বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন
ক্রীড়া ডেস্ক : পারিশ্রমিক বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। দাবি মানা না হলে ক্রিকেটীয় কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। তবে বয়সভিত্তিক দল আন্দোলনের আওতাভুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা।
সোমবার দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই ঘোষণা দেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমসহ আরও অনেক ক্রিকেটার। এই সময়ে নিজেদের বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দাবিতে ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দেন ক্রিকেটাররা।
এমনকি দাবি মানা না হলে আগামী ২৫ (অক্টোবর) থেকে শুরু হতে যাওয়া ভারত সফরের প্রস্তুতি ক্যাম্পে অংশ না নেয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা। এই সময়ে ক্রিকেটাররা মোট ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
তাদের দাবিগুলো হলো-
১. কোয়াব (ক্রিকেটার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) কীভাবে নির্বাচন হবে, কে প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি হবেন- তা বাছাই করবেন ক্রিকেটাররা ।
২. প্রিমিয়ার লীগে খেলোয়াড়দের পারিশ্রামিক ও মানদণ্ড বেঁধে দেয়া যাবে না। খেলোয়াড়রা নিজেরাই কোন দলে খেলবে এবং তাদের পারিশ্রমিক কী হবে তা ঠিক করবে। প্রিমিয়ার লীগকে আগের নিয়মে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
৩. বিপিএল এবার যেভাবে হচ্ছে তার প্রতি সম্মান রয়েছে। কিন্তু আগামী বছর থেকে আবার আগের নিয়মে বিপিএলকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেশি ক্রিকেটারদেরও ভালো পারিশ্রমিক দিতে হবে। খেলোয়াড়রদের নিজেদের গ্রেড বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত।
৪. প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি এক লাখ টাকা হওয়া উচিত। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন পঞ্চাশ ভাগ বাড়াতে হবে। খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ বাড়াতে হবে, সেটা জিম ইনডোর মাঠ- সব জায়গাতেই। ১২ মাস কোচ, ফিজিও, ট্রেনার রাখতে হবে; তারাই আসলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের একটা পরিকল্পনা দেবেন। এটা হয়তো আজই হবে না। তবে আগামী মৌসুম থেকে যেন হয়, প্রতিটি ডিভিশনে।
৫. যার যার হোম ভেন্যুতে প্র্যাকটিসের সুযোগ দিতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট কিংবা ক্রিকেটের কালচারটা ভালো করতে হলে। প্রথম হলো বল। আমরা যে বলে খেলি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গেলে যেটা আলাদা হয়। খেলোয়াড়দের প্রতিদিনের ভাতা ১৫০০ টাকা, এটা হতে পারে না। তাদের ফিটনেস লেভেল দাবি করছে বিসিবি, সেটা মেইন্টেন করতে এই টাকার খাবারে হবে না। তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, ভালো হোটেলে থাকতে হবে, তার জন্য টাকার দরকার আছে। বড় ইস্যু আছে ট্রাভেল। একজন রাজশাহী থেকে কক্সবাজার যাবে। তাকে ২৫০০ টাকা দেয়া হচ্ছে যাওয়ার জন্য। বাস ছাড়া সে কিভাবে যাবে? তাদের বিমান দেয়া উচিত। টিকিটটা ডিভিশন করে দিক, আপত্তি নেই। আর ওয়ান স্টার, টু স্টার হোটেলে কোনোরকম রুম আছে, এমন হোটেলে খেলোয়াড়দের থাকা সম্ভব নয়। কারণ, চারদিনের ম্যাচ খেলে ফ্রেশনেসের জন্য হোটেলে কমপক্ষে একটা জিম, একটা সুইমিংপুল থাকা উচিত। আরেকটা হলো বাস। আমরা মাঠে কি ধরনের বাসে কিংবা কিভাবে যাই- আসলেই সেটা হতাশাজনক। কমপক্ষে একটা এসি বাস দেয়া উচিত।
৬. জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সেটা ৩০ জন করা উচিত। বেতন অনেক দিন ধরে বাড়ানো হয় না, সেটা বাড়াতে হবে।
৭. শুধু ক্রিকেটারদের ব্যাপারই নয়। গ্রাউন্ডসম্যানদের দেখেন, বিসিবিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে মাস শেষে ৫ বা ৬ হাজার টাকা পায়। কোচের কথা বলেন। নিজেরাই বাংলাদেশি কোচদের দাম দিচ্ছি না, বিদেশি কোচদের বেতন আমাদের ২০টা কোচের বেতনের সমান। সম্প্রতি একটা দেখবেন বাংলাদেশের কোচের অধীনে দল ভালো করেছে; কিন্তু পরের সফরেই তিনি নেই। আম্পায়ারিং নিয়ে সমালোচনা আছে; কিন্তু আপনারা জানেন, আম্পায়ারিংকে পেশা হিসেবে নিতে হলে তাদের তো একটা আর্থিক সিকিউরিটি দিতে হবে। সেটা দেয়া হয় না। সব মিলিয়ে আমাদের মূল দাবি, বাংলাদেশিদের যেন প্রাধান্য দেয়া হয়।
৮.ঘরোয়া লীগে দুইটা চারদিনের টুর্নামেন্ট খেলা হয়, বিসিএল আর এনসিএল। প্রিমিয়ার লীগে মাত্র একটা খেলা হয়, আরেকটা টুর্নামেন্ট বাড়ানো উচিত। মনে হয় বিপিএলের আগে একটা টি-টোয়েন্টি লিগ খেলা উচিত। ওয়ানডের কথা বললে, আগে চারদিনের ম্যাচের পর পঞ্চাশ ওভারের একটা ম্যাচ খেলা হতো। আমরা চাই, ন্যাশনাল ক্রিকেট লীগে একটা ওয়ানডে টুর্নামেন্ট চালু হোক, যাতে আমরা আরও ওয়ানডে পাই, খেলার সুযোগ পাই।
৯. ঘরোয়া টুর্নামেন্টের জন্য একটা ফিক্সড ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। তাহলে ক্রিকেটাররা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারব প্রতি বছর।
১০. বিপিএল, প্রিমিয়ার লীগের যে বকেয়া টাকা সেটা যেন নির্দিষ্ট সময়ে পায় ক্রিকেটাররা। যেমন গত বছর দশটি দল টাকা ক্লিয়ার করেছে; কিন্তু ব্রাদার্স ইউনিয়নের ৪০ পারসেন্ট টাকা পাইনি। বোর্ডে অনেকবার যাওয়া হয়েছে, ক্লাবকেও নক করা হয়েছে। জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমরা এটা ডিজার্ভ করি না, এটা খুবই দৃষ্টিকটু। এমন যেন না হয়।
১১. দুইটার বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ খেলা যাবে না। যদি আমরা জাতীয় দলের ডিউটি থেকে ফ্রি থাকি, তবে যেন আরও খেলতে দেয়া হয়। তাহলে আমরা অনেক শিখতে পারব।