাইকের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতো। এখন তারা তাও করছেন না। এমনকি কোনো লাইন মেরামতের নামেও বিদ্যুৎ বিভাগ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রাখছেন উপজেলাবাসীকে।
তারা আরো জানান, বানিয়াচং উপজেলায় বিদ্যুতের সমস্যা বিগত সময় থেকে অনেকটা উন্নতি হয়েছে। অথচ সকল রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সবসময়ই বলে আসছেন জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে। কবে নাগাদ এর সমাধান হবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন স্থানীয় লোকজন। এখন শীতকাল অথচ এ শীতেই আমরা সর্বাধিক লোডশেডিংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি, গরম না আসতেই বিদ্যুতের এ অত্যাচার তাহলে গরমকালে কি অবস্থা হতে পারে।
উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী জাকির পারভেজ বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং এতোই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে, মোবাইলের নেটওয়ার্ক পর্যন্ত চলে যায়। কথা বলতে গিয়ে মোবাইল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চার্জ না থাকার কারণে। পাশাপাশি বিঘ্ন ঘটছে ইন্টারনেট সেবারও। অপরদিকে অন্য ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বিদ্যুৎ নেই তাতে কি, কিন্তু বিদ্যুতের বিল কিন্তু আরো দ্বিগুণ আকার ধারণ করছে।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ওখানে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাকিব হোসেন নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী জানান, একদিন পরেই আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু। পড়ার টেবিলে বই নিয়ে পড়তে বসলেই কিছুক্ষণ পরে চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। আবার চলে আসছে। এভাবে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের পড়া-লেখায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। নষ্ট হচ্ছে মনোযোগ। মোমবাতি জ্বালিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে আমাদের।
এই শীতের মধ্যে তীব্র লোডশেডিং উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। গ্রাহকরা জানান,বছরের অন্যান্য সময় লোডশেডিং থাকলেও তার নানা কারণ তুলে ধরা হয়। তবে এখন শীতের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং হবে তা বোধগম্য নয়। এটা কি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নিজের ইচ্ছায় করছে নাকি বিদ্যুতের ঘাটতি তা তারা বুঝতে পারছেন না। এর ফলে সেচেরও ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। অন্তত:পক্ষে আর যা ই হোক পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানান তারা।
গ্যানিংগঞ্জ বাজারের স্টুডিও ব্যবসায়ী বিষ্ণু গোপ ও ওয়ার্কসপ ব্যবসায়ী সুমন গাজী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান,বর্তমান সময়ে দিনে ৭/৮ বার লোডশেডিং হচ্ছে। কিন্ত কেন এতবার লোডশেডিং করে তা বুঝতে পারছিনা। বিদ্যুৎ না থাকায় সঠিক সময়ে গ্রাহকদের মালামাল ডেলিভারি দেয়াও সম্ভব হচ্ছেনা।
এই বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো.আবু জাফর জানান, বানিয়াচং ছিলাপাঞ্জা নামক স্থানে সাবস্টেশনে ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় কিছুদিন যাবত এই অবস্থা হচ্ছে। নতুন করে এই স্টেশনে ট্রান্সফরমার স্থাপনের কাজ চলছে। এটা স্থাপন হয়ে গেলে আশা করি আর লোডশেডিং হবেনা।