বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬ অপরাহ্ন
মোতাসিম বিল্লাহ। বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার রাজাপুর গ্রামে। একেবারেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামটির অবস্থান। ২০১৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৩৯ পেয়ে এসএসসি পাশ করে সে। স্পার্টফোনে আসক্ত হওয়ায় এসএসসিতে কাক্সিক্ষত জিপিএ-৫ পায়নি। তাই, কলেজে ভর্তি হয়ে ফোন ব্যবহার বন্ধই করেই দেয় মোতাসিম। কিন্তু, পরিশ্রম করেও এইচএসসি’তে ভালো করতে পারেনি। ২০১৭ সালে এইচএসসি’তে তার জিপিএ ছিল মাত্র ৩.৯২। এতো কম জিপিএ নিয়ে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যে বেশ কঠিন, মোতাসিম হাড়েহাড়ে টের পায়। ২০১৭ সালে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হতে পারেনি সে। এতে হতাশায় ডুবে যায়। বিষন্ন থাকে সবসময়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এসএসসি আর এইচএসসি’তে জিপিএ-৫ পাওয়া যে খুব জরুরি, তা অনুভব করতে থাকে মর্মে মর্মে। সিদ্ধান্ত নেয় আবারো এইচএসসি পরীক্ষা দেবে।
কিন্তু, বাদ সাধে তার বড় বোন ইয়াসমিন। বুঝায়, পরিশ্রম করলে আবারো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। ইয়াসমিন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। (তাদের নিজ গ্রাম রাজাপুরের প্রথম এসএসসি পাশ করা ছাত্রী সে। সহজেই অনুমেয় শিক্ষায় গ্রামের অবস্থা)। মোতাসিম বিল্লাহ নতুনভাবে শুরু করার শপথ নেয়। এবার পাশে পায় নিকটাত্মীয় আব্দুল হক সাহেবকে (উপ-পরিচালক, সিলেট বেতার)। তিনি পরামর্শ দেন।
সিলেটের একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয় মোতাসিম। কঠোর সাধনা চলে দিনরাত। খুব নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। বরং তার ফলাফল অনুযায়ী যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ বেশী, সে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত প্রশ্ন ঘেটে ঘেটে প্রস্তুতি শুরু করে। ফলাফলও আসে হাতেনাতে।
এবার মোতাসিম বিল্লাহ্ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে দুটি ইউনিটে চান্স পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে।
অ ইউনিট (ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ) এ মেরিট পজিশন ৪৫৪ এবং ই ইউনিট (বিজ্ঞান অনুষদ) এ মেরিট পজিশন ২০৩। প্রিয় ছাত্রটির এমন সাফল্যে একজন শিক্ষক হিসেবে গর্বে বুক ভরে যায়।
আজ খুব সকালে মোতাসিম বিল্লাহ ফোন করল। অনেকক্ষণ কথা বললো। তার কথায় আজ আর ক্লান্তির ছাপ নেই, আছে উচ্ছ্বাস আর আনন্দ!
লেখক-
পংকজ কান্তি গোপ টিটু
সহকারি শিক্ষক
পুটিজুরী এস.সি উচ্চ বিদ্যালয়
বাহুবল, হবিগঞ্জ।
তাং- ১২ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার