বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন
বিন্দু তালুকদার : মো. শামীম আল ইমরান। একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। লেখক ও সৃজনশীল মানুষ। ২০১৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদে যোগদান করেন। জন্মসূত্রে হবিগঞ্জের বাহুবল এলাকার বাসিন্দা তিনি। জামালগঞ্জে যোগদানের পরপরই তিনি এলাকাটিকে নিজের বাড়ি বলেই মনে করেছিলেন। উন্নয়নে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। জনাব শামীম আল ইমরান উপজেলার প্রশাসনিক কাজ ছাড়াও প্রতিদিনই পিছিয়ে থাকা জামালগঞ্জকে বদলে দেয়ার জন্য কাজ করছেন। তাঁকে নিয়ে এই লেখাটিকে কেউ রঞ্জিত বা অতিরঞ্জিত বললেও পুরো লেখাটি পড়লে মন্তব্যের ধারণা পাল্টাবে বলে বিশ্বাস করি। এছাড়াও জামালগঞ্জের সাধারণ মানুষ ইউএনও’র সকল কর্মকান্ডের স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছেন। তাঁর অনেকগুলো কাজের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, মৃত প্রায় জামালগঞ্জ উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরিকে পুনরুজীবিত করা। জামালগঞ্জ উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি দীর্ঘদিন ধরেই কাগজে-কলমে ঢিমে-তালে চলছিল। এখানে পাঠকদের নিয়মিত পদচারণা ছিল না। দেড় হাজার বই-পুস্তক থাকলেও তেমন আসবাবপত্র ও বসার উপযুক্ত স্থান ছিল না। জামালগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি কি হালে ছিল, তা নিয়ে একটু পেছনে গেলে পাঠক লেখার বিষয়বস্তু সহজে বুঝতে পারবেন। ২০০৭ সালে আমরা জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী পালন করেছিলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে। আমাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মো. আশরাফ উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জামালগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান চৌধুরী এবং জামালগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির তৎকালীন সম্পাদক ও জামালগঞ্জ কিন্ডার গার্ডেনের প্রিন্সিপাল প্রয়াত গোলাম মর্তুজা। সেদিন কবি নজরুলের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অনেক সময় লেগেছিল লাইব্রেরির ভেতর পরিস্কার করতেই। সব কাজেই সহায়তা করেছিল সাংবাদিক জাহির বিন রুহুল (জহির)। তখন এখানে পাঠকদের উপস্থিতি থাকত না। কোন অনুষ্ঠান ছাড়া লাইব্রেরির দরজা খোলা হত না। সবশেষ গত বছর (২০১৮) জামালগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের জামালগঞ্জ উপজেলা কমিটি গঠনের কাজে। আমি যেহেতু সংগঠনের সদস্যসচিব ছিলাম, তাই তৎকালীন যুগ্ম আহবায়ক দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক বিজন সেন রায় (বিজন দা) ও তৎকালীন সিনিয়র সদস্য সালেহীন চৌধুরী (শুভ)সহ সবার অনুরোধে জামালগঞ্জে গিয়েছিলাম। সেদিনও উপস্থিত সবার বসার ব্যবস্থা ছিল না, ছিল না রুমের ভেতর পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের রাস্তা। যেহেতু সংগঠনটির কাজ কৃষকদের দাবি-দাওয়ার পক্ষে, তাই সবাই কষ্ট সহ্য করে সভার কাজ করি। সভায় তখন অনেকেই বলছিলেন উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরির এই দশা কেন? অনেকেই অনুরোধ করেছিলেন এবিষয়ে একটা নিউজ করার জন্য। নানা কারণে আর এনিয়ে নিউজ করা সম্ভব হয়নি। মৃতপ্রায় জামালগঞ্জ উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরিকে আধুনিকায়ন করার বিষয়ে কেউ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। জামালগঞ্জের সংস্কৃতিমনা স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ লাইব্রেরির উন্নয়নে এগিয়ে আসেননি। তবে প্রশাসনের অন্যান্য কাজ-কর্মের ন্যায় পাবলিক লাইব্রেরিকে পাঠকমুখি ও আধুনিকায়নে উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মো. শামীম আল ইমরান। তিনি লাইব্রেরির নতুন জীবন দান করেছেন। সদস্য সংখ্যা ১৫৬ থেকে ৯৫০ এ উন্নীত করলেন। আগে আজীবন সদস্য ছিল ৮১ জন, সাধারণ সদস্য ৭৫ জন। বর্তমানে আজীবন সদস্য ১৮০ জন ও সাধারণ সদস্য ৭৭৭ জন। লাইব্রেরির নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করছেন। পাশাপাশি সকল কাজ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ফেসবুক পেজে প্রচার করলেন। গত ১৮ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ব্যাপক প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পাবলিক লাইব্রেরির নির্বাচন যেভাবে প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে, কোন স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ভোটারদের এত উৎসাহ-উপস্থিতি দেখিনি। তারপর জড়াজীর্ণ পাবলিক লাইব্রেরিকে আধুনিকায়ন করে পাঠকদের বসা ও বই পড়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা করেছেন। পাঠকদের জন্য লাইব্রেরিতে নতুন বই সংগ্রহ করেছেন। পরিচালনা কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে হয়তো তিনি সরকারি অর্থেই লাইব্রেরির উন্নয়ন করেছেন। তবে বলতে দ্বিধা নেই, যে উদ্যোগটি তিনিই নিয়েছিলেন এবং শতভাগ সফল হয়েছেন। আমরা আশা করি জামালগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি থেকে স্থানীয় জ্ঞানপিপাসুরা জ্ঞাণ অর্জন করবেন। শিক্ষার্থীরাও এই লাইব্রেরি থেকে নিজেদের শিক্ষা ঘাটতিপূরণ করবেন। বই পড়ায় উদ্ধুদ্ধ হবে জামালগঞ্জের নতুন প্রজন্ম। দিনে দিনে সমৃদ্ধ হবে জামালগঞ্জের পাঠক সমাজ। জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আল ইমরান শুধু পাবলিক লাইব্রেরিরই উন্নয়ন করেননি। তিনি জনসাধারণের চলাচলের প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। ব্যবসায়ীদের চক্ষুশুল হয়েও কয়েকযুগ ধরে বেদখলে থাকা সাচনাবাজারের প্রধান রাস্তা গত বছর উদ্ধার করে পথচারীদের চলাচলের পথ সুগম করে দিয়েছেন। বাজারের রাস্তায় ভাসমান দোকান থাকায় পুরো উপজেলাবাসী দুর্ভোগে ছিলো। দুর্ভোগ লাঘব করে দিয়েছেন তিনি। বাজারের রাস্তা যেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা আর দখল করতে না পারে সেজন্য ডিভাইডার তৈরি করে দিয়েছেন। এছাড়াও ২০১৭ সালের বোরো ফসলহানির পর গত বছর (২০১৮ সালে) জামালগঞ্জের পাগনা ও হালীর হাওরের বাঁধ নির্মাণে দিন-রাত হাওরে থেকেছেন। জেলায় বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ সবার আগে শেষ করেছেন। চলতি বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন। অনেক কাজ তিনি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তদারিক করেছেন। সম্প্রতি শামীম আল ইমরান জামালগঞ্জ থেকে বদলী হয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী বদলী সবাইকেই বদলী হতে হয়। এরই অংশ হিসেবে তিনি জামালগঞ্জ উপজেলা ছেড়ে অন্যত্র যোগদান করবেন। নতুন কর্মজীবন শুরু করবেন, নতুন এলাকার উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করবেন। তিনি জামালগঞ্জ থেকে চলে গেলেও জামালগঞ্জবাসী তাঁকে হৃদয়ে রাখবে। তাঁর কর্মজীবন জামালগঞ্জবাসী স্মরণে রাখবে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।