শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন
সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা ইয়াসমীন মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া একটি স্ট্যাটাস নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
গত ৫ ডিসেম্বর ফেসবুক আইডিতে দেওয়া স্ট্যাটাসে সেলিনা ইয়াসমীন তার পরিণতির জন্য তিনজনকে দায়ী করে গেছেন। সময় মতো তার মেয়ে তাদের পরিচয় প্রকাশ করবেন বলেও জানান। এর আগে ১৫ নভেম্বরের এক স্ট্যাটাসে শরীর খারাপ বলে সবার কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন তিনি।
তার দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো। তিনি লিখেছেন- ‘‘আমি বার বার বলছি, আমি বিভিন্নভাবে মানুষের চাপের মুখে আছি। আমিও একজন মানুষ। আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যদি আমার শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক অবস্থার কোনো ক্ষতি হয়, তার জন্য তিন জন মানুষ দায়ী থাকবে। সমস্ত প্রমাণ আমার মেয়ের কাছে আছে, যথোপযুক্ত সময়ে আমার মেয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবে। মনে রাখবেন তিন জন মানুষই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমার ও আমার মেয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। ’’
শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার পর তার ওই স্ট্যাটাসটি সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিনার স্বজন সেলিম আহমদ বলেন, কিছুদিন আগেও তিনি সুস্থ ছিলেন। হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার কিডনি দুটি বিকল হওয়ায় মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
এ ব্যাপারে সেলিনা ইয়াসমিনের চাচাতো ভাই ফুজায়েল ইসলাম মুহিত বলেন, ‘আসলে সেলিনা আপা ওই স্ট্যাটাস দেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও কিডনি বিকল হওয়ায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অবস্থা এতই গুরুতর ছিল যে, তাকে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়েছে। তার সঙ্গে আলাপ করার মত অবস্থাও ছিল না। যে কারণে এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানিনা। ’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল সাত্তার বলেন, অসুস্থ হয়ে পড়ার কিছুদিন আগেও তার বাবার নামে রাস্তা উদ্বোধনে এসেছিলেন তিনি। সুস্থ একজন মানুষ হঠাৎ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ায় বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। যদিও এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।
সেলিনা ইয়াসমীন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়নের বাদেদেউলী (পশ্চিম) গ্রামের ইয়াসিন ইয়ামিনের স্ত্রী। মৃত্যুকালে তিনি এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেলিনা ইয়াসমীন বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় থেকে মাস্টার ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৪ হাজার ৮৬৯ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ঢাকায় থাকাকালীন সাংবাদিক ইয়াসিন ইয়ামিনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র সন্তানের (মেয়ে) জন্ম হওয়ার পর স্বামীর সঙ্গে বনিবনা ছিল না। যে কারণে মানুষের সেবা করে, আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে মিলে থাকতেই গ্রামে চলে আসেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ৩ নম্বর ঘিলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল লেইছ চৌধুরী বলেন, সেলিনা ইয়াসমীনের স্বামী ইয়াসিন ইয়ামিন তাকে জানিয়েছিলেন ২০১৫ সালে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। তিনি নাকি আবারো বিয়ে করেছেন। তার দু’টি সন্তানও আছে। কিন্তু ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সেলিনা ইয়াসমীনকে সহযোগিতা করতে এলাকায় আসেন। তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগও করেন।
এ বিষয়ে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা ইয়াসমীনের ফেসবুক ওয়ালে লেখা স্ট্যাটাসটি দেখেছি। দাফনের পর এ বিষয় নিয়ে আমরা তদন্ত করবো। তাছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলেও তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনার মরদেহ রাতেই তার গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় জানাজা শেষে স্থানীয় শাহ সৈয়দ আলী (র.) মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন চেয়ারম্যান আবুল লেইছ চৌধুরী।