শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক :
‘‘আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। রাজনীতি করে তার অপব্যবহার করলে কেউ ছাড় পাবে না। কেউ দুর্নীতি বা অপরাধ করলে সে রেহাই পাবে না। আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এমনটা বার্তা দিয়েছেন শেখ হাসিনা’’
দলের ভেতরে থেকে যারা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন তাদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অপসারণ করে দুর্নীতিবাজ ও অসৎ নেতা-কর্মীদের এক ধরনের সর্তক বার্তা দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি ও ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলির এক সদস্য জানান, এটা সবার জন্য একটি সিগন্যাল। এটা মেনে সহনশীল হওয়া উচিত। তা না হলে এ ধরনের আরও ‘উইকেট’ই পরে যেতে পারে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে দলের মধ্যে যারা নানা রকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর সেটা শুরু হয়েছে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের মাধ্যমে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অপসারণ করা হয়।
শনিবারের বৈঠকে অংশ নেয়া দলের সম্পাদকমণ্ডলির এক সদস্য দৈনিক জাগরণকে বলেন, শুধু ছাত্রলী-যুবলীগ নয়, দলের মধ্যে যারাই দুর্নীতি, সন্ত্রাসের মতো কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বৈঠকে ছাত্রলীগের ওই দুই নেতার সঙ্গে তুলনা করে যুবলীগের কিছু নেতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, এরা আরও খারাপ।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকের এজেন্ডায় উল্লেখ থাকা শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের আলোচনায় অংশ নিয়ে আলোচনা উঠলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাঁদাবাজির টাকা বৈধ করতে মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে। এমন মিলাদ মাহফিল তিনি চান না। এরপর যুবলীগ নিয়ে তার কাছে আসা নানা অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা (ঢাকা মহানগর যুবলীগের একটি অংশের সভাপতি) ক্রসফায়ার থেকে বেঁচে গেছেন। আরেকজন (মহানগর দক্ষিণের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক) প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরা-ফেরা করেন।এসব বন্ধ করতে হবে। যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হয় নি, অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিবাদ করে নি। যখন দলের দুঃসময় ছিল তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে দলের পক্ষে অবস্থান নেয় নি। এখন টানা তিন বার সরকারে আছি। অনেকের অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু আমার সেই দুর্দিনের কর্মীদের অবস্থা একই আছে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, ক্যাডার পোষেন, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে, যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরও দমন করা হবে।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পুলিশ সদস্যদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মাটিতে কোনভাবেই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি, অস্ত্রবাজি বিষয়ে আওয়ামী লীগ সবসময় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকেই প্রধান্য দিয়ে আসছে। যারাই দলে থেকে বিভিন্ন অপকর্ম ও দুর্নীতি করেছেন তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। যতই গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীই হোক না কেনো তাকেও ছাড় দেয়া হবে না। কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের মধ্যে কিছু সুবিধাবাদী ঢুকে পরেছে। ‘দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারলেই লাভবান হওয়া যায়’- এমনটা মনোভাব তাদের। কিন্তু দলের যারাই দুনীতি, সন্ত্রাস, ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি, অস্ত্রবাজি করবে তাদের দল থেকে যে কোনও মুহূর্তে অপসারণ করে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। রাজনীতি করে তার অপব্যবহার করলে কেউ ছাড় পাবে না। কেউ দুর্নীতি বা অপরাধ করলে সে রেহাই পাবে না। আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এমনটা বার্তা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
সূত্র: দৈনিক জাগরণ।