শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন
আরিফুর রহমান স্বপন, কুমিল্লা: বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ আর মহানুভবতায় ‘মানবিক সহায়তা’ দিয়ে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছেন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.কে.এম সাইফুল আলম। করোনার এই মহাদুর্যোগে দিন রাত মানুষের পাশে থেকে পুরো উপজেলায় তিনি সাড়া জাগিয়ে তুলছেন। লাকসামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটেখাওয়া মানুষগুলো করোনার এই মহাদুর্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের জন্য মানবিক সহায়তা নামক খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ছুঁটে চলেছেন বাড়ি বাড়ি। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারসহ সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের সুবিধার্থে চালু করেছেন হটলাইন।
দেশে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সমস্যায় নিমজ্জিত যে কেউ এই হটলাইনে এসএমএস পাঠালে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করে একটি বিশেষ টিমের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। হটলাইনে পাওয়া আবেদন যাছাই-বাছাই করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে ১৯৪টি এবং ফোন কলের মাধ্যমে ২৩০টি পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন ইউএনও এ.কে.এম সাইফুল আলম। তাঁর এই ব্যতিক্রম উদ্যোগ অব্যাহত থাকায় সর্বমহলে তিনি ব্যাপক প্রশংসিতও হচ্ছেন।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ.কে.এম সাইফুল আলম জনসচেতনতায় বেশ তৎপর রয়েছেন। বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, জরুরি প্রয়োজন ব্যতীরেকে বাসা-বাড়ি থেকে বের না হওয়া, দৌলতগঞ্জ বাজারে চাল ব্যবসায়ীরা হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধি করায় তাৎক্ষনিক ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে একদিনে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায়, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে দোকানের সামনে সুরক্ষারেখা অংকন, জনসমাগম রোধো প্রতিদিন বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মহড়া, জনসচেতনতায় দফায় দফায় মাইকিং, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে নিজ হাতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়াসহ বিভিন্ন কার্যকরী প্রদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন অব্যাহত গতিতে।
চলমান পরিস্থিতিতে সমাজের মধ্যবিত্তসহ অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়লেও ব্যক্তিত্বের কারনে কারো কাছে সাহায্যের জন্য যেতে না পারায় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হটলাইন চালু করে ‘মানবিক সহায়তা’ প্রদানের ঘোষণা দেন ইউএনও এবং সহায়তা প্রত্যাশীদের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করার কথা জানান। এ ঘোষণার পরই সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারসহ সুবিধাবঞ্চিতরা হটলাইনে ফোন ও বার্তা পাঠাতে থাকে। আর এই মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতে তাঁকে সহযোগিতা করে চলেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উজালা রানী চাকমা এবং ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাগণ।
এদিকে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৭৪টি এসএমএস এবং ৪৮৫টি ফোন কল আসে। যাছাই-বাছাই শেষে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করে বিশেষ টিমের মাধ্যমে ৪২৪টি পরিবারের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। প্রতি পরিবারে খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- চাল, ডাল, আলু, তেল ও পেঁয়াজ। কোন মানুষ যাতে না খেয়ে থাকে এ লক্ষ্যে ব্যতিক্রম এ উদ্যোগের পরিকল্পনা করেন ওই ইউএনও। আর এ উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন করে তিনি আজ সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.কে.এম সাইফুল আলম বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেয়া রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ। আর আমার উপর অর্পিত ওই দায়িত্ব থেকে এই কাজটুকু করা। এ কাজগুলো কোন প্রশংসা অর্জনের জন্য নয়। আমি এবং এই সমাজে বসবাসরত প্রত্যেকেই আমরা মানুষ।
তিনি বলেন, সমাজে মর্যাদাসম্পন্ন অনেক মানুষ আছেন যারা অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় থাকলেও কারো কাছে সহায়তার জন্য যেতে পারেন না। এমন মানুষদের জন্য হটলাইনের মাধ্যমে ‘মানবিক সহায়তা’ চালু করেছি। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সরকারি ভাবে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে এসএমএস ও ফোন কল এসেছে। যারা সক্ষম বা ইতোমধ্যে খাদ্যসামগ্রী পেয়েছেন, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি আবেদন করছেন। এর মধ্যে ৯৭টি আবেদন বাতিল হয়েছে। এসএমএস পাওয়া ৮৩টি এবং ফোন কল যাচাইয়ের পর ৪৮৫টি পরিবারকে আগামী রোববার মানবিক সহায়তা কর্মসূচির খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হবে।
তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ থেকে লাকসামকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে বাসায় অবস্থান করুন। নাগরিকদের যে কোন সমস্যায় সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখছেন বলেও জানান মানবতার সেবক ওই কর্মকর্তা।