সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাহুবলে আকরাম আলী হত্যা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তার বিধবা স্ত্রীর চরিত্রহননে লিপ্ত হয়েছে আসামীরা। এতে লোক লজ্জার ভয়ে পিতৃহারা পুত্র-কন্যারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাহুবল মডেল প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তোলে ধরেন নিহত আকরাম আলীর স্ত্রী রুনা বেগম। তিনি বলেন, স্থানীয় মানবকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার আমার এক মেয়ে এসএসসি ও অপর মেয়ে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা কথা ছিল। এছাড়া একই বিদ্যালয়ে আমার ছোট ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে এবং স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওপর মেয়ে ১ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করতো।
রুনা আক্তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, চলতি বছরের ৫ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে আমার স্বামীর ভাই হাছন আলী (৪০), পিতা- আব্দুল শহিদ, হাসন আলীর স্ত্রী রাজ বানু (৩৫), আমার স্বামীর বোন রাজিয়া খাতুন (৫৫), রাজ বানু-এর বোন কদ বানু (২৮) ও রাজ বানু-এর ভাই সাজিদ মিয়া (১৮) অতর্কীতে হামলা চালিয়ে আমার স্বামী আকরাম আলীকে হত্যা করে। এ ঘটনার পরদিন আমি বাদী হয়ে বাহুবল মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি। বাহুবল মডেল থানার মামলা নং- ০৩। এ ঘটনার প্রায় একমাস পর আসামীগণ ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন উদ্দেশ্যে আমি, আমার পিতা, আমার ভাই ও আমার মামাকে আসামী করে আমার শাশুড়ি সুকারা বেগমকে ভুলবুঝিয়ে কোর্টে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করায়। উক্ত মামলায়ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার চরিত্রহনন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুতে আমি অকালে বিধবা হয়েছি, আমার তিন কন্যা ও একমাত্র পুত্র হয়েছে পিতৃহারা। আমি আমার স্বামীর হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ায় তারা আমাকে চরিত্রহীনা প্রমাণে উঠে পড়ে লেগেছে। আমাকে চরিত্রহীনা প্রমাণ করতে গিয়ে তারা এলাকার সম্মানী লোকজনকে আমার সাথে জড়িয়ে মানহানীকর অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বিধবা রুনা বেগম বলেন, আমার দায়েরি মামলাটি সিআইডি’র তদন্তাধিন আছে। আসামী পক্ষ আমাকে হুমকী-ধুমকী ও আমার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দিয়ে আমাকে ঘায়েল করতে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় মুরুব্বীদের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি আপোষ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়। এক পর্যায়ে বাহুবল ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বীগণ এ বিষয়ে সালিশ বৈঠকে বসেন। সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ক্ষতিপূরণ বাবদ আসামীগণ জনৈক মুরুব্বীর নামে কিছু পরিমাণ জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। শর্ত থাকে মামলাটি খারিজ হলে ঐ মুরুব্বী জমিটুকু আমি ও আমার সন্তানদের নামে রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করবেন।
তিনি বলেন, আসামীগণ দলিল রেজিস্ট্রি করার কিছুদিন পর হঠাৎ করে আপোষের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠে। তারা মুরুব্বীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে জমি ফেরত নিয়ে আসার জন্য। এ বিষয়টি মুরুব্বীগণ ভাল ভাবে নেননি। তারা সালিশের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় আসামীদের প্রতি অসন্তোষ্ট হন।
তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর ওয়ার্ডের মেম্বার শফিকুল ইসলাম (লামাতাসী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড) আমার স্বামীর ভাগিনা হন। এ হিসেবে আমি নিজেও তাকে ভাগিনা হিসেবে সন্তানের মতো স্নেহ করি। তিনি আমার মামলার আসামীগণেরও ভাগিনা হন। তিনি উক্ত ঘটনার কোন মামলায় এজাহারভূক্ত আসামী কিংবা সাক্ষী নন। আমার পিতা, আমার ভাই ও আমার চাচা শ্বশুরগণের অনুরোধে ওয়ার্ড মেম্বার শফিকুল ইসলাম বিভিন্ন বিষয়ে আমি ও আমার সন্তানদের সহযোগিতা করে থাকেন। আমার স্বামীর কোন সহায় সম্পদ না থাকায় তার মৃত্যুর পর আমি সন্তানদের নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি দেখে মেম্বার সাহেবসহ অনেকেই আমাদের সহযোগিতা করছেন। এতে আসামীপক্ষ ওয়ার্ড মেম্বার শফিকুল ইসলাম-এর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে আমার সাথে জড়িয়ে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অপবাদ রটনা করছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, নানামুখী অপচেষ্টার পরও আসামীগণ আমাকে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করতে না পেরে সন্তানসহ আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে আমি অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে অন্যের সাহায্যে দিনাতিপাত করছি। তারপরও বিবাদীগণের নানামুখী অত্যাচার-নির্যাতন থেকে আমি রেহাই পাচ্ছি না।
সংবাদ সম্মেলনে লামাতাসী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের (কাজীহাটা) মেম্বার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি উক্ত ওয়ার্ডে টানা দু’বার নির্বাচিত মেম্বার। বর্তমানে আমি উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান-এর দায়িত্বও পালন করছি। এছাড়াও অত্র ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে আমি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছি। একজন জনপ্রতিনিধি ও একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এলাকায় আমার প্রতিপক্ষ রয়েছে। তারা আমাকে বেকায়দায় ফেলতে ও আমার সম্মানহানী করতে অপতৎপর রয়েছে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, কাজীহাটা গ্রামের মৃত আকরাম আলী সম্পর্কে আমার মামা হন। এ সুবাদে তাদের বাড়ির লোকজনের সাথে আমার ছোট বেলা থেকেই সুসম্পর্ক রয়েছে। তাদের বাড়ির কোন ঝগড়া-ঝাটি কিংবা মতবিরোধ দেখা দিলে আমি সবসময়ই তা নিরসনে ভূমিকা রেখে আসছি। আকরাম আলী মারা যাওয়ার পর তাদের পারিবারিক বিরোধ মাথাছাড়া দিয়ে উঠলে আমি বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ আসামী পক্ষ একটি জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়। পরবর্তীতে তারা ওই সিদ্ধান্ত থেকে সড়ে এসে আমার পিছু নিয়েছে। তারা সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে আমার সাথে আমার মামী সম্পর্কীয় মহিলার সাথে অবৈধ সম্পর্কের অপপ্রচার করে আমার মানহানী করছে। আমি এর নিন্দা জানাই।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কাজীহাটা গ্রামের লোকজনও সমস্বরে উক্ত অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত আকরাম আলীর স্ত্রী রুনা বেগম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কন্যা তানিয়া আক্তার, নাদিয়া আক্তার, নাবিয়া আক্তার ও পুত্র নাবিল হোসেন, ওয়ার্ড মেম্বার শফিকুল ইসলাম, হত্যা মামলার আসামী হাছন আলীর আপন চাচা আব্দুল আহাদ, আরজু মিয়া, আব্দুর রহিম ও আব্দুল জব্বার, আব্দুল হক, চাচাত ভাই তাজুদ আলী ও হায়দর মিয়া, মামাত ভাই ছালামত মিয়া, মুরুব্বী মারজত উল্লা, জহুরুল ইসলাম, আব্দাল চৌধুরী, আয়াত আলী, মারজত উল্লা, ইউপি মেম্বার শহিদুল ইসলাম, ইউপি মেম্বার মাসুক মিয়া সহ অর্ধশতাধিক স্থানীয় লোক।