শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দল জাপার বর্তমান সাংসদদের অনেকেই দল থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন না। পরিবর্তন আসছে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে নতুনদের প্রাধান্য দিতে চান জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পার্টির কিছু ত্যাগী নেতার পাশাপাশি কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সাবেক একাধিক সামরিক কর্মকর্তাকে সংসদে আনতে চান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। এক্ষেত্রে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন জাপার অনেক এমপি।
ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। পাশাপাশি এরশাদের নেতৃত্বাধীন ৫৯ দলের সমন্বয়ে গঠিত জোটের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি আসন ছাড় দিতে চান এরশাদ। এক্ষেত্রে দলের একাধিক প্রার্থী বাদ যেতে পারে। জাপার শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, প্রথমে দলের পক্ষ থেকে ১০০ আসন চেয়ে আওয়ামী লীগের কাছে তালিকা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে এরশাদ এই তালিকা দেন। শুধু তাই নয় নির্বাচিত হলে দল থেকে ১২ জন মন্ত্রীও চান তিনি। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সরকারে জাপা থেকে তিনজন মন্ত্রী করারও দাবি জানিয়েছেন এরশাদ।
শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা ৭৬ আসনে প্রার্থী ঠিক করেছেন বলে জানা গেছে। যদিও এরশাদ মঙ্গলবার থেকে মনোনয়ন সংগ্রহকারীদের সাক্ষাতকার নেবেন। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন বিক্রি শেষ হয়েছে।
২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১ জনসহ ৩৪ আসনে নির্বাচিত হয় জাতীয় পার্টি। এ বছর গাইবান্ধায় উপ-নির্বাচনে এমপি হন জাপার ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি ও স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজি যোগ দিলে এমপি সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬। সংরক্ষিত আসন মিলিয়ে বর্তমানে বিরোধী দলের আসন সংখ্যা ৪০।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে জোটের পরিধি বাড়ছে। মহাজোটের নির্বাচন করার কথা জানিয়ে কাদের বলেন, আমাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টসহ আরও ছোটখাটো কিছু দল যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তাই আসন বণ্টনের হিসাব নিকাশ ভিন্ন হতে পারে। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে জোটের শরিকদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০টি আসন ছাড় দেয়া হবে। ১৪ দলের শরিক দলগুলোর আসনে খুব একটা পরিবর্তন হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, জনপ্রিয়তা ও রিপোর্টের ভিত্তিতে মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে। ছোট দলের কোন নেতা যদি জনপ্রিয় হন তাহলে বড় দলের নেতাদের বাদ দেয়া হবে। আমরা প্রতি আসনে জনপ্রিয় প্রার্থী দিতে চাই। যেন বিজয় নিশ্চিত হয়।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও জাপা সূত্রে জানা গেছে, মহাজোটভুক্ত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এবার জাপাকে ৪০টির বেশি আসন ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। তাই দলীয় মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে বিপাকে পড়েছে দলটি। অথচ জিএম কাদেরসহ পার্টির অন্তত দশজন সিনিয়র নেতাকে সংসদে আনতে চান এরশাদ। এছাড়া সম্প্রতি বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী যোগ দিয়েছেন জাপায়, যোগ দিয়েছেন সাবেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাও। মনোনয়ন নিশ্চিত করার আশ্বাসে তাদের দলে আনা হয়েছে। সবাইকে খুশি রাখতে হলে জাপার আসন সংখ্যা লাগবে শতাধিক। সেক্ষেত্রে জাপার অনেক এমপিই এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
জাপা সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত যে সব জুনিয়র নেতা এমপি হয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে পার্টির সিনিয়র নেতাদের সংসদে দেখতে চান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ। এবার বাদ পড়তে পারেন মামুনুর রশিদ জামালপুর-৪, সালাউদ্দিন মুক্তি ময়মনসিংহ-৫, এমএ হান্নান (বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আটক), ময়মনসিংহ-৭, ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী সিলেট-২, মুনিম চৌধুরী বাবু হবিগঞ্জ-১, আমির হোসেন ভূূূূঁইয়া কুমিল্লা-২, নুরুল ইসলাম মিলন কুমিল্লা-৮, নোমান লক্ষ্মীপুর-২, মোহাম্মদ ইলিয়াছ কক্সবাজার-১। এছাড়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকা-১৭ ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে নির্বাচন করলে সে ক্ষেত্রে ঢাকা-৪ অথবা ঢাকা-৬ থেকে একটি আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে। পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের সহধর্মিণী নাসরিন জাহান রত্নার বরিশাল-৬ আসন নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে জাপার নীতি-নির্ধারকরা। এছাড়াও আরও একাধিক আসনে প্রার্থীর ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
১/১১ সময়ে আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী জাতীয় পার্টির পক্ষ থেমে মনোনয়ন কিনে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। তিনি ফেনীর একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন তিনি। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে মাসুদ উদ্দিনকে এরশাদের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পদ প্রেসিডিয়ামের সদস্যও দেয়া হয়েছে তাকে। আলোচনা আছে এবারের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন। ফলে এরশাদের একজন উপদেষ্টা বাদ যাচ্ছেন মনোনয়ন থেকে।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দলের চেয়ারম্যান এরশাদ মহাজোটের আসন বণ্টনের সময় চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কাছে ৭৬ সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকাও পাঠানো হয়েছে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে। জাপা নেতারা জানিয়েছেন, এরশাদের দেয়া চিঠিতে বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সময় মতো বৈঠকের আহ্বান করলে এতে যোগ দেবেন এরশাদ। এই হিসেবে সোমবার রাতে ১৪ দলীয় জোট নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এরশাদের বৈঠক হওয়ার কথা আছে। গণভবনে বৈঠক হতে পারে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গেও। এই বৈঠকে ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোটের আসন বণ্টন চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। দলের মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার কো-চেয়ারম্যান ও মনোননয়ন বোর্ডের সদস্য জিএম কাদের বলেন, কে মনোনয়ন পাবেন আর কে পাবেন না তা আমার জানা নেই। তাছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলে দলের নেতাকর্মীদের বিব্রত অবস্থায় ফেলতে চাই না। নিজেও বিব্রত হতে চাই না। তাই কোন মন্তব্য করতে পারব না।
পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, আমরা এখনও জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করব নাকি ৩শ’ আসনে প্রার্থী দেব তা চূড়ান্ত করিনি। আগে নির্বাচনের কৌশল চূড়ান্ত হোক, পরে কে মনোনয়ন পেল বা পাবে তা নিশ্চিত করা যাবে।
এদিকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদ চার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এমন খবর রয়েছে রাজনীতির মাঠে। তবে তিনি নিজেই ঢাকা-১৭, রংপুর-৪ ও সাতক্ষীরা-৪ এই তিন আসনে নির্বাচন করার খবর দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়ন কেনার খবর আসে এরশাদের পক্ষ থেকে। আলোচনা আছে বিএনপির সাবেক নেতা নাজমূল হুদাকে ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। ফলে এই আসনটি এরশাদ ছেড়ে দিতে পারেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ কারায় রাজনীতির হিসাব নিকাশ আবারও পাল্টে গেল।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হয়েছিলেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে হঠাৎ করে এরশাদ সরে দাঁড়ালে আসনটি তার হাতছাড়া হয়।
সূত্র : দৈনিক জনকন্ঠ