বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং থেকে : বানিয়াচং সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পেয়েছেন নাহিদা আক্তার। মুখে স্বতস্ফুর্ত হাসি থাকলেও দুশ্চিন্তার রেখা দেখা যায় তার মুখে। আর তা হল এতো ভালো ফলাফল করে ভালো কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা চালাতে পারবে না তার পরিবার। দারিদ্রতা আর নানা অসঙ্গতির সঙ্গে নিত্য লড়াই যেন নিয়তির ব্যাপার।
তারপরও লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছা প্রকাশটা বুঝি অযৌক্তিক। তবুও সে থামেনি। হার মানেনি দারিদ্রের কাছে। নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করেও জীবনে বড়ো হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে। মূল লক্ষ্য যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দারিদ্র দুর করে পরিবারের দুখী মা-বাবার মুখে হাসি ফোটানো।
সে অনুযায়ী জীবনযুদ্ধে নেমে শত বাঁধা পেরিয়ে নাহিদা আক্তার দেখিয়েছে বিশেষ কৃতিত্ব। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তার পড়ালেখার একটুও ছেদ পড়েনি। তার স্বপ্ন বড়ো হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু চরম দারিদ্রতা তার সেই স্বপ্নপূরণের পথে বিশাল বাধা। এ বাধা ডিঙ্গিয়ে সেই স্বপ্নপূরণ হবে কিনা সেই চিন্তাই এখন সারাক্ষণ নাহিদার।
বানিয়াচং ৩নং দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়নের সাগর দিঘীর পূবপাড়ের লুৎফুর রহমান ও সুহেনা বেগমের মেয়ে নাহিদা। পরিবারের চার ভাই-বোনের মধ্যে নাহিদা সবার বড়। তার ছোট ভাই মশিউর রহমান স্থানীয় এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। মশিউরও পড়ালেখায় মেধাবী। তার অপর ভাই মাহবুবুর রহমান পার্শ্ববর্তী আমবাগান উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আর সবচেয়ে ছোট ভাই সিদ্দিকুর রহমান সবেমাত্র একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। মেধাবী নাহিদা তার আগেও পিএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল।
নাহিদার বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। যখন যে কাজ পান সেটাই করেন তিনি। একদিন কাজে গেলে তিনদিন বসে থাকতে হয়। এ অবস্থায় তার সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছে তার। নাহিদা শহরের ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। নাহিদা এই ইচ্ছা পুরণ হবে কিনা জানেনা সে। নাকি অর্থের অভাবে থেমে যাবে তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন?
নাহিদার মা সুহেনা বেগম জানান, তার বাবা দিনমজুরের কাজ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লেখাপড়ার খরচ জুগাতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। এবার মেয়েকে কলেজে ভর্তি করাতে তিনি কি সিদ্ধান্ত নিবেন আদৌ কিছু বলতে পারছিনা। তার দিনমজুর এই স্বামীর নাহিদার পড়ালেখার খরচ জোগাতে সামর্থ্য নেই। প্রতিবেশী শাহাবুদ্দিন মীর জানান,মেয়েটি অত্যান্ত মেধাবী। খুব শান্তশিষ্ট মেয়ে নাহিদা। তার এই ফলাফলে এলাকাবাসীরা খুশি।
পুরাণবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ জানান, নাহিদা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। পড়ালেখায় ক্লাসের সবার চেয়ে সে সবসময় এগিয়ে থাকত। আমি দোয়া করব তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে যেন সে পৌছুতে পারে।
এই বিষয়ে কথা হয় মেধাবী নাহিদা সাথে। তিনি জানান, অনেক কষ্ট করে আমার পরিবার আমাকে লেখাপড়া করিয়েছেন। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য ভালো কলেজে ভর্তি হতে চাই। সেই স্বপ্ন পুরণ করে দারিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফুটাবো সেটা ই আমার লক্ষ্য। তিনি আরো বলেন-শুধু বাবা মা নয় স্কুল শিক্ষকদের একান্ত সহযোগিতা আর প্রতিবেশীদের ভাল পরামর্শ আমার এই কৃতিত্ব এনে দিয়েছে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।