বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন
আরিফুর রহমান স্বপন, কুমিল্লা : কুমিল্লার লাকসাম-মুদাফরগঞ্জের সড়কের খুন্তা নামকস্থানে ডাকাতিয়া নদীর উপর বেইলী ব্রিজটি দীর্ঘবছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নির্মিত পুরাতন জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রিজটি এখন চলাচালকারীদের জন্য মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। নির্মানের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মেরামতের কোন খোঁজ খবর নেই।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাফিলতির কারণে মেয়াদউত্তীর্ণ এ বেইলী ব্রিজে পাটাতন ভেঙ্গে প্রতিনিয়তই ঘটছে অহরহ দূর্ঘটনা। বিকল্প সড়ক না থাকায় প্রতিদিন বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ন এ সেতু দিয়ে চলাচল করছে ভারী যানবাহনসহ হাজার হাজার যাত্রী ও শিক্ষার্থীরা। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর উপর দিয়ে ১৫/২০ টন ওজনের মালামাল নিয়ে অবাধে চলাচল করছে ট্রাকসহ ভারী যানবাহন। এই ব্রিজটি নিয়ে গত কয়েকবছর ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে তা মেরামত করলেও সেটি কয়েকদিন পর আবার আগের অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেইলী ব্রিজের পাটাতনগুলোতে অসংখ্য ফাটল আর সেই ফাটলের উপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে নীচে নদীর পানিসহ বালুচর। পাটাতনের ফাটলগুলো বন্ধ করতে ব্রিজের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত দেখা হচ্ছে লোহার ঝালাইয়ের অসংখ্য জোরাতালি। ব্রিজের উপর দিয়ে গাড়ী চলাচলের সময় শুনা যায় পাটাতনের বিকট শব্দ। আর কিছু কিছু জায়গা লোহার ফ্রেমের উপর বসানো পাটাতনগুলো নড়বরে হয়ে যাওয়া ছোটবড় কোন গাড়ী ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচলের সময় গাড়ীর চাকা ভারে পাটাতনের এক পাশে নীচে আর অপরপাশে উপরে উঠে যাচ্ছে। ফলে যে কোন সময় লোহার ফ্রেমের উপর অস্থায়ী ভাবে বসানো পাটাতন সরে গিয়ে পিস পয়েন্ট ফাঁকা হয়ে পড়ছে।
এদিকে পাটাতন ও রেলিং খুলে পড়ায় নাটবল্টুসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন থেকেই ঝুঁকি নিয়ে এ পথে চলাচল করছে ছোট বড় শত শত যানবাহন। ব্রিজটির সামনে ও পিছনে নেই কোন ধরনের সওজ কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা। ব্রিজের পিস পয়েন্ট খুলে গিয়ে এ স্থানে কয়েকবার দূর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। বিশেষ করে রাতে দূর থেকে দেখা না যাওয়ায় যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে প্রানহাণীর আশংকা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এক যুগেরও বেশি সময় আগে সড়ক ও জনপদ বিভাগে তৈরী করা এ সেতু। এটি বছর পর বছর এ অবস্থায় পড়ে আছে। জরুরী ভিত্তিতে এটি মেরামতের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী বলেন, গত কয়েকদিন আগে একটি বালুর ট্রাক ব্রিজ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়। ২০১৫ সালে শেষের দিকে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে পার হওয়ার সময় একই স্থানে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে। অপরদিকে সেতুগুলো একমুখী হওয়ায় ট্রাক, বাসসহ বড় যানবাহন পারাপারের সময় সেতু উভয় প্রান্তে সৃষ্টি হয় যানজটের। এতে করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে চালকসহ যাত্রীরা।
এ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন উপজেলার মুদাফরগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের অসংখ্য ট্রাক্টর, প্রাইভেটকার, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, রিক্সা, সিএনজি, ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, মোটর সাইকেল, ইট-বালু বহনকারীসহ ভারী যানবাহন চলাচল করছে। ট্রাকচালক সেলিম জানান, আমি ১০ বছর ধরে এ রাস্তায় গাড়ী চালাই সে সময় থেকে ব্রিজগুলো ভাঙ্গা দেখতেছি ব্রিজের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেলে মাঝে মধ্যে দেখি ঝালাই-টালাই দেয়া হয়। কিন্তু যখন গাড়ী নিয়ে ব্রিজের উপর উঠি ব্রিজটা যেন কেঁপে উঠে।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাহী রাব্বী সেতুটির ঝুকির কথা স্বীকার করে বলেন, মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রীর নির্দেশে আমরা একটি নতুন ব্রিজের অনুমোদন পাওয়ার আবেদন করেছি। তবে বর্তমানে বেশী ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় তা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই মেরামত করা হবে।