মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

পান চাষ হুমুকির মুখে, চাষিদের প্রশিক্ষণ দরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত খাসিয়াদের প্রধান জীবিকা হচ্ছে পাহাড়ি এলাকায় পান-সুপারি চাষ। পান একটি বহুল প্রচলিত মুখরোচক খাবার। এটি বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদেশে খুব কম এলাকা আছে যেখানকার মানুষ পান খান না। তাছাড়া সিলেট অঞ্চলে বিশেষ করে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার মানুষের কাছে এটি দৈনন্দিন ব্যবহার্য দ্রব্য। কিন্তু বর্তমানে দাম কম ও পোকা-মাকড়ের উৎপাতসহ নানা কারণে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও বাহুবলে পান চাষ হুমকির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পান উৎপাদন হলেও সিলেটের জৈন্তাপুর এবং গোয়াইনঘাট উপজালার ধোপাছড়া শ্রীপুর জৈন্তাপুর সংগ্রাম, প্রতাপপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত ৭/৮টি এলাকায় ও হবিগঞ্জের বাহুবলে প্রচুর পরিমাণে পান উৎপাদন হচ্ছে। এসব এলাকায় খাসীয়াদের ৩ শতাধিক পানের বরজ রয়েছে।

এখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পানের চাহিদা যেমন রয়েছে তেমনি সিলেট শহরে রয়েছে এর প্রধান বাজার। যেহেতু পানের কোনও ধরনের বীজ নেই তাই সাধারণ কাটিং থেকে এর উৎপাদন করা হয়। পান গাছ কাটিং সংগ্রহ করার সঠিক সময় আষাঢ়-শ্রাবণ মাস। সর্বনিম্ন ৩ বছরের পান গাছ থেকে এর কাটিং সংগ্রহ করা হয়। কাটিং সংগ্রহের পর ওই কাটিং করা পান গাছটি একটি নির্ভরশীল গাছের আধা ফুট দূরত্বে আধা ফুট গভীর এবং আধা ফুট প্রশস্ত গর্তের ঝরঝরা মাটিতে রোপণ করা হয়।

পান গাছকে সাধারণত কাঠাল আম জাম অর্থাৎ পুরু চামড়া জাতীয় গাছের পাশে রোপণ করা হয়। রোপণকৃত কাটিং পান গাছটি একটু বড় হলে ওই নিভরশীল গাছের ডালপালা কিছুটা ছাটাই করে দেওয়া হয় যাতে ওই চারা গাছটি প্রচুর পরিমাণে আলে বাতাস পায়। পানচাষিরা পান গাছে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহৃত করেন না। তবে তারা কিছু জৈব সার ব্যবহৃত করে থাকেন।

পান উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হলো এর মড়ক। এই মড়ককে স্থানীয় পানচাষিদের ভাষায় বলা হয় উতরাম ও ইয়বসাও। উতরাম হলো পান পাতায় একটি কালো শ্যাতশ্যাতে দাগ। এটি পানের জন্য একটি ছোঁয়াচে রোগ। আর ইয়াবসাও হলে হঠাৎ করেই পান গাছের পাতাগুলো নিচের দিকে ঝুকে পড়ে। এটিও পান গাছের জন্য অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগের জন্য পানচাষিরা কোনো রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার করে না। এক্ষেত্রে আক্রন্ত পানটিকে বা পান গাছটিকে বাগান থেকে দূরে সরিয়ে গর্ত করে পুঁতে রাখা হয়।

এছাড়া বিছা পোকাও পান গাছের ক্ষতি করে। পানচাষিরা সম্পূর্ণ তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে পান চাষ করেন। তাদের পান চাষের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও নেই। সেজন্য ওইসব এলাকায় যেটুকু পান উৎপাদন সম্ভব ছিল তা থেকে অনেক কম পরিমাণে পান উৎপাদিত হচ্ছে।

এছাড়া মড়ক ও বিভিন্ন পোকার আক্রমণের ফলে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও বাহুবল উপজেলায় বর্তমানে পান চাষ হুমকির মুখে পড়েছে।

এ বিষয়ে আদিবাসী নেতা লক্ষ্মীকান্ত সিংহ বলেন, চাষিদের পান চাষের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ এবং মড়ক ও পোকার আক্রমণ থেকে পান গাছ রক্ষার ব্যাপারে সঠিক প্রদ্ধতি ব্যবহার করানো গেলে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও বাহুবল এলাকার প্রচলিত প্রবাদ পান পানি নারী বাক্যটি স্বার্থকতা লাভ করবে। পান চাষিদের সরকারি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং পৃষ্টপোষকতা করা হলে পান এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com