শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক :রাত বাড়ছে আর চামড়ার দাম কমছে! এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত চামড়ার বাজার নামতে নামতে কোথায় গিয়ে ঠেকে তা বলতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। কারণ প্রত্যেক চামড়া ব্যবসায়ীর টাকা কম-বেশি ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিগত বছরের পাওনা পড়ে রয়েছে।
এসব ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বাকীতে চামড়া সরবরাহ না করতে চাইছেন না। প্রয়োজনে লবণ দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দেবেন। তবুও বাকীতে আর ঢাকায় চামড়া বিক্রি করতে চান না। যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আগাম জানিয়ে দিয়েছেন চামড়ার আড়ৎদাররা। আর চামড়া কিনলেও তা কম দামে কেনার পরামর্শ দেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে কোরবানির পশুর চামড়া বিগত যে কোনো বছরের চেয়ে কম দামে কিনেছেন। এরপরও আড়ৎদাররা চামড়া কিনছেন না। আড়ৎদারে ঘরে ঘরে ঘুরে হয়রান ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। রাত বাড়তে থাকায় চামড়া নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা।
সোমবার (১২ আগস্ট) দিনগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়ার শহরের চামড়া বাজারখ্যাত বাদুরতলা, চকসূত্রাপুর, চকযাদু রোড, থানা মোড় ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হলে এমনই তথ্য উঠে আসে।
এদিকে চামড়ার দাম আশানূরূপ না পেয়ে আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিজেই রাত ৯টার দিকে শহরের বাদুরতলায় অবস্থিত আড়তে চামড়া বিক্রি করতে আসেন। অনেক ঘোরাঘুরির পর তিনি তার দেড় লাখ টাকায় কেনা ষাঁড়ের চামড়াটি বিক্রি করেন মাত্র ৫০০ টাকায়। অথচ গেলো বছরও এই মানের চামড়া ১২০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান আমিনুল ইসলাম।
সেলিম আহমেদ নামে আরেক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, কোরবানির জন্য কয়েকজন মিলে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় কেনেন। সারাদিন চামড়াটি বিক্রি করতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত বাদুরতলার এক ব্যবসায়ীর কাছে মাত্র ৩০০ টাকায় চামড়াটি বিক্রি করেন। গত বছরের একই ধরনের চামড়া ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত বেচা-বিক্রি হয়েছে।
আলম হোসেন ৫০ হাজার টাকা দামের ষাঁড়ের চামড়া শহরের চকসূত্রাপুরের এক ব্যবসায়ীর কাছে ২৫০ টাকায় বিক্রি করেন বলে বাংলানিউজকে জানান। এছাড়া এবার খাসির চামড়া নেওয়ার যেন ক্রেতাই নেই। অথচ গত বছর গরুর চামড়া কম দামে বিক্রি হলেও প্রতিটি খাসির চামড়া ৭০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
বকরি ও ভেড়ার চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই গরুর চামড়ার সঙ্গে ফ্রি দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। রকমভেদে অনেক এলাকায় ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
মাসুদুর রহমানসহ কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, এবার চামড়ার বাজারদর পড়ে যাওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দিনের প্রথম ভাগ থেকে বিকেল অবধি চামড়ার বাজারে বেচাবিক্রি চললেও সন্ধ্যার পর থেকে যেন বেচাকেনা থমকে রয়েছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চামড়ার বাজার ক্রমেই কমতির দিকে যাচ্ছে যোগ করেন এই ব্যবসায়ী।
চামড়ার বাজার ধসের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান ও আব্দুল গফুর নামের দুই বড় চামড়ার আড়ৎদার বাংলানিউজকে জানান, চামড়ার বাজার বছর বছর কমে আসছে। এবার আরো কমে এসেছে।
এর প্রধান কারণ জেলার বড় ও মাঝারি অনেক ব্যবসায়ীর কোটি কোটি চামড়ার বকেয়া টাকা ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পড়ে রয়েছে। এসব বকেয়া টাকা বছরের পর বছর আটকে থাকায় বগুড়ার ব্যবসায়ীরা মারাত্মক পুঁজি সঙ্কটে পড়ে অসহায় হয়ে রয়েছেন। তাই জেনে বুঝে ব্যবসায়ীরা আর লোকসান দিতে রাজি নন।