বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

ফণী মোকাবেলায় বরিশাল বিভাগে প্রস্তুত ২৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক

তরফ নিউজ ডেস্ক : সময়ের চেয়েও দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে ফণী। এরই মধ্যে বরগুনা পিরোজপুরে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। কুয়াকাটার সমুদ্র ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে। তবে মিডিয়া, প্রশাসন এবং রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক প্রচারণায় সতর্ক অবস্থানে সাধারণ মানুষ। প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তারা। সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্কেরও। লঞ্চ বন্ধ থাকায় আজকের বিসিএস পরীক্ষায় অনেক প্রার্থী অংশগ্রহণ করতে পারছে না। ফনী মোকাবেলায় এবার আগ থেকেই প্রশাসন ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

‘ফণী’ আঘাত হানার আগে ও পরে বিভিন্ন ধরনের উদ্ধার তৎপরতাসহ জনসাধারণকে সার্বিক সহায়তা করতে বরিশাল বিভাগে মাঠপর্যায়ে ২৮ হাজার ৭৬২ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি এক হাজার ৮৩৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সাধারণ মানুষের আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস  জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিভাগীয় প্রশাসন বরিশাল। খোলা রাখা হয়েছে বরিশাল বিভাগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব অফিস।
উপকূলীয় জেলা ও উপজেলায় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার সব প্রস্তুতি এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য মজুদ ত্রাণ প্রস্তুত সামগ্রী করে রাখা হয়েছে। বরিশাল বিভাগের জন্য ১৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, দুই হাজার ৩৭৬ মেট্রিক টন চাল মজুদ আছে।

এছাড়া ৫৭৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল জেলায় সাব-সেন্টার রয়েছে ৩৫টি। ইতোমধ্যে প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘূর্ণিঝড় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য পাওয়ার জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। বরিশাল জেলা প্রশাসকের কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ০১৭০৫ ৪০৬৫০১, ০৪৩১-৬৩৮৬৬। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বরিশালের কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ০১৭৪১ ১৯৬৯৩৯, ০৪৩১ ৬৩৮৬৩। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বরিশালের কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ০১৭১২ ০২৬৩০৬, ০৪৩১-৬৫০৫৭।
২০০৯ সালের আয়লার পর এমনিতেই উপকূলের মানুষ আকাশে মেঘ দেখলেই সতর্ক হয়ে পড়ে। তবে মিডিয়ার ব্যাপক প্রচার, প্রশাসনের প্রস্তুতি আর রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার কারণে এবার ফণী মোকাবেলায় প্রস্তুতিও ব্যাপক। সাধারণ মানুষ এরই মধ্যে বিদ্যুৎ থাকবে না ধরে নিয়ে পানি সঞ্চয় করছে।

আকন সাইদুর রহান নামের এক ফ্লাট মালিক জানান, তিনি তার ভাড়াটিয়াদের বলে দিয়েছেন ঘরে খালি পাত্র যা কিছু আছে তাতে পানি ভরে রাখতে। বিদুৎ তিন চারদিন নাও থাকতে পারে। বাজরেও বেশ ভিড় লক্ষ করা গেছে। তরি তরিকারী গুড়া মাছ বড় মাছ যে যা পারছে বেশি করে কিনছে।

এদিকে বৃহস্পতিবারই বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। বস্তি এলাকা এবং নদীর তীরবর্তী স্থানের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাবার আহবান জানানো হচ্ছে। প্রাইমারি স্কুলগুলো খালি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক বার্তায় এসব স্কুলে সার্বক্ষণিক একজন দপ্তরী ও নৈশ প্রহরীকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানানো হয়। অপর দিকে সিটি করপোরেশনও বসে নেই। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিজে উত্তাল নদীতে স্পিড বোট নিয়ে মাইকং করে মানুষকে সতর্ক করছেন।
এদিকে বরিশাল লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে সব ধরনের লঞ্চ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পার্শবর্তী বেশ কয়েকটি ডকইয়ার্ডে বড় লঞ্চগুলো রাখা হয়েছে।

কুয়াকাটার সব হোটেলগুলো খালি রয়েছে। পর্যটকরা বৃহস্পতিবার রাতেই হোটেল ত্যাগ করেছেন। এ এলাকার ছোটখাট বাড়ি আর ভবন মালিকরা আতঙ্কিক হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের ব্যাপক মাইকিং আর মিডিয়ার প্রচারে নিরাপদ এলাকায় ছুটছে সবাই। তবে এখানে পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার নেই বলে দাবি করেছেন মৎসজীবী বকর মিয়া। অনেকেই ছুটছেন দূরে আত্মীয় স্বজনদের কাছে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে কুয়াকাটা, বরগুনা আর ভোলার মানুষ। আয়লা বা সিডরের স্মৃতি এখনও তাদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে আছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com