শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

ত্রাণের চালে ঘষামাজা: চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন এবার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের মুখোমুখি

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার জন্য সরকার থেকে গরীবের জন্য বরাদ্দ করা ত্রাণ উচ্চবিত্তদের দেয়া এবং ত্রাণ গ্রহনকারীর নামের তালিকায় ঘষামাজার অপরাধে আগে থেকেই অভিযুক্ত হওয়া বাহুবলের ৬ নম্বর মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.সাইফুদ্দিন লিয়াকত নতুন করে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হচ্ছেন। এরফলে সহসাই ত্রাণের চাল মেরে ধরা খাওয়া থেকে মুক্তি মিলছে না মিরপুরের এই আওয়ামী লীগ নেতার।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গরিবের জন্য বরাদ্দ করা চাল মিরপুরের চেয়ারম্যান উচ্চবিত্তদের মধ্যে বিতরণসহ ত্রাণের তালিকায় ঘষামাঝার পর বাহুবল উপজেলার প্রশাসন তদন্ত করেছিল। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মিরপুরের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেয়ার সুপারিশ করে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন নথিটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি যাওয়ার পর তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। ত্রুটিপূর্ণ প্রতিবেদনটির ভিত্তিতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। এরপরই নতুন করে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং একইসঙ্গে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (ইউনিয়ন-১) ইফতেখার আহমদ চৌধুরী বলেন, মিরপুরের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন লিয়াকতের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন যে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে তাতে কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। এরপর নতুন করে তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন করে গঠন করা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রধান হয়েছেন সিলেট বিভাগের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, হবিগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে পুরো বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে নথি পাঠানোর পর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সাইফুদ্দিন লিয়াকত তৃপ্তির ঢেঁকুড় তুলে বলেছিলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন করে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি অনিয়মের অভিযোগ থেকে মুক্ত হচ্ছেন না সাইফুদ্দিন লিয়াকত। নতুন তদন্ত কমিটি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন লিয়াকত তদবিরের জন্য নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত মে মাসে চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে গরিবের চাল বিতরণ বিষয়ে অভিযোগ ওঠে। এরপর উপজেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। গণমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর বিপরীতে চাল চুরির অপবাদ থেকে বাঁচতে নিজ ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে চেয়ারম্যান প্রতিবাদ সভা করেছিলেন। ওই সভায় সাংবাদিকদের জামায়াত-শিবির বানিয়ে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। তিনি এও বলেছিলেন, ত্রাণের চাল বিতরণে কোনো অনিয়ম করেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে কর্মহীন নি¤œ আয়ের মানুষের মাঝে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। কিন্তু হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ৬ নম্বর মিরপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন লিয়াকত এর ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মও আত্মসাতের ফলে এলাকার শত শত অসহায়, দরিদ্র্য ও কর্মহীন মানুষ প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ত্রাণের তালিকায় রয়েছে চেয়ারম্যান এর শশুড়, শাশুড়ী, শ্যালক, শ্যালকপুত্র, সমন্ধিকের বউ, তার তৃতীয় স্ত্রীর বড়বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন। অনেকেই আবার একাধিকবার ত্রাণ পেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মিরপুর বাজারের কয়েকজন বিশিষ্ট কোটিপতিসহ ১৮ জন ব্যবসায়ী রয়েছে। এমনকী ত্রাণ আত্মসাতের উদ্দেশে গায়েবি তালিকা করা হয়েছে এবং পিতা/স্বামীর নামেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও গড়মিল। আবার অনেকের নাম তালিকায় থাকলেও ত্রাণ না দিয়ে তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ত্রাণ উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। তালিকায় রয়েছে ঘষামাঝারও অভিযোগ।

এরপরই গত ১১ মে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও আত্মসাতকারী ৬নম্বর মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন এলকাবাসী। এতে মিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিনের পদত্যাগ চাই, প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভেস্তে যেতে দেব না, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় চাল চোরের ঠাঁই নাই, চাল চোর ও চাল আত্মসাতকারী চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন এর বিচারের দাবীসহ বিভিন্ন লেখাযুক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ভুক্তভোগী মানুষ শ্লোগান দেন। এসময় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেছিলেন, ত্রাণের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর উপহার আমাদের হাতে না দিয়ে স্বাক্ষর ও টিপসই জাল করে আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান। তারা আরও বলেন, অন্য ইউনিয়নের একই পরিবারের তিন জনের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্তিসহ শতাধিক ভুয়া নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্তি করে ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) খিধস্টফার হিমেল রিছিলকে আহ্বায়ক করে বাহুবল উপজেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শেষ করে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন তুলে দেয়। এরপরে প্রতিবেদনটি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও বাহুবলের সহকারি কমিশনার (ভূমি) খিধস্টফার হিমেল রিছিল বলেছিলেন, ত্রাণ বিতরণে যা যা পাওয়া গেছে তাই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কি কি সত্যতা পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি স্পষ্টভাষায় কিছ বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেছেন, তদন্তে কিছুই লুকানো হয়নি। সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য বাহুবল মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর কবীর বলেন, তদন্তে ত্রাণ গ্রহনকারীর তালিকায় ঘষামাঝা, গরীবের জন্য বরাদ্দ করা ত্রাণ উচ্চ বিত্তদের মধ্যে বিতরণ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com