শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব সংবাদদাতা : সিলেট নগরীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোম’র শিবগঞ্জ ক্যাম্পাস থেকে চতুর্থ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তিন দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাবিয়ান চৌধুরী (১০) নামের ওই শিক্ষার্থী সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে তাকে ঢাকায় নিয়ে গেছেন পরিবারের সদস্যরা।
গত ১৭ জুন স্কুল ছুটি হওয়ার পর ফাবিয়ান চৌধুরীর স্কুলের ৫ম তলার ছাদ থেকে পড়ে যায় বলে স্কলার্সহোম’র একাধিক শিক্ষক জানালেও এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ। ফাবিয়ানের পরিবারও ছাদ থেকে পড়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
ফাবিয়ান স্কলার্সহোম’র শিবগঞ্জ শাখার ইংরেজি মিডিয়ামের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
ফাবিয়ানের বাবা ফাহিম আহমদ চৌধুরী জানান, গত সোমবার (১৭ জুন) দুপুরে তাকে স্কুল থেকে ফোন দেওয়া হয়। স্কুলে গিয়ে দেখেন তাঁর ছেলে ব্রেঞ্চে শুয়ে আছে। তার মাথায় পানি দেওয়া হচ্ছে।
ফাবিয়ান স্কুলের ৫ম তলার ছাদ থেকে পড়ে গেছে বলে এসময় ফাহিম আহমদকে জানান স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তবে তখন ফাবিয়ানের শরীরে কোনো আঘাত বা জখমের চিহ্ন দেখতে পাননি ফাহিম।
সাথে সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ছেলেকে নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন ফাহিম। সেখানে তার শরীরের অবনতি হলে মঙ্গলবার রাতে ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় রওয়ানা দেন তিনি।
ফাবিয়ান বর্তমানে ঢাকার গ্রিন লাইন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে আছে। এখনও তার জ্ঞান ফিরে নি বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
ফাহিম আহমদ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ছেলে স্কুলের ছাদ থেকে পড়ে গেছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু ছোট একটা ছেলে পাঁচ তলার ছাদ থেকে পড়লে তো তার হাত-পা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা। কিন্তু ফাবিয়ানের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। সিটিস্ক্যানেও মাথায় কোনো আঘাত ধরা পড়েনি। কেবল ফুসফুস দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। ফলে ছাদ থেকে পড়ার দাবিটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, ছাদ থেকে পড়ে গেলেও এনিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এরকম নামি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদ থেকে কিভাবে একটি বাচ্চা পড়ে যায়? স্কুল চলাকালীন সময়ে বাচ্চাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব তো স্কুল কর্তৃপক্ষেরই।
এ ব্যাপারে স্কলার্স হোম’র শিবগঞ্জ শাখার অধ্যক্ষ প্রাণবন্ধু বিশ্বাস সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফাবিয়ানের শ্রেণীকক্ষ স্কুল ভবনের ৪র্থ তলায়। প্রতিদিন ছুটি হওয়ার পর শিক্ষকরা সব শিক্ষার্থীদের লাইন ধরিয়ে নিচে নামিয়ে আনেন। পরে তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার দুপুরেও ছুটি শেষে সব শিক্ষার্থীদের নিচে নামিয়ে আনছিলেন স্ব স্ব ক্লাসের শিক্ষকরা। হঠাৎ একজন শিক্ষক শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখেন নিচে একটি ছাত্র পড়ে আছে। সাথে সাথেই তাকে তুলে এনে মাথায় পানি দেওয়া হয় এবং অভিভাবকদের ফোন দেওয়া হয়।
অধ্যক্ষ বলেন, ফাবিয়ানকে ছাদ থেকে পড়তে কেউ দেখেনি। শব্দ শুনে ও মাটিতে পড়ে থাকায় কেউ কেউ ধারণা করছেন, সে ছাদ থেকে পড়ে থাকতে পারে। কিন্তু ফাবিয়ানের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ছাদে উঁচু দেওয়ালও রয়েছে। এতো ছোট ছেলের ওই দেওয়া পেরিয়ে পড়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
তিনি বলেন, উদ্ধারের পর স্কুলের পক্ষ থেকে ফাবিয়ানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সব সময় আমরা তার খোঁজ রাখছি। তার আসলে কি হয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। সে সুস্থ হয়ে উঠলে বলা যাবে।